Advertisement
E-Paper

কোয়রান্টিন চিকিৎসক, নজরে লজ

এ দিকে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে আসা বাকি দুই ডাক্তারকে লজেই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২০ ০৭:২১
Share
Save

সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনেই নোভেল করোনাভাইরাসের আশঙ্কায় লজে পড়ল তালা। ভিতরে আটকে দুই চিকিৎসক-সহ এগারো জন লজের কর্মী। কেউ যাতে বাইরে বেরোতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে পাহারায় বসলেন পুলিশ কর্মীরা।

রবিবার রাতে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ডাকে কলকাতা থেকে তিন চিকিৎসকের একটি দল বাঁকুড়ায় আসে। সেই দলেই ছিলেন বারাসতের বাসিন্দা এক ডাক্তার। সদ্য তিনি লন্ডন থেকে ঘুরে এসেছেন। বাঁকুড়ায় এসেই গলা ব্যথা আর কাশির উপসর্গ দেখা দেয় তাঁর। ওই চিকিৎসক নিজেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরে ঘটনার কথা জানান। স্বাস্থ্য দফতর ঝুঁকি না নিয়ে ওই চিকিৎসককে বাঁকুড়া মেডিক্যালের ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড’-এ ভর্তি করায়। তিনি আদৌ করোনা আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত হতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এ দিকে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে আসা বাকি দুই ডাক্তারকে লজেই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাঁদের সংস্পর্শে আসায় হোটেল কর্মীদেরও লজ থেকে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে। তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে লজের দরজায়। বাঁকুড়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল সোরেন বলেন, “লন্ডন থেকে ঘুরে আসা ওই ডাক্তার আদৌ নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, সেই ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই। তাঁর শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট পেলেই এ নিয়ে নিশ্চিত হতে পারব। তবে সাবধানতা আমাদের নিতেই হবে। তাই লজের কর্মী ও দুই ডাক্তারকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।”

এ দিকে গোটা ঘটনায় চিন্তিত ওই লজের মালিক। তিনি বলেন, “একটা অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে পড়লাম। কর্মীরা ক্ষুব্ধ। কবে তাঁরা ছাড়া পাবেন, কিছুই বুঝতে পারছি না।” তিনি জানান, ছাতনা থেকে এক মহিলা লজের রেস্তোরাঁয় কাজ করতে আসেন। তাঁর বাড়িতে শিশুসন্তান রয়েছে। বাড়ি যাওয়ার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। ওই লজের রিসেপশনের দায়িত্বে থাকা এক কর্মী ফোনে বলেন, “দুপুরে রেস্তোরাঁর খাবার খেয়ে পেট ভরিয়েছি। রাতে খাব কী, তার ঠিক নেই। ঘরে যেতে পারছি না। তাড়াতাড়ি মুক্ত হতে চাই।”

লজের মালিকের চিন্তা, ভিতরে আটকে থাকা দুই চিকিৎসককে নিয়েও। তিনি জানান, করোনা-আতঙ্কে লজের কর্মীরা ভুগছেন। ওই দুই ডাক্তারের ঘরের আশপাশেও কেউ ঘেঁষতে চাইছেন না। বারবার বলা সত্বেও কেউ তাঁদের ঘরে খাবারও পৌঁছে দিতে যাননি সংক্রমণের ভয়ে।

লজ সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাতে লন্ডন ঘুরে আসা ওই চিকিৎসক একটি আলাদা ঘরে ছিলেন। বাকি দুই চিকিৎসক এক সঙ্গে ছিলেন অন্য একটি ঘরে। লজ মালিক বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আমার আবেদন, ওই দুই চিকিৎসককে অন্তত অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হোক। তাঁদের খাবারটুকুর ব্যবস্থাও আমরা করতে পারছি না।” গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

এ দিকে, বাঁকুড়া মেডিক্যালের গোটা ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড’-এ একা রয়েছেন লন্ডনফেরত ওই শল্য চিকিৎসক। এ দিন হাসপাতালের আধিকারিকেরাই তাঁর জন্য জলের ব্যবস্থা করে দেন। খাওয়ার জন্য কিনে দেওয়া হয়েছে থার্মোকলের থালা, বাটি, গ্লাসও। হাসপাতালের কর্মীদের বড় অংশই আইসোলেশন ওয়ার্ডের আশপাশে যেতে চাইছেন না। হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, “খুবই খারাপ লাগছে ওই ডাক্তারের কথা ভেবে। সম্পূর্ণ একা রয়েছেন তিনি। যে কয়েকজন কিছুক্ষণের জন্য ওই ওয়ার্ডে যাবেন, সংক্রমণ এড়াতে তাঁদের জন্য বিশেষ পোশাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

Coronavirus Quarantine Health

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}