ঘরের কাছের স্কুলে বদলি হতে চেয়ে শিক্ষিকারা অসুস্থতার ছুতো দিচ্ছেন বলে বৃহস্পতিবার কটাক্ষ করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর সেই মন্তব্য ঘিরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। ক্ষুব্ধ পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ার শিক্ষিকাদের একাংশও। মন্তব্যের প্রতিবাদ করছে প্রাথমিকের শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিভিন্ন সংগঠনও।
কী বলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী?
কলকাতার নজরুল মঞ্চে প্রাথমিক শিক্ষা সমিতির এক অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মন্তব্যটি করেছিলেন। অসুস্থদের বদলির আবেদন অগ্রাধিকার পাবে বলে এক বার বলেছিলেন তিনি। সেই প্রসঙ্গ তুলে সেখানে তিনি বলেন, ‘‘তার পর থেকে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে শিক্ষিকারা এত বেশি স্ত্রীরোগে ভুগছেন যে, আমি নিজেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি। এটা কী হচ্ছে?’’
পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ার প্রাথমিকের শিক্ষক শিক্ষিকাদের আপত্তি এই মন্তব্যের দু’টি জায়গায়। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘স্ত্রী রোগের প্রসঙ্গটাকে ছুতো হিসাবে দেগে দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী একটি গুরুতর বিষয়কে লঘু করে দিলেন। সত্যি সত্যি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকারা কতটা স্বাস্থ্যবিধি বজার রাখতে পারেন? রাস্তাঘাটে সাধারণ শৌচালয় ক’টা চোখে পড়ে?’’ কেউ কেউ আবার অভিযোগ করছেন, বদলির ব্যাপারটা সরকার সামলাতে ব্যর্থ হয়ে এখন অন্য দিকে
আঙুল তুলছে।
পুরুলিয়ায় প্রাথমিক স্কুল ৩০৭১টি। শিক্ষিকা রয়েছেন ১,৭৬৩ জন। বাঁকুড়ায় ৩,৫৬৪টি স্কুলে শিক্ষিকা রয়েছেন প্রায় ২,৩১৪ জন। পুরুলিয়া থেকে ঝালদা ১ ব্লকের মাঠারি খামার পঞ্চায়েত এলাকার একটি স্কুলে যান এক শিক্ষিকা। তিনি জানাচ্ছেন, বাসে বা ট্রেনে ঝালদা পৌঁছতে ঘণ্টা খানেক লাগে। সেখান থেকে পনেরো কিলোমিটার স্কুটার চালিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে স্কুলে যেতে হয়। ওই পথে হাতিও যাতায়াত করে। কিছু দিন আগে স্কুলের দেওয়াল ভেঙেছে হাতি। তাঁর কথায়, ‘‘পাহাড়ি কাঁচা রাস্তায় বিশেষ গাড়িঘোড়া চলে না। আপদবিপদ হলে সাহায্য করার মতোও কাউকে পাওয়া যাবে না। শিক্ষামন্ত্রী কি জানেন সেটা?’’ কোতুলপুরের এক শিক্ষিকা বলছিলেন, ‘‘ভিড় বাসে খানাখন্দে ভরা রাস্তা দিয়ে ঋতুস্রাবের দিনগুলোতে স্কুলে যেতে যে কী অবস্থা হয়, সেটা আমরাই জানি।’’
বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ জানান, নোংরা শৌচালয় ব্যবহার করলে মূত্রনালীতে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এমন রোগ নিয়ে প্রচুর কর্মরত মহিলা চিকিৎসকদের কাছে আসেন। তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির বাঁকুড়া জেলা সভাপতি গৌতম গড়াই বলেন, ‘‘বাম আমলে দশ শতাংশ প্রাথমিক স্কুলেও শৌচাগার ছিল না। এখন সমস্ত স্কুলে হয়েছে।’’ তবে এবিপিটিএ-র জেলা সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘অনেক স্কুলেই একটি মাত্র শৌচাগার। সেটিই সবাই ব্যবহার করেন। কিন্তু ঠিক ভাবে পরিষ্কার করা হয় না। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কাটা থেকেই যায়।’’
শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক ব্যোমকেশ দাসও। তাঁর কথায়, ‘‘এই মন্তব্যের পরে ওঁর রুচিবোধ নিয়েই প্রশ্ন জাগছে।’’
শিক্ষক সংগঠন বিপিটিএ-র পুরুলিয়ার সহসভাপতি অভিযান ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘যাঁদের বাস্তব সমস্যা রয়েছে, তাঁদের আবেদন সহানুভুতির সঙ্গে বিবেচনার বদলে ওই মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষিকাদের চূড়ান্ত অপমান করেছেন।’’
বাঁকুড়া মেডিক্যালের ওই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই অবশ্য জানাচ্ছেন, অসুস্থতা না থাকলেও শংসাপত্রে সে কথা লিখে দেওয়ার জন্যও প্রায়ই আর্জি শুনতে হয় তাঁদের। হুড়া ব্লক থেকে প্রায় সত্তর কিলোমিটার উজিয়ে রোজ কাশীপুরের স্কুলে যাওয়া এক শিক্ষিকা বলছেন, ‘‘বাড়ির সামনের স্কুলে বদলির আবেদন করলে এই ভোগান্তিটা গুরুত্ব দেওয়া হবে কি? অসুস্থতার ছুতো বেছে বের করার থেকে বিভিন্ন সমস্যা সত্যিকারের গুরুত্ব দিয়ে দেখাটা জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy