Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
বাঁকুড়া পুরসভা ও পূর্ত দফতরের সমম্বয়ের অভাব

টাকা পড়ে থাকলেও থমকে কাজ

এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন তুলছেন ‘মহকুমাশাসকের আশ্বাসের কী হল’? উত্তর খুঁজতে একাধিকবার ব্যবসায়ীরা মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালার দফতরে গিয়েছেন।

পুনরায়: সুভাষ রোডে দখল উচ্ছেদের পর ফুটপাথ তৈরি করেনি প্রশাসন। ফের রাস্তার সামনে মালপত্র ঢেলে রেখে বিকিকিনি শুরু করেছেন কিছু ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

পুনরায়: সুভাষ রোডে দখল উচ্ছেদের পর ফুটপাথ তৈরি করেনি প্রশাসন। ফের রাস্তার সামনে মালপত্র ঢেলে রেখে বিকিকিনি শুরু করেছেন কিছু ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৯
Share: Save:

মহকুমাশাসক আশ্বাস দিয়েছিলেন ফুটপাথ তৈরি করা হবে। সেই আশ্বাসে ভর করেই বাঁকুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সুভাষ রোডের দু’পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তার পরে গত ন’মাস ধরে ভাঙা অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে দোকানের সামনের অংশ। কিন্তু টাকা হাতে পেয়েও প্রশাসন উন্নয়নের কাজ শুরু করে উঠতে পারেনি। এতে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী থেকে ক্রেতা সকলেই।

এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন তুলছেন ‘মহকুমাশাসকের আশ্বাসের কী হল’? উত্তর খুঁজতে একাধিকবার ব্যবসায়ীরা মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালার দফতরে গিয়েছেন। মহকুমাশাসক প্রতিবারই ‘শীঘ্রই কাজ শুরু হবে’ বলে আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে কাজ এক কদমও এগোয়নি।

সমস্যাটা কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে উঠে এসেছে, পুরসভা ও পূর্ত দফতরের সমন্বয়ের অভাবের জেরেই সুভাষ রোডে ফুটপাথ তৈরির কাজ থমকে রয়েছে। কাজ না করলেও বাঁকুড়া পুরসভা ও পূর্ত দফতর এ জন্য পরস্পরকে দুষতে ছাড়ছে না।

প্রশাসন সূত্রের খবর, সুভাষ রোডে মাচানতলা মোড় থেকে লালবাজার মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে ফুটপাথ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে পূর্ত দফতর।

আবার ওই রাস্তাতেই পুরসভা নিকাশি নালা তৈরির পরিকল্পনা করেছে। ফুটপাথের জন্য পূর্ত দফতর এক কোটি ৭৫ লক্ষ ও নর্দমা তৈরির জন্য রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর দু’কোটি ৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে বেশ কয়েক মাস আগেই। তাহলে কাজ কেন শুরু হয়নি?

বাঁকুড়া পূর্ত দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হেমন্ত বিট বলেন, “আমাদের টেন্ডার ডাকা হয়ে গিয়েছে। পুরসভা নর্দমা তৈরি করে দিলেই আমরা ফুটপাথ তৈরির কাজ শুরু করে দেব।” বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তও বলছেন, “নিকাশি নালার জন্য টেন্ডার ডাকার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর গত অগস্ট মাসে টাকা বরাদ্দ করলেও টেন্ডার ডাকতে এত দেরি হচ্ছে কেন? মহাপ্রসাদবাবুর দাবি, “পূর্ত দফতরের পরিকল্পনায় ফুটপাথের পাশাপাশি নিকাশি নালা তৈরিরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রথমে ধন্দে ছিলাম।”

তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের অনেকবারই বৈঠকে ডাকা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা আসতে পারেননি বলে প্রকল্পটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যায়নি।” এ দিন মহাপ্রসাদবাবু সংবাদমাধ্যমের সামনেই ফোনে পূর্ত দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপর জানান, আজ, শুক্রবার পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা পুরকর্তাদের সঙ্গে সুভাষ রোড পরিদর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

এই ঘটনায় প্রশাসনিক মহলের বিরুদ্ধেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। বাঁকুড়া শহর ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর করুণাময় চঁদ বলেন, “গত ফেব্রুয়ারিতে মহকুমাশাসকের নির্দেশ পাওয়ার পনেরো দিনের মধ্যে সমস্ত ব্যবসায়ীরা রাস্তার উপরে গড়া নির্মাণ ভেঙে দিয়েছিলেন। আর তিন-চার মাস ধরে টাকা এসে পড়ে থাকলেও কাজটাই শুরু করতে পারল না পুরসভা ও পূর্ত দফতর? পূর্ত দফতরকে চিঠি দিয়েও তো পুরসভা ওই ধোঁয়াশা কাটিয়ে নিতে পারত।’’ তাঁদের অভিযোগ, এই ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে উন্নয়নের কাজে কে কতটা আগ্রহী!”

সুভাষরোডের ব্যবসায়ী মাধব দে, বসন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, “আজ আট-ন’মাস ধরে ঝুঁকি নিয়ে নালা পার হয়ে দোকানে ওঠা-নামা করছেন ক্রেতা থেকে ব্যবসায়ীরা। উন্নয়ন হবে সেই আশাতেই আমরা মহকুমাশাসকের নির্দেশ মেনে ছিলাম। কিন্তু আমাদের অসুবিধার কথা প্রশাসন ভাবল কোথায়?’’ প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

আবার অনেক জায়গায় ব্যবসায়ীদের ফের ভেঙে ফেলা অংশে ত্রিপলের ছাউনি টাঙিয়ে নীচে পসরা রাখাতে দেখা যাচ্ছে। ফলে রাস্তা সেই সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছে বলে ক্রেতারা অভিয়োগ তুলছেন। ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রশাসন কাজে নামলেই মালপত্র দোকানের ভিতরে সরিয়ে নেওয়া হবে।

এই পরিস্থিতিতে মহকুমাশাসক দুই দফতরকে নিয়ে আলোচনায় বসার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি পুরসভা ও পূর্ত দফতরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব। শীঘ্রই আলোচনায় বসে কোথায় সমস্যা হচ্ছে তা জানতে চাইব দু’পক্ষের কাছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Construction pavement
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE