এক অন্তঃসত্ত্বা বধূর মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠল বাঁকুড়ার রাইপুরে। ওই বধূর পরিজনদের অভিযোগ, স্বামী ছাড়া অন্য অভিযুক্তদের কেন ধরা হচ্ছে না জানতে চাইলে থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘শ্রাদ্ধশান্তিটা আগে হয়ে যাক।’’ এর পরেই, বুধবার পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হন তাঁরা। বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয় আরও দু’জনকে।
শ্রাদ্ধশান্তি হওয়ার পরে অভিযুক্তদের ধরা হবে— এমন কথা কি বলতে পারে পুলিশ? বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘এমনটা হওয়ার কথা নয়। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ তবে রাইপুর থানার অভিযুক্ত এসআই পীযূষ পাল এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬ জুন গভীর রাতে রাইপুরের পোদ্দারপাড়া এলাকার বধূ ঝিমু ওরফে শিবানী দত্তের (৩৩) ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় শ্বশুরবাড়ির রান্নাঘর থেকে। তিনি ছ’মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা ছিলেন। ৮ জুন দিদি অপর্ণা কর মোদক রাইপুর থানায় ঝিমুর স্বামী সুবোধ দত্ত, শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ, নন্দাই ও ভাসুরের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত পণের দাবিতে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়েই সুবোধকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি এখন জেল হেফাজতে রয়েছেন।
এ দিকে, স্বামী ছাড়া অন্য অভিযুক্তদের কেন ধরা হচ্ছে না তা জানতে থানায় ফোন করলে পুলিশ গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ ঝিমার পরিবারের। তাঁদের দাবি, তদন্তকারী আধিকারিকের সঙ্গে ফোনে কথোপকথনের রেকর্ড রয়েছে। পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হওয়ার পরেই অবশ্য লক্ষ্মীসাগর থেকে গ্রেফতার করা হয় ঝিমুর ননদ সোমা ওরফে শ্যামা পাল ও নন্দাই গঙ্গাধর পালকে। কিন্তু ওই বধূর শ্বশুর, শাশুড়ি-সহ আরও তিন জন অভিযুক্ত এখনও অধরা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিজনেরা।
অপর্ণা জানান, তিন বছর আগে লক্ষাধিক টাকা ও জিনিসপত্র যৌতুক দিয়ে ঝিমুর সঙ্গে রাইপুরের গয়না ব্যবসায়ী সুবোধের বিয়ে হয়। বাড়তি পণের দাবিতে ঝিমুর উপরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন অত্যাচার চালাত। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, অন্তঃস্বত্ত্বা হওয়ার পরে তাঁর চিকিৎসার খরচের জন্য ঝিমুকে খোঁটা দিতেন সুবোধ। বাপের বাড়ি থেকে তিরিশ হাজার টাকা আনার জন্য চাপও দিচ্ছিলেন। অপর্ণা বলেন, “গত ৫ জুন সুবোধ আমাদের ফোন করে জানায়, বোনের খুব বাড়াবাড়ি অবস্থা। খবর শুনে আমাদের আত্মীয়েরা গিয়ে দেখেন, বোন ঠিক রয়েছে। পরের দিন, ৬ জুন রাতে ফোন করে জানায় বোন মারা গিয়েছে।”
পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে ঘটনাটিকে শ্বশুরবাড়ির লোকের নির্যাতনের জেরে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করেছেন অপর্ণা। যদিও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগে ওই ঘটনাকে খুন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দু’টি অভিযোগে ফারাক কেন? অপর্ণা বলেন, “খুনের কথা বলা হলেও রাইপুর থানার আইসি সেই অভিযোগ নিতে চাননি। আইসির চাপেই খুনের বদলে আত্মহত্যা লিখতে বাধ্য হয়েছিলাম।” যদিও রাইপুর থানা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় ৩০৪ বি ধারায় পণের জন্য বধূর মৃত্যুর অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে।
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বধূর দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেলেও তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অ্যাসিডে পোড়ার চিহ্ন মিলেছে। মৃতার পরিবারের দাবি, ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর পা বাঁধা ছিল। পুলিশ সেটা খুলে দেয়। যদিও পুলিশের দাবি, বধূর শাড়িই তাঁর পায়ে জড়িয়ে ছিল। অভিযুক্তদের ইচ্ছে করে গ্রেফতার না করার যে অভিযোগ উঠেছে তা অবশ্য মানতে চায়নি পুলিশ। ঘটনার তদন্তকারী আধিকারিক পীযূষ পাল বলেন, “তদন্ত চলছে। অভিযুক্তেরা ফেরার।”
এ দিন চেষ্টা করেও ওই বধূর শ্বশুর শাশুড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। পড়শিরা ঘটনাটি নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে নারাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বধূর শ্বশুরবাড়ির এক আত্মীয় দাবি করেন, “খুনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। গর্ভস্থ সন্তানকে নিয়ে কিছু আশঙ্কা থেকে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন ঝিমু।’’ তাঁর দাবি, অবসাদের জেরেই আত্মহত্যা করেছেন ওই বধূ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy