Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

তথ্যচিত্র দেখাতে গিয়ে পুলিশের হাতে ‘আটক’, অভিযোগ হেনস্থার

হুগলির ওই দুই যুবক জানান, পাহাড়ের মানুষজনের আন্দোলন নিয়ে তাঁরা ‘বন মানুষ’ নামে তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছেন।

সঞ্চয়: পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের সেই জলাধার। ফাইল ছবি

সঞ্চয়: পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের সেই জলাধার। ফাইল ছবি

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৫৫
Share: Save:

একটা সময় ছিল, মাওবাদী উপদ্রুত অযোধ্যা পাহাড়ের গ্রামগুলি থমথম করত। এখনও শিরকাবাদের কাছের আড়শা থানার চেকপোস্টে যেন সেই স্মৃতিই ছড়িয়ে। পুরুলিয়া জেলা পুলিশের দাবি, পাহাড় যাতে আবার কোনও ভাবে ‘অশান্ত’ হয়ে না পড়ে, সে জন্য ‘বিশেষ’ নজর রাখা হয়। আর তাই মঙ্গলবার দুপুরে হুগলির দুই যুবককে শিরকাবাদ থেকে আড়শা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জেলা পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়ার বক্তব্য, ‘‘বাইরে থেকে কয়েক জন পাহাড়ে এসে থাকছেন। বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করছেন। সেই খবর তো পুলিশের কাছে আসবেই। তাই থানায় ডেকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।’’

কিন্তু, ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল ও পরিবেশকর্মীদের একাংশ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন। দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই প্রথম পুরুলিয়ায় অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে ৯০০ মেগাওয়াটের একটি পাম্প স্টোরেজ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়া হয়। অযোধ্যা পাহাড়ের ঠুরগা নালায় আরও একটি হাজার মেগাওয়াটের নতুন পাম্প স্টোরেজ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে বাধা দেন স্থানীয় গ্রামবাসীর একাংশ। পাশে দাঁড়ান রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার কিছু পরিবেশকর্মী। মামলা হয় হাইকোর্টে। গত ২ জুলাইয়ের শুনানিতে বিচারক নির্দেশ দেন, নতুন করে গ্রামসভার অনুমতি নিতে হবে।

ঠুরগায় গাছকাটার বিরোধিতায় আন্দোলনে শামিল বাঘমুণ্ডির পরিবেশকর্মী সোমনাথ সিংহরায়ের বক্তব্য, ‘‘বিদ্যুৎ প্রকল্প হোক। কিন্তু অন্য কোথাও। পরিবেশ ধ্বংস করে, মানুষের জীবিকা নষ্ট করে নয়।’’ তাঁর দাবি, পরিবেশ সংক্রান্ত আইন এবং বিদ্যুৎ প্রকল্পের জল কোন দিকে গড়াচ্ছে তা ওই সমস্ত প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে অনেক সময়ে ঠিক ভাবে পৌঁছয় না। তাই তথ্যচিত্র দেখানোর ব্যবস্থা হয়।

হুগলির ওই দুই যুবক জানান, পাহাড়ের মানুষজনের আন্দোলন নিয়ে তাঁরা ‘বন মানুষ’ নামে তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছেন। তাঁরা বলেন, ‘‘পাহাড়ের মানুষজনের বলা কথাই আমরা ক্যামেরায় ধরেছি। সেটাই তাঁদের দেখাতে রবিবার অযোধ্যায় গিয়েছিলাম।’’ দলে ছিলেন মোট ১৪ জন। বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ছবিটি দেখানো হয়। রবিবার ১২ জন ফিরছিলেন বাসে। স্থানীয় এক যুবকের মোটরবাইক নিয়ে দু’জন পাহাড় থেকে নামছিলেন। তখনই ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়।

ওই দুই যুবকের অভিযোগ, জিজ্ঞাসাবাদ ‘অছিলা’ মাত্র। পাহাড়ের মানুষের আন্দোলনে সংহতি জানানোর জন্যই থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। স্টেশনে পৌঁছতে দেরি করিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ১৪ জুলাই পাহাড় থেকে ফিরছিলেন চার পরিবেশ কর্মী। তাঁদেরও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গিয়েছিল। ওই পরিবেশকর্মীদের মধ্যে সুমন নামে এক জন দাবি করেছেন, সে বার তাঁদের ছাড়া হয়েছিল রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ। ততক্ষণে ফেরার ট্রেন চলে গিয়েছে।

ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের সদস্য শ্যামসুন্দর মান্ডি বলেন, ‘‘করম পরব নিয়ে সবাই ব্যস্ত। খবর পেয়ে আমরা জনা পঁচিশ থানায় গিয়েছিলাম। পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদ করতে ডেকে আনা হয়েছে।’’ সংগঠনের পুরুলিয়া জেলা পারগানিক রতনলাল হাঁসদার বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের যে কোনও জায়গায় আমরা যে কেউ যেতে পারি। সেই অধিকার সবার আছে।’’

থানায় যাওয়া যুবকদের এক জনের বাবা বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটা পেলাম। পরিবেশ বাঁচানোর ব্যাপারে কেন্দ্র বা রাজ্য, কেউ তেমন সচেতন নয়। পাহাড়, গাছ, নদী কী ভাবে বাঁচানো যায় তা নিয়ে সবার ভাবা উচিত।’’ পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘বিশদে খোঁজ নিচ্ছি। তার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Purulia Arsha Ajodhya Hills
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy