প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমী ঝঞ্ঝার গুঁতোয় দিন কয়েক নিজেই কাবু ছিল শীত। সোমবার বড়দিনের সকালে তো বটেই, দিন কয়েক হল ফের গা ঝাড়া গিয়েছে সে। সকাল থেকেই শীতের কামড় টের পেয়েছেন জেলাবাসী। অধিকাংশ স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। ছুটি অফিস, আদালতে। সোমবার সকাল থেকেই ঝকঝকে রোদের সঙ্গে হিমেল হাওয়ার পরশ মেখে জমজমাট ছুটির মেজাজে জেলাবাসী।
কেউ জমিয়ে বড়দিন পালন করলেন। কেউ বেড়িয়ে পড়লেন শান্তিনিকেতনে পৌষমেলার উদ্দেশ্যে। কেউবা তারীপীঠ বা অন্যত্র ছুটি কাটাতে। তবে এ সবের মধ্যে বাদ গেল না পছন্দের ‘স্পট’ দেখে পিকনিকে আসর জমানো। উদর-পূর্তি না হলে কী শীত জমে। বড়দিনের টানা কয়েক দিন ছুটি উপলক্ষে জেলার পিকনিক স্পটগুলিতে বেশ ভিড় জমে। এ বারও অন্যথা হয়নি।
দুবরাজপুরের বক্রেশ্বর ধামেই শ’খানেক গাড়ি এসে জুটেছিল সোমবার। অধিকাংশের উদ্দেশ্য গরম জলে স্নান করে বক্রেশ্বর নদী ঘেঁষে পিকনিকের আনন্দে মেতে উঠা। অল্পবিস্তর ভিড় ছিল দুবরাজপুরে অপর একটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পট পাহাড়েশ্বর মামাভাগ্নে পাহাড়ে। সামান্য কিছু পিকনিক পার্টি গিয়েছিল বক্রেশ্বর জলাধার নীলনির্জনে। কয়েক’টি পরিবারকে একত্রে পিকনিক করতে দেখা গিয়েছে, ময়ূরাক্ষী ঘেঁষা ভাণ্ডিরবন ও রাইপুরে। একই চিত্র সিউড়ির খাটঙ্গার ধান্য গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কুশকর্ণিকা নদীর ধারে। তবে অন্যবার সিউড়ির তিলপাড়া জলাধারে চড়ুইভাতির আসর বসলেও, এ বার তেমন জমাট ছবি ধরা পড়েনি।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব পিকনিক স্পটের কদর বেশি, সেখানে প্রতিবারই ছোটখাট গোলমাল লেগে থাকে। খুচখাচ মারপিটের ঘটনাও ঘটেছে অতীতে। সে দিকে তাকিয়ে এ বার সতর্ক সদর মহকুমার পুলিশ-প্রশাসন। পুলিশ কর্তাদের কথায়, ‘‘শহরের মধ্যে থাকা পার্ক ও পিকনিক স্পটে সিভিক ভলান্টিয়াদের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোনও বেচাল দেখলেই আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’ প্রকাশ্যে মদ্যপান করা নিয়ে যাতে কোনও গোলমাল না হয়, তাই প্রকাশ্যে মদ্যপানের উপরে নিষেধাজ্ঞা থাকছে। জেলা প্রশাসনের তরফেও পিকনিক পার্টির সদস্যদের কাছে আবেদন, যেখানে সেখানে নোংরা না ফেলতে, সাউন্ডবক্স নির্দিষ্ট শব্দসীমার মধ্যে রেখে বাজাতে। সর্বোপরি বিপজ্জনক ভাবে নিজস্বী না তুলতে।
রবিবার থেকেই কার্যত ছুটির মরসুম। বক্রেশ্বর ও পাহাড়েশ্বরে পিকনিকে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষ। সেই কারণেই নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। সোমবার বক্রেশ্বরে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। পুলিশি ব্যবস্থা ছিল পাহাড়েশ্বরেও। দুবরাজপুরের পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘যাঁরা পাহাড়েশ্বরে আসছেন, তাঁরা আমাদের অতিথি। তাঁদের সুবিধা অসুবিধা দেখার দায়িত্ব আমাদের। সেই জন্য দুবরাজপুর থানার কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। রয়েছেন পুরকর্মীরা। তবে অতিথিদের কাছেও আবেদন, তাঁরা যেন কোনও ভাবেই একে অপরের শান্তিভঙ্গ না করেন।’’
বক্রেশ্বরে মূল মন্দির ও উষ্ণ প্রস্রবন সংলগ্ন এলাকায় পিকনিকের তেমন জায়গা না থাকায় সবাই প্রায় নদের ধারে পিকনিক করেন। আগত পিকনিক পার্টিদের অধিকাংশের অভিযোগ নদীর ধার এত অপরিচ্ছন্ন, চারদিকে এতো আবর্জনা যে সঠিক জায়গা বেছে নেওয়াই কষ্টকর। বিষয়টি দেখুক স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং উন্নয়ন পর্যদ। বক্রেশ্বর উন্নয়ন পর্যদের চেয়ারম্যান তথা সিউড়ির বিধায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এলাকায় কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পরিকল্পনা নিয়েছি। তবে শীতের মরসুমে যখন প্রচুর মানুষ এখানে আসছেন, তাঁদের কথা ভেবে দ্রুত কয়েক’টি ভ্যাট গড়ে নিয়মিত আবর্জনা পরিষ্কারে উদ্যোগী হচ্ছি।’’
একই ভাবে পাহাড়েশ্বরে মামাভাগ্নেতে পিকনিক করতে আসা অধিকাংশ পার্টির অভিযোগ, পানীয় জল রয়েছে, প্রাকৃতিক পরিবেশ বেশ ভাল কিন্তু নোংরা এখানেও। চারিদিকে থার্মোকলের পাতা, মদের বোতল পড়ে। সোমবার স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে পাহাড়েশ্বরে চড়ুইভাতি করতে আসা এক শিক্ষিকার কথায়, ‘‘যে টানে এখানে আসা, সেই মামা-ভাগ্নে দেখতে যাওয়ার পথটাই আবর্জনায় ভর্তি। পুরসভা অন্তত দেখুক বিষয়টি।’’ দুবরাজপুরের পুরপ্রধান বলছেন, ‘‘আমরা উচ্ছিষ্ট, আবর্জনা— সবই লোক লাগিয়ে তুলে নিই। রাস্তা, পরিচ্ছন্ন রাখতে সাধ্যমতো আরও চেষ্টা করছি।’’
পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। রয়েছে শৌচালয়ের সমস্যা। কিন্তু, নীল শান্ত জলাশয়ের টানে বছরের শেষ সপ্তাহে পিকনিকের ধুম বাড়ে বক্রেশ্বর নীলনির্জনেও। কিন্তু, নজরদারির অভাবে পিকনিক দলগুলির মধ্যে নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা, হাতাহাতি লেগেই থাকে। সাদাইপুর থানার পুলিশ বলছে, ‘‘এই বিষয়টি আমরা এ বার খেয়াল রাখব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy