গুলের উনুন তৈরি করছেন লালা কাহার। বোলপুরে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
নতুনের মোড়কে আবার ফিরে এসেছে পুরাতন। বোলপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রেই দেদার বিকোচ্ছে বিলুপ্তপ্রায় গুল, ঘুঁটের তোলা উনুন। তবে অতীত রোমন্থন নয় বরং রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি থেকে রেহাই পেতেই এই পথ বেছে নিচ্ছেন গৃহস্থ থেকে ক্ষুদ্র দোকানদার সকলেই।
পেট্রোপণ্যের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধিতে মাথায় হাত পড়েছে মধ্যবিত্ত গৃহস্থ পরিবারে। পরিবহনের খরচা বাড়ার ফলে দাম বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় আনাজ থেকে জিনিসপত্র— সবকিছুরই। এর উপরে রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ার ফলে খাবার এখন প্রকৃত অর্থেই অগ্নিমূল্য। এই পরিস্থিতিতে বিকল্পের খোঁজ করা ছাড়া আর বিশেষ উপায় নেই। সেই বিকল্পেরই সন্ধান পাওয়া গেল বোলপুরে। বোলপুর স্টেশন সংলগ্ন চৌরাস্তা মোড়ে উনুনের পসরা সাজিয়ে বসে থাকতে দেখা গেল লালা কাহারকে। একইসঙ্গে তৈরি উনুনের পাশাপাশি একাগ্র চিত্তে নতুন উনুন বানানোরও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন লালা। তিনি বললেন, ‘‘গ্যাসের দাম হাজার ছোঁয়ায় হঠাৎই যে পরিমাণ উনুনের চাহিদা বেড়েছে, তাতে জোগান দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।’’
টিন বা অ্যালুমিনিয়াম প্লেটের তৈরি এই উনুনগুলিতে ঘুঁটে, গুল বা কয়লা ব্যবহার করে রান্না করলে খরচ অনেকটাই কম হয়, সেই ভাবনা থেকেই গ্যাসের পরিবর্তে উনুনের দিকে ঝুঁকছেন একটা বড় সংখ্যার মানুষ। বিশেষত, যাদের বাড়িতে মাটির উনুন বানানোর মতো ফাঁকা জায়গা নেই, তাঁরাই এর প্রধান খরিদ্দার। আর সঙ্গে রয়েছেন চা বা জলখাবারের ছোট দোকানদারেরাও। কয়েক দশক আগেও শহরের রাস্তায় উনুন বিক্রি খুব স্বাভাবিক চিত্র ছিল, কিছু বছর আগে পর্যন্ত গ্রামেও দেদার বিক্রি হতো মাটির উনুন। কিন্তু পেট্রোলিয়াম গ্যাসের প্রভূত ব্যবহার এবং বাড়িতে বাড়িতে গ্যাসের পরিষেবা পৌঁছে যাওয়ার ফলে শহরে তো বটেই এমনকি গ্রামাঞ্চলেও উনুনের ব্যবহার এক প্রকার হারিয়েই যেতে বসেছিল। কিন্তু একপ্রকার বাধ্য হয়েই সেই অভ্যাসেই আবার ফিরে আসতে শুরু করেছেন অনেকেই।
বোলপুর সংলগ্ন বারোকাহিনা গ্রামের বাসিন্দা মিঠুরাণী পাত্র বলেন, “গ্যাসের ব্যবহার আমরা একরকম বন্ধই করে দিয়েছি। বাড়ির উঠোনেই মাটির উনুন বানিয়ে রান্নার কাজ চলছে। মাঝে মধ্যে খুবই প্রয়োজন হলে গ্যাস ব্যবহার করি, তবে দাম আয়ত্তের মধ্যে না এলে তাও বন্ধ করে দিতে হবে।” বোলপুরের সুবোধ দাসেরও বক্তব্য একই। শান্তিনিকেতনের রতনপল্লি এলাকায় ছোট খাবারের দোকান চালান তিনি। সুবোধবাবু বলেন, “গ্যাসের দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে আমাদেরও প্রতি সপ্তাহে খাবারের দাম বাড়াতে হবে। কিন্তু তা তো কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। ক্রেতা পাব না। তাই সব দিক বজায় রাখতে এখন গ্যাস ছেড়ে উনুনেই রান্না করছি। সময় লাগছে, গরমে কষ্ট হচ্ছে অনেক বেশি, কিন্তু এই ছাড়া কোনও উপায়ও নেই।”
এ ভাবে যথেচ্ছ গুলের উনুন ব্যবহার করলে যে পরিবেশের দূষণ অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে, তা জানেন সকলেই। কিন্তু তাদের বক্তব্য, দূষণ কমাতে হলে গ্যাসের দামও সাধ্যের মধ্যে রাখতে হবে। সরকারের এ ভাবে বারবার গ্যাসের দাম বাড়ানো থেকেই পরিষ্কার যে তারা দূষণ নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy