Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
পরীক্ষাকেন্দ্র খুঁজতেও নাকাল

‘প্রশ্ন ফাঁস’ গুজবে বিভ্রান্তি

পরীক্ষা দিতে পথে বেরিয়ে একে বাসে জায়গা হচ্ছে না। তারই মধ্যে অনেকের মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ল ‘প্রশ্ন ফাঁস’। রাজ্য সরকারের স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ ডি-র পদে রবিবার পরীক্ষা ছিল। সকাল থেকে অনেকের হোয়্যাটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ে সেই পরীক্ষার ‘উত্তরপত্র’। তা নিয়েই ছড়ায় বিভ্রান্তি।

বাসের ভিতরে ঠাঁই নেই। ছাদেও গাদাগাদি স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার্থীরা। বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডে।নিজস্ব চিত্র

বাসের ভিতরে ঠাঁই নেই। ছাদেও গাদাগাদি স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার্থীরা। বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডে।নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার ও বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১১
Share: Save:

পরীক্ষা দিতে পথে বেরিয়ে একে বাসে জায়গা হচ্ছে না। তারই মধ্যে অনেকের মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ল ‘প্রশ্ন ফাঁস’। রাজ্য সরকারের স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ ডি-র পদে রবিবার পরীক্ষা ছিল। সকাল থেকে অনেকের হোয়্যাটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ে সেই পরীক্ষার ‘উত্তরপত্র’। তা নিয়েই ছড়ায় বিভ্রান্তি। তার উপরে এ বার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অত্যাধিক বেশি হওয়ায়, পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে অনেকেই নাকাল হন। পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে কোথাও প্রশাসনকে পথে নামতে হয়েছিল। যদিও স্কুল সার্ভিস কমিশনের পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ারম্যান শেখ সিরাজউদ্দিন বলেন, ‘‘পরীক্ষার আগে প্রশ্ন বেরিয়ে যাওয়ার কোনও খবর পাইনি। পরীক্ষা নির্বিঘ্নেই হয়েছে।’’

এ দিন সকাল থেকে পরীক্ষার প্রশ্ন বেরিয়ে গিয়েছে বলে গুজব ছড়ায়। হোয়্যাটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন ধরনের উত্তরপত্র। তা নিয়ে চরম বিভ্রান্তি তৈরি হয়। খবর যায় প্রশাসনের কর্তাদের কাছেও। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘এটা স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিষয়। তাঁরাই এ নিয়ে বলতে পারবেন।’’ যদিও জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, ওটি পুরোটাই গুজব। ওই উত্তরপত্র মেলেনি বলে শোনা যাচ্ছে। উত্তরপত্রগুলি কারা কী উদ্দেশ্যে ছড়িয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।

এ দিন সকাল থেকেই মানবাজারের বাসস্ট্যান্ডে কাতারে কাতারে পরীক্ষার্থী বাস থেকে নামছিলেন। তাঁদের দিকে প্রশ্ন ধেয়ে আসছিল— ‘‘বামনি স্কুলের পরীক্ষার্থী কে আছেন? মহড়া স্কুলে কার সিট পড়েছে? গাড়ি ছাড়ছে। এ দিকে আসুন।’’ এ ভাবেই শেষ মুর্হূতে আসা পরীক্ষার্থীদের খুঁজে পেয়ে ছোট গাড়িতে চড়িয়ে নির্দিষ্ট স্কুলে পৌঁছে দেওয়া হল। মানবাজার ১ বিডিও এবং থানার ওসি এ দিন বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থেকে এ ভাবেই পরীক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ালেন।

পুরুলিয়ার লধুড়কা গ্রামের চিন্ময় রায় বলেন, ‘‘সকাল আটটায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। ভাবতে পারিনি রবিবার ছুটির দিনেও বাসে এত ভিড় হবে। শেষ পর্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে বাসের মাথায় চড়ে সাড়ে ১১টায় মানবাজার বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাই। এসে শুনি, এখান থেকে পরীক্ষা কেন্দ্র প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে। বেলা ১২টা থেকে পরীক্ষা। কী ভাবে সেখানে ওই সময়ের মধ্যে পৌঁছব ভেবে পাচ্ছিলাম না।’’ শেষ পর্যন্ত প্রশাসন থেকে তাঁকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। বিডিও (মানবাজার ১) সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘মানবাজার শহর থেকে যে সব পরীক্ষাকেন্দ্রে বাসের যোগাযোগ নেই, সেখানে পরীক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এরপরেও বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী দেরিতে আসায় ছোট গাড়িতে করে তাঁদের পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়।’’

হুড়া থানার বিশকুদরা গ্রাম থেকে তিন পরীক্ষার্থী বাসে উঠতে না পেরে ভাড়া গাড়িতে মানবাজারে আসেন। তখন বেলা পৌনে ১২টা। তাঁদের মধ্যে বিশ্বজিৎ মান্ডি বলেন, ‘‘পরীক্ষাকেন্দ্র বারি শশীভূষণ হাইস্কুল মানবাজার থানা এলাকায় হলেও বাস কর্মীরা জানালেন সেখানে ছোট গাড়ি ভাড়া করে গেলেও পৌঁছতে প্রায় এক ঘণ্টা লেগে যাবে। অত দেরিতে গিয়ে কী আর হবে!’’ তাঁদের আর পরীক্ষায় বসা হল না। পুরুলিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘রবিবার ওই পরীক্ষার জন্য আমরা বিভিন্ন রুটে বাড়তি বাস চালিয়েছি। জেলা প্রশাসনও কিছু সরকারি বাসের ব্যবস্থা করেছিল। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।’’ তিনি জানান, পরীক্ষা দেওয়ার পরে বিকেলের দিকে বাড়ি ফেরার যোগাযোগ নিশ্চিত করতে এ দিন দেরিতে বাস ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

বান্দোয়ানে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের সহযোগিতায় তৃণমূলের যুব সদস্যেরাও রাস্তায় নেমেছিলেন। তৃণমূলের ব্লক যুব সভাপতি জগদীশ মাহাতো বলেন, ‘‘আমাদের দলের কর্মীরা বিভিন্ন রাস্তার বাঁকে দিক নির্দেশের চিহ্ন লাগিয়ে জলের বোতল, চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসেছিলেন। কর্মীরা রাস্তার হদিস বাতলে দেওয়ায় পরীক্ষার্থীদের সময় বেঁচেছে।’’

পরীক্ষা ঘিরে বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডেও হুলস্থূল কাণ্ড বাধে। বাসের ভিতর থেকে ছাদ— সর্বত্রই ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই অবস্থা। বাসের পিছনের সিঁড়িতে ভিড় দেখে কেউ কেউ আবার জানলা দিয়ে ছাদে ওঠার চেষ্টা করলেন। তাঁদের সামাল দিতেই হিমশিম অবস্থা কন্ডাক্টর ও চালকদের। বিষ্ণুপুর রামানন্দ কলেজে ৯০০ পরীক্ষার্থীর আসন পরেছিল। কলেজের অধ্যক্ষা স্বপ্না ঘোড়ুই বলেন, ‘‘আমরা একটি বেঞ্চে তিন জন পরীক্ষার্থী বসিয়ে অবস্থা সামলেছি।’’ বিষ্ণুপুরে রামানন্দ কলেজ ছাড়াও বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মিশন স্কুল, কৃত্তিবাস উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র হয়েছিল।

স্কুল সার্ভিস কমিশনের পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও দুই মেদিনীপুর জেলায় এ দিন মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ৪ লক্ষ ৬৬ হাজার ১৬৯ জন। ৮৬৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। পরীক্ষা নির্বিঘ্নেই হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Question paper Leak SSC Group D
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy