নেপাল সূত্রধর। নিজস্ব চিত্র
আশির দশকের গোড়ার দিকে চড়িদা গ্রামের ছৌশিল্পী গম্ভীর সিং মুড়ার হাত ধরে প্রথম ‘পদ্মশ্রী’ আসে বাঘমুণ্ডির এই গ্রামে। বছর দুয়েক পরে ১৯৮৩-এ বরাবাজারের আদাবনা গ্রামের ছৌশিল্পী নেপাল মাহাতো ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত হন। তার পরে টানা ৪১ বছরের খরা কাটিয়ে ফের চড়িদার ছৌশিল্পী নেপাল সূত্রধরের হাত ধরে ‘পদ্ম সম্মান’ এল পুরুলিয়ার ঘরে। যদিও সম্মানপ্রাপ্তির খবর পেলেন না শিল্পী। গত বছরের নভেম্বরে ৮৩ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।
শিল্পীর বড় ছেলে কাঞ্চন বলেন, “গত বছর জুনে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে বাবা দিল্লি গিয়েছিলেন একটি কর্মশালায় যোগ দিতে। ফিরে এসে বলেছিলেন, ‘দেখবি এ বারে হয়তো আমি পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হব।’ কিন্তু কী পুরস্কার বুঝিনি। ভেঙেও কিছু বলেননি। প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের দিন টিভিতে পুরস্কার পাওয়ার কথা জানতে পারি।” দীর্ঘশ্বাস ফেলে শিল্পীর স্ত্রী সুন্দরাও বলেন, “মানুষটা বেঁচে থাকলে আজ কত খুশি যে হতেন!”
শৈশবে ঠাকুরদা সৃষ্টিধর, বাবা যোগিন্দরের কাছে মুখোশ তৈরিতে হাতেখড়ি নেপালের। তাঁর মা সুচিত্রা ছিলেন ছৌশিল্পী। কাঞ্চনের কথায়, “ছৌশিল্প ছিল ঠাকুমার রক্তে। বাড়িতে ছৌয়ের আখড়া হত। গম্ভীর সিংয়ের দলের আখড়াও বসত আমাদের উঠোনেই। সেই ছোট বয়সে ধামসার বোল শুরু হতে বাবার মধ্যে কেমন শিরশিরানি হত। তার পর এক দিন ভিড়েই গেলেন গম্ভীর সিংয়ের দলে।”
পুথিগত বিদ্যা বলতে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়েছিলেন। তবে শিল্পসত্তা দিয়ে জয় করেছেন দেশ-বিদেশের দর্শকদের মন। গম্ভীর সিংয়ের দলের সঙ্গে কলকাতা পর্যন্ত গিয়েও বিদেশে যেতে না পারার আক্ষেপ থেকে জেদ চেপেছিল বিদেশে গিয়ে নাচ দেখাবেন। কাঞ্চন বলেন, “গম্ভীর সিং মুড়ার দলে তখন বাবা নিয়মিত নাচছেন। তিরিশ-পঁয়ত্রিশ জনের দল। আমেরিকা যাবে অনুষ্ঠান করতে। কিন্তু এত জন শিল্পীর সেখানে যাওয়ার অনুমতি নেই। যেতে না পেরে ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল বাবার। দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘অন্য দলের সঙ্গী হয়ে নয়, নিজের নৃত্যশৈলীর পরিচয়ে বিদেশ যাব।”
কথা রেখেছেন শিল্পী। এর কয়েক বছর পরে স্পেন থেকে প্রথম বিদেশ সফর শুরু নেপালের। এর পরে একে একে আমেরিকা, স্কটল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড-সহ নানা দেশে ছৌমুখোশ তৈরির কর্মশালা বা নৃত্য প্রদর্শনের জন্য ঘুরেছেন তিনি। কাঞ্চন জানান, নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে ২৫ ফুটের রাবণ তৈরি করেছিলেন নেপাল। তাঁর তৈরি রাম-লক্ষ্মণ-সীতার মূর্তি আজও শোভা পাচ্ছে আমেরিকার একটি মিউজিয়ামে।
নেপালের মেয়ে পূর্ণিমার কথায়, “সে বারই আমেরিকায় গিয়ে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। প্রবাসে বেশ কিছু দিন থাকার জন্য বাড়ির জন্য মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। মূর্তি তৈরির কাজ অসম্পূর্ণ রেখে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। সে সময়ে আমাদের আর্থিক অবস্থাও ভাল ছিল না। পরে, বাবার লেখা চিঠি ও কিছু টাকাপয়সা নিয়ে দু’জন বাড়ি এসেছিলেন। পুরস্কার হাতে পেলে খুব খুশি হতেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy