নিতুড়িয়ায় কৃষি দফতরের বীজ খামারেও নিয়োগ থমকে। কম শ্রমিক নিয়েই চলছে কাজ।—নিজস্ব চিত্র
কৃষি দফতরের বীজ খামারে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগে বিবাদ বেধেছে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের অন্দরে। তৃণমূল শাসিত জেলা পরিষদ তাদের অন্ধকারে রেখে নিয়োগের বিষয়ে ‘খবরদারি’ করেছে, এই অভিযোগ তুলেছেন দলেরই পরিচালিত জেলার একাধিক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং ব্লক নেতৃত্ব।
প্রশাসন সূত্রের খবর, পুরুলিয়ায় কৃষি দফতরের ১৩টি বীজ খামার আছে। দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে নতুন নিয়োগ হয়নি। পুরানো কর্মীদের অনেকেই অবসর নেওয়ায় কর্মী সঙ্কট চলছে ওই খামারগুলিতে। সেই প্রেক্ষিতেই জেলা পরিষদ ‘পিস রেটেড লেবার’ বা ঠিকার ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগ করতে বলেছিল কৃষি দফতরকে। কোন খামারে কাদের নিয়োগ করা হবে, সেই বিষয়ে জেলা সভাধিপতি শ্রমিকদের তালিকা পাঠিয়েছিলেন জেলার উপ কৃষি অধিকর্তার (প্রশাসনের) কাছে। সেই মতো খামারগুলিতে নিয়োগ তালিকা পাঠিয়ে দেয় জেলা। কিন্তু বেশ কিছু তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি জেলা পরিষদের পাঠানো শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে দেয়নি। ওই পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লকের তৃণমূলের নেতাদের অভিযোগ, তাদের না জানিয়ে জেলা পরিষদ শ্রমিক নিয়োগ করতে পারে না। যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো।
কৃষি দফতর সূত্রেই জানা যাচ্ছে্, জেলার অনেক ব্লকের বীজ খামারে এই শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে কমবেশি ঝামেলা থাকলেও বিবাদ তুঙ্গে উঠেছে নিতুড়িয়া, সাঁতুড়ি ও মানবাজার ১— এই তিন ব্লকে। মূলত স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই জেলা পরিষদ শ্রমিকদের নামের তালিকা পাঠিয়ে দেওয়াতে বিস্তর চটেছেন শাসকদলের ওই ব্লকগুলির নেতারা। তার জেরে সাঁতুড়িতে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি ও শাসকদলের স্থানীয় নেতারা শ্রমিকদের নিয়োগই করতে দেয়নি ব্লক কৃষি দফতরকে। নিতুড়িয়া ব্লকে নিয়োগ হলেও পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সভাপতি তথা ব্লক সভাপতি শান্তিভূষনপ্রসাদ যাদব ব্লক কৃষি দফতরকে চিঠি দিয়ে ওই শ্রমিকদের নিয়োগ না করতে বলেছেন। ফলে এখন ওই শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মানবাজার ১ ব্লকে আবার পুরনো ঠিকা ও স্থায়ী কর্মীরা এই নিয়োগের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তৃণমূলেরই একাংশ ওই বিক্ষোভে মদত দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
সাঁতুড়ি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি রামপ্রসাদ চক্রবর্তী এবং নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তিভূষনপ্রসাদ বলেন, ‘‘ব্লকের বীজ খামারগুলিতে কারা ঠিকা শ্রমিকের কাজ করবে, সে বিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই নামের তালিকা পাঠিয়েছে জেলা পরিষদ। এটা বিধি বর্হিভূত কাজ।’’ মানবাজার ১ ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দিলীপ পাত্রের বক্তব্য, ‘‘বীজ খামারে শ্রমিক হিসাবে কাদের নাম পাঠানো হয়েছে, সে ব্যাপারে আমাদের কিছুই জানা নেই।”
সভাধিপতির পাল্টা দাবি, বীজ খামারগুলিতে কারা শ্রমিক হিসাবে কাজ করবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনও এক্তিয়ারই পঞ্চায়েত সমিতির নেই। তিনি বলেন, ‘‘বীজ খামারগুলিতে কর্মীর অভাবে কাজ হচ্ছিল না বলেই ঠিকার ভিত্তিতে শ্রমিকদের নাম কৃষি ও সেচ দফতরের স্থায়ী সমিতি স্থির করেছে। এখন যদি পঞ্চায়েত সমিতিগুলি ওঁদের কাজ করতে না দেয়, বীজ খামারগুলির উন্নয়ন হবে না। পরবর্তী সময়ে কিন্তু সমিতির কাছেই জবাবদিহি চাইবেন স্থানীয় লোকজন।’’
জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে টানাপড়েনে সমস্যায় পড়েছে ব্লক কৃষি দফতরগুলি। তবে দফতরের একাংশ মনে করছে, এ ভাবে জেলা পরিষদ থেকে পাঠানো নামের তালিকা অনুযায়ী শ্রমিক নিয়োগ না করে একটি কমিটি গড়ে তার মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ করা হলে এই সমস্যা এড়ানো যেত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ব্লক কৃষি আধিকারিকের কথায়, ‘‘এই শ্রমিকেরা কী ভাবে কাজ করবেন, মাসে কত দিন কাজ করবেন, তাঁদের মজুরি কে দেবে, কী ভাবে মজুরি পাবেন—এই ধরনের বিষয়গুলি আগে নিশ্চিত না করেই হঠাৎ করে জেলা পরিষদ নিয়োগের তালিকা পাঠানোয় সমস্যা বেড়েছে।’’ অন্য দিকে, কমিটি গড়ে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে কৃষি দফতরের পরিকাঠামোর অভাব থাকাতেই জেলা পরিষদের সাহায্য নেওয়া হয়েছে বলে পাল্টা মত দফতরে অন্য একটা অংশের।
পুরুলিয়ার উপ কৃষি অধিকর্তা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিভিন্ন বীজ খামার ও সেগুলির কার্যালয়ে স্থানীয় প্রচুর লোকজন খামারে কাজ দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছিলেন। জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ দফতরের স্থায়ী সমিতিতে এই বিষয়ে আলোচনা হয়। তিনি বলেন, ‘‘যেহেতু পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে জেলা পরিষদের একটি প্রশাসনিক সম্পর্ক রয়েছে, তাই খামারগুলিতে কারা কাজ করতে পারবেন, সেটা স্থির করে নামের তালিকা দেওয়ার জন্য স্থায়ী সমিতিতে বলা হয়েছিল। জেলা পরিষদের পাঠানো নামের থেকে কৃষি দফতর স্ক্রুটিনি করে খামারগুলিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিকের নাম ব্লকে পাঠিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy