প্রতীকী ছবি
গরিব মা ও শিশুদের মুখের গ্রাসে অন্তরায় জাত-পাতের ব্যাধি— এমনই ঘটনা ঘটল খয়রাশোলে।
দীপ্তি দাস, জাতিতে ‘নিম্ন বর্ণের’। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, খয়রাশোলের পারশুণ্ডী গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা তিনি। অভিযোগ, তিনি রান্না করায় ‘উচ্চ বর্ণের’ কেউ খাবার নিচ্ছেন না।
কয়েক দিন এমন চলতে থাকায় সমস্যা মেটাতে আসরে নামতে হল প্রশাসনকে। মঙ্গলবার ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে গিয়েছিলেন খয়রাশোলের বিডিও সঞ্জয় দাস, কাঁকরতলা থানার ওসি জহিদুল ইসলাম। গ্রামবাসীদের বুঝিয়েছেন অনেক। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তার পরেও সমস্যা ১০০ শতাংশ মিটেছে বলা যাচ্ছে না।
ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র সূত্রে খবর, বুধবার ওই কেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল প্রসূতি, গর্ভবতী ও শিশুদের জন্য রান্না করা হলেও, কয়েকটি পরিবার সেই খাবার নিতে চাইছেন না। বিডিও জানিয়েছেন, যে সব মহিলা তাঁর এবং শিশুর জন্য বরাদ্দ খাবার নিচ্ছেন না, তাঁদের স্বামীদের সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই পরিবারগুলিকে কাউন্সেলিং করানো হবে। পুজো পেরিয়ে গেলে এই বিষয়ে সচেতনতা শিবির করা হবে ওই গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পারশুণ্ডী গ্রামে ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে গ্রামের ‘উচ্চবর্ণ’দের পাড়ায়। তবে ওই কেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল গ্রামের দাসপাড়াও। নির্ভরশীল শিশু, প্রসূতি, গর্ভবতী মিলিয়ে প্রায় ১৫০ জন। অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে প্রায় ৪৭ জন খাবার নিচ্ছিলেন না সাত দিন ধরে। আপত্তির কারণ জাত-পাত।
ওই কেন্দ্রের কর্মী সন্ধ্যা বর্মন জানিয়েছেন, আগে ওই কেন্দ্রে কোনও স্থায়ী কর্মী বা সহায়িকা ছিলেন না। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অন্য কেন্দ্রের কর্মী তা চালাচ্ছিলেন। ১৯ সেপ্টেম্বরের সন্ধ্যাদেবী কর্মী হিসেবে এবং দীপ্তি দাস সহায়িকা হিসেবে ওই কেন্দ্রে যোগ দেওয়ার দিনতিনেক পর থেকেই সমস্যার সূত্রপাত।
অভিযোগ, জাত নিয়ে আপত্তি তুলে ওই পাড়ার অধিকাংশ ‘উচ্চবর্ণের’ মায়েরা খাবার নিচ্ছিলেন না। তাঁদের ছেলেমেয়েদেরও তা খেতে দিচ্ছিলেন না। কর্মী-সহায়িকাকে বলা হয়েছিল, কাঁচা ডিম তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। কর্মী বলছেন, সে কথাই দফতর ও প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। সমস্যা মেটাতে এসেছিলেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা।
তবে এ নিয়ে এখনও অনড় কয়েকটি পরিবার। তাঁদের কথা, ‘‘কেন নিচু জাতের হাতের রান্না খাব?’’
খয়রাশোলের সিডিপিও অনুপম বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘‘মঙ্গলবার বৈঠক থাকায় যেতে পারিনি। সুপারভাইজর গিয়েছিলেন। কোনও ভাবেই জাতপাতের বিষয়কে প্রশ্রয় বা অন্যায় দাবি মানা হবে না, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
তবে জাতপাতের সমস্যা থাকলেও, পুরো ঘটনা এত বড় হয়ে ওঠার পিছনে অন্য কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য তৈরি ভবনের একটা ঘর ‘দখল’ করার অভিযোগ ছিল স্থানীয় একটি ক্লাবের বিরুদ্ধে। সেখানে বিসর্জনের পরে সরস্বতী পুজোর কাঠামো রাখা ছিল। একটি ঘরেই চলত কেন্দ্র। আগে যিনি অস্থায়ী ভাবে রান্না করছিলেন, ঘর দখল করে রাখলেও ক্লাবের সদস্যদের কিছু বলেননি। ঘর দখলের বিষয়টি প্রশাসনের কানে পৌঁছয়নি। কিন্তু স্থায়ী কর্মী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই ওই ঘরের দখল নিয়ে নেন সন্ধ্যাদেবী। সেটাই জাতপাতের কথা খুঁচিয়ে তোলার কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন প্রশাসনের আধিকারিকেরা। ওই ক্লাবের সদস্যদের তরফে এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
তবে বিডিও, ওসি ক্লাব সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যপারে তাঁদের সতর্ক করেছেন। বিডিও বলেছেন, ‘‘ওই কেন্দ্রের দখল করে রাখা ঘরে ক্লাবের নাম লেখা ছিল। আমি সেটা মুছে কেন্দ্রটিকে সাদা রঙ করানোর ব্যবস্থা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy