Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

‘ভাঙা’ মেলা, হুঁশিয়ারি এল আন্দোলনেরও

  মেলা পরিচালনার দায়িত্ব থেকে বিশ্বভারতীর সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তে মেলা বন্ধ হলে বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি, হোটেল ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশন এবং বোলপুরের অনেক বাসিন্দা তা মেনে নেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

২০১৮-র পৌষমেলায়। ফাইল চিত্র

২০১৮-র পৌষমেলায়। ফাইল চিত্র

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০১:২১
Share: Save:

শতবর্ষ পেরোনো পৌষমেলা নাকি আর হবে না! সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে মঙ্গলবার, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের রাতেই শান্তিনিকেতনের চৌহদ্দি টপকে ছড়িয়ে গিয়েছিল খবরটা। বুধবার জানা গেল কেউ এর পক্ষে, কেউ উল্টোটা। শুধু মত না জানিয়ে না থেমে ব্যবসায়ী, বাসিন্দাদের অনেকে আবার মেলা না হলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

মেলা নিয়ে বিশ্বভারতীর সিদ্ধান্তের পক্ষে রয়েছে অধ্যাপকসভা এবং বিশ্বভারতী ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশন। ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্য এবং সদস্য বিকাশচন্দ্র গুপ্তের মত, ‘‘মেলায় প্রতিদিন প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ ভিড় করেন। এই অবস্থায় পরিবেশ আদালতের গাইডলাইন মেনে দূষণমুক্ত মেলা করা বিশ্বভারতীর পক্ষে সত্যিই সম্ভব নয়।’’ অধ্যাপকসভার সম্পাদক গৌতম সাহার কথায়, ‘‘মেলা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত সমর্থন করছি। তবে বিশ্বভারতী যদি এর পরেও মেলার সঙ্গে যুক্ত থাকে, আমরা আগের মতোই কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করে যাব।’’ বিশ্বভারতী কর্মিসভার সম্পাদক বিদ্যুৎ সরকার অবশ্য চাইছেন চলতি বছরের পৌষমেলা নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তার দ্রুত নিষ্পত্তি হোক।

মেলা পরিচালনার দায়িত্ব থেকে বিশ্বভারতীর সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তে মেলা বন্ধ হলে বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি, হোটেল ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশন এবং বোলপুরের অনেক বাসিন্দা তা মেনে নেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিংহ এবং কোষাধ্যক্ষ সুব্রত ভকতের ক্ষোভ, মেলা নিয়ে যখন একাধিক বৈঠক হয় একবারও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন না। অথচ, দূষণ হলেই তাঁদের উপরে দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিয়ম মেনেই মেলা শেষের পর উঠে যান। সুনীলের কথায়, ‘‘যাঁরা ওঠেন না, তাঁদের তোলার দায়িত্ব বিশ্বভারতীর। সেখানে তো কর্তৃপক্ষ উদাসীন থাকেন। এই অবস্থায় মেলা বন্ধ হলে আন্দোলন হবে।’’

মঙ্গলবার রাতে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিশ্বভারতী।

বোলপুরের বাসিন্দাদের সঙ্গে মেলা নিয়ে জড়িয়ে আছে বহু স্মৃতি, আবেগ। এঁদের অনেকে মনে করেন, এ ভাবে মেলা বন্ধ হতে পারে না। প্রবীণ আশ্রমিক স্বপনকুমার ঘোষের কথায়, ‘‘পৌষ উৎসবের সঙ্গে মেলার নিবিড় যোগ আছে। আশ্রম প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং এই মেলার প্রবর্তন করেছিলেন। তবে বর্তমানে মেলা যে ভাবে আয়তনে বেড়ে বাণিজ্যিক হয়েছে, সেটা নিয়ে বিশ্বভারতী ভাবতে পারে।’’ এর সঙ্গে সহমত বিশ্বভারতীর পড়ুয়া এবং প্রাক্তনীদের অনেকে। তাঁরা মনে করিয়েছেন, এক সময় মেলায় পড়ুয়াদের অনেক স্টল থাকত। এখন আর দেখতে পাওয়া যায় না। যে সমস্ত প্রান্তিক মানুষদের কথা ভেবে পৌষমেলার সূচনা হয়েছিল, তাঁরাও কার্যত ব্রাত্য। এক প্রাক্তনীর কথায়, ‘‘কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে স্টল সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন। কিন্তু, মেলা বন্ধ হলে সেটা খারাপ হবে।’’

মনভার পর্যটকদের অনেকেরও। নিয়ম করে বাঁকুড়া থেকে এই মেলায় আসতেন সোমনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। তিিন বলছেন, ‘‘এই মেলার সঙ্গে বাঙালির অনেক আবেগ লুকিয়ে। সেই টানেই শান্তিনিকেতনে যাই। হঠাৎ করে বিশ্বভারতীর এমন সিদ্ধান্তে হতবাক হয়ে গিয়েছি।’’ ‘‘বিশ্বভারতীর এই সিদ্ধান্তে মেলার ক্ষতি হলে সেটা কেউই মেনে নেবে না। উদ্যোক্তা হলেও পৌষমেলা নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এ ভাবে যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন না’’— মনে করেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী সুদীপ্ত গড়াই।

পৌষমেলা নিয়ে বিশ্বভারতীর প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় মঙ্গলবার রাতে। সেখানে জানানো হয়েছিল, ‘আগামী ১৪২৬ সালের ৭-৯ পৌষ (ডিসেম্বর, ২০১৯) শান্তিনিকেতন পৌষ উৎসবের ঐতিহ্যপূর্ণ কৃত্যাদি (উপাসনা, পরলোকগত আশ্রমিকদের স্মরণ, মহর্ষি স্মারক

বক্তৃতা, প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন, সমাবর্তন, খ্রিস্টোৎসব ইত্যাদি) যথোচিত মর্যাদায় পালিত হবে। কিন্তু পৌষমেলা পরিচালনার দায়িত্ব এখন থেকে আর বিশ্বভারতীর পক্ষে নির্বাহ করা সম্ভব হবে না।’

আশার কথা একটাই, মেলার এখনও দেরি আছে। তত দিনে কী হয়, দেখার সেটাই।

অন্য বিষয়গুলি:

Poush Mela Visva Bharati Shanti Niketan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy