— প্রতীকী চিত্র।
মনমোহন সিংহ অর্থমন্ত্রী হন ১৯৯১ সালে। তার পরে তিন দশক কেটে গিয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো সামাজিক ক্ষেত্র তথা মানব উন্নয়নে তিন দশক আগেও যে হারে খরচ হত, এখনও তা-ই হয়ে চলেছে। নরেন্দ্র মোদীর জমানাতে তার কোনও পরিবর্তন হয়নি।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেট পেশ করতে চলেছেন। তার আগে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকেরই সংস্থা এনআইপিএফপি (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি)-র একটি রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে।
রিপোর্ট বলছে, ১৯৯০-৯১-তে দেশের জিডিপি-র ৫.৮ শতাংশ অর্থ সামাজিক উন্নয়নে খরচ হত। তিরিশ বছর পরে ২০১৯-২০-তে সামাজিক উন্নয়নে খরচ হয়েছে জিডিপি-র ৬.৮ শতাংশ। মাত্র ১ শতাংশ বিন্দু বৃদ্ধি। মানব উন্নয়নে খরচ জিডিপি-র ৪ শতাংশের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ছবিটা একই। ১৯৯০-৯১-তে শিক্ষা ক্ষেত্রে জিডিপি-র ২.৯৭ শতাংশ খরচ হয়েছিল। ২০১৯-২০-তে শিক্ষা ক্ষেত্রে খরচ হয়েছে জিডিপি-র ২.৮৮ শতাংশ। তিন দশক পরে শিক্ষা ক্ষেত্রে খরচের হার কমেছে বই বাড়েনি। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় জিডিপি-র ০.৯২ শতাংশ ব্যয় হয়েছিল। তিন দশক পরে তা সামান্য বেড়ে ১.৩৬ শতাংশ হয়েছে।
মজার কথা হল, মোদী সরকারের ২০২০ সালের নতুন শিক্ষা নীতিই বলছে, শিক্ষা খাতে জিডিপি-র ৬ শতাংশ ব্যয় হওয়া উচিত। আর ২০১৭ সালে মোদী সরকারের জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি অনুযায়ী, স্বাস্থ্য খাতে জিডিপি-র ২.৫ শতাংশ ব্যয় হওয়া উচিত। বাস্তবে তার কোনওটাই হচ্ছে না।
কেন? এনআইপিএফপি-র দুই গবেষক সুকন্যা বসু ও সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের ‘সামাজিক খরচ ও আর্থিক নীতি’ শীর্ষক রিপোর্টে বলেছেন, আসলে তিন দশকে কেন্দ্রীয় সরকারের মোট বাজেটের বহরই জিডিপি-র তুলনায় বাড়েনি। যদি ১৯৯০ ও ২০২০-র সরাসরি তুলনা করা হয়, তা হলে দেখা যাবে, জিডিপি-র তুলনায় সরকারের মোট খরচের হার কমেছে। উন্নত, বেশি আয়সম্পন্ন যে সব দেশ মানব উন্নয়ন সূচকের নিরিখেও এগিয়ে, সেই সব দেশে ২০১৯-২০-তে সরকারের মোট খরচ ছিল জিডিপি-র ৪০.৮ শতাংশ। সেই তুলনায় ভারতে সরকারি খরচের হার ছিল মাত্র ২৬.৯ শতাংশ। ১৯৯০-৯১-তে বাজেটে মোট সরকারি খরচের হার এর তুলনায় সামান্য হলেও বেশি ছিল—২৮.৪ শতাংশ। গবেষকদের বক্তব্য, সামগ্রিক ভাবে সরকারি খরচের বহর যদি না বাড়ে, তা হলে সামাজিক উন্নয়ন তথা মানব উন্নয়নে খরচ বাড়ানো কঠিন। কারণ এক জায়গায় বরাদ্দ বাড়াতে গেলে অন্যত্র ছাঁটাই করতে হবে। মাথা-পিছু জিডিপি বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই তুলনায় মানব উন্নয়নে খরচ বাড়েনি। গবেষকদের বক্তব্য, মানব উন্নয়নে ব্যয়কে খরচের বদলে লগ্নি হিসেবে দেখতে হবে।
কী বলছে মোদী সরকার?
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘মোদী জমানায় ২০১৬ সাল থেকেই সামাজিক খাতে খরচ লাগাতার বাড়ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে খরচ বেড়েছে। যেমন গত অর্থ বছরে দেশে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপি-র ১.৯ শতাংশ ব্যয় হয়েছে।’’ তিনিও মেনে নিচ্ছেন, সাত বছর আগে জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি ঘোষণা হলেও, এখনও সেই অনুযায়ী বাজেটের ২.৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে খরচ হচ্ছে না। তাঁর যুক্তি, এই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে রাজ্যের সরকারগুলিকেও শিক্ষা, স্বাস্থ্যে খরচ বাড়াতে হবে।
গত ৩১ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী সীতারামন বাজেটের প্রস্তুতি পর্বে শিক্ষা, স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানেও বিশেষজ্ঞরা নতুন শিক্ষা নীতি ও জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি মেনে শিক্ষা-স্বাস্থ্যে বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে বলেছেন। অর্থ মন্ত্রক সূত্র বলছে, নতুন শিক্ষা নীতি মেনে জিডিপি-র ৬% শিক্ষা খাতে খরচ করতে হলে বরাদ্দ হওয়া দরকার প্রায় সাড়ে ১৯ লক্ষ কোটি টাকা। তাতে কেন্দ্রের ৬০ শতাংশ ভাগ ধরলে কেন্দ্রকে অন্তত ১১.৭ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। গত জুলাইতে মোদী সরকার তৃতীয় বার ক্ষমতায় এসে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করেছিল। তাতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা। আর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে জিডিপি-র ২.৫ শতাংশ ব্যয়ের অর্থ ৮.১৬ লক্ষ কোটি টাকা খরচ। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের নীতি মেনে তাতে কেন্দ্রের ৪০ শতাংশ ভাগ ধরলে, কেন্দ্রের খরচ করতে হবে ৩.২৬ লক্ষ কোটি টাকা। বাস্তবে গত বাজেটে স্বাস্থ্যে বরাদ্দ হয়েছিল মাত্র ৮৯ হাজার কোটি টাকার মতো। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘আগামী বাজেটে এই ছবি বদলাবে, এমন আশা কম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy