পুরুলিয়া ২ ব্লকের চার করোনা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া একটি কোয়রান্টিন সেন্টার পরিদর্শনে রবিবার বিডিও, বিওএমএইচ ও থানার আইসি। ছবি: সুজিত মাহাতো
পুরুলিয়া জেলার নতুন করে করোনা-আক্রান্তদের গ্রামে গিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরা রাস্তা ‘সিল’ করে দিলেন। তাঁদের সংস্পর্শে আসা লোকজনকে থাকতে বলা হল ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ।
শনিবার রাতে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন জানায়, করোনা-পরীক্ষার রিপোর্টে মহারাষ্ট্র-ফেরত ছ’জন শ্রমিকের করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়েছে। ওই ছ’জনের বাড়ি পুরুলিয়া ২ ব্লকের ছড়রা-দুমদুমি, ঘোঙা ও গোলামারা পঞ্চায়েত এলাকায়। জেলারই একটি বেসরকারি হাসপাতালে শনিবার রাতেই তাঁদের ভর্তি করানো হয়। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, “আক্রান্তের ১৯ মে মহারাষ্ট্র থেকে ফিরেছিলেন। তাঁদের মধ্যে তখন করোনার উপসর্গ ছিল না। তবে লালারসের রিপোর্টে করোনা ধরা পড়েছে।’’
শনিবার রাতেই আক্রান্তদের গ্রামে যান জেলাশাসক রাহুল মুজুমদার এবং পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, আক্রান্তদের মধ্যে দু’জন (ছড়রা-দুমদুমি ও ঘোঙা পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা) নিজের বাড়িতেই নিভৃতবাসে ছিলেন। বাকি চার আক্রান্ত ছিলেন গোলামারা পঞ্চায়েত এলাকার এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সেখানে ‘কোয়রান্টিন’-এ রয়েছেন আরও ৫৯ জন পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে রবিবার পর্যন্ত কারও শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েনি বলে দাবি প্রশাসনের।
ছড়রা-দুমদুমি ও ঘোঙা পঞ্চায়েত এলাকার যে দুই বাসিন্দার শরীরে সংক্রমণ মিলেছে, তাঁদের গ্রাম ‘সিল’ করে দিয়েছে প্রশাসন। রবিবার সেখানে যান বিডিও (পুরুলিয়া ২) বিজয় গিরি। তিনি বলেন, ‘‘ছড়রা-দুমদুমি পঞ্চায়েতের যে বাসিন্দার শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাঁর বাড়ি এবং সংলগ্ন তিনটি পরিবারের ৩৫ জনকে ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ থাকতে বলা হয়েছে। ঘোঙা পঞ্চায়েত এলাকার করোনা-আক্রান্তের পরিবারের পাঁচ জনকেও ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ রাখা হয়েছে।’’
বিডিও জানান, গোলামারা পঞ্চায়েতের যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাকি চার আক্রান্ত ছিলেন, সেই ভবনটিকে কেন্দ্র করে আশপাশের এলাকা ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে। আরও কিছুটা এলাকাকে ‘বাফার জ়োন’ করা হয়েছে। ওই এলাকায় ঢোকার মুখে আড়াআড়ি বাঁশ বেঁধে রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে। বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ছয় আক্রান্তই মুম্বইয়ে সেলাই ও এমব্রয়ডারির কাজ করতেন। ওই শ্রমিকদের দলে থাকা এক জন বলেন, ‘‘সেখান থেকে একটি ট্রাকে ১৭ মে ঝাড়খণ্ডে আসি। বাকি পথ হেঁটে ১৯ মে গ্রামে ফিরি। তারপরেই আমাদের লালারসের নমুনা নেওয়া হয়।’’
ছড়রা-দুমদুমি ও ঘোঙা পঞ্চায়েত এলাকার যে দুই বাসিন্দার শরীরে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে, রবিবার তাঁদের গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জটলা করছেন অনেকে। দোকানে ভিড়। কেউ কেউ ‘মাস্ক’ পরলেও অনেকের মুখে ঢাকা ছিল না। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতেও দেখা যায়নি। তবে গ্রামে চাপা আতঙ্ক রয়েছে। একই চিত্র দেখা গিয়েছে, গোলামারা পঞ্চায়েত এলাকার ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (যেখানে অন্য চার করোনা-আক্রান্ত ছিলেন) সংলগ্ন এলাকায়। ওই প্রতিষ্ঠানের সামনেও এ দিন জটলা দেখা যায়। প্রায় কারও মুখেই ‘মাস্ক’ ছিল না। পুলিশ এলে অবশ্য চিত্র বদলায়।
এ দিন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনের আধিকারিকেরা গেলে তাঁদের সামনেই ক্ষোভ উগরে দেন সেখানে থাকা শ্রমিকেরা। বিডিও-র কাছে খাবারের অভাবের কথা জানান তাঁরা। এক শ্রমিকের কথায়, “তিন দিন আগে ব্লক প্রশাসন চার বস্তা চাল পাঠিয়েছিল। গ্রামের মানুষ এক বস্তা আলু দিয়েছেন। আলুও প্রায় শেষ। তেল-মশলাও নেই।’’ তাঁর সংযোজন: “আতঙ্কে গ্রামে দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চাইলেও দোকান থেকে জিনিস পাব না। যেটুকু খাদ্যসামগ্রী রয়েছে, তা দিয়ে দুপুরের রান্না হবে। রাতে কী খাব জানি না।’’ বিডিও বলেন, “ওই শ্রমিকদের জন্য রান্নার জিনিসপত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy