Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
তরুণীর দেহ উদ্ধার দুবরাজপুরে
Crime Cases

‘খুন করেছি’ দাবি করে থানায় হাজির ‘প্রেমিক’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার ভোরে দুবরাজপুরের হেতমপুর ঠাকুরপাড়ার একটি বাড়ি থেকে মিতা দাস (১৮) নামে ওই তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়।

শোক: মেয়ের দেহের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাবা। নিজস্ব চিত্র

শোক: মেয়ের দেহের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাবা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২০ ০১:৫৮
Share: Save:

তরুণীর দেহ উদ্ধার হল বীরভূমের দুবরাজপুরে। তাঁর ‘প্রেমিক’ আত্মসমর্পণ করল পশ্চিম বর্ধমানের ফরিদপুর (লাউদোহা) থানায়। লাউদোহা থানা এলাকার বাসিন্দা মিলন বাদ্যকর নামে ওই যুবক রবিবার বিকেলে তাঁর ‘প্রেমিকা’কে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে নিয়ে আসে দুবরাজপুরে, এক আত্মীয়ের বাড়িতে। পুলিশের দাবি, সোমবার সকালে আত্মসমর্পণ করে মিলন দাবি করে, সে তার ‘স্ত্রী’-কে খুন করেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার ভোরে দুবরাজপুরের হেতমপুর ঠাকুরপাড়ার একটি বাড়ি থেকে মিতা দাস (১৮) নামে ওই তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়। একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর বাড়ি ফরিদপুর (লাউদোহা) থানা এলাকার গৌরবাজারের তাঁতিপাড়ায়।
রবিবার বিকেলে গৌরবাজার লাগোয়া শ্রীকৃষ্ণপুর তুষকুটি থেকে মিলন ও মিতা হেতমপুরে মিলনের তুতো দাদা শোভন ডোমের বাড়িতে উঠেছিল। এ দিন সকালে তরুণীর দেহ মিললেও মিলনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।

দুবরাজপুর থানা সূত্রের খবর, দেহ উদ্ধারের কিছুক্ষণের মধ্যেই জানা যায় মিলন ফরিদপুর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে। এ দিন দুপুরের দিকে পুলিশ তাকে দুবরাজপুরে নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদের পরে গ্রেফতার করে। তবে নিহত তরুণীর পরিবারের তরফে সোমবার পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। তবে পুলিশের দাবি, জেরায় তাদের কাছে, মিতাকে খুনের কথা মিলন কবুল করেছে। এ-ও জানিয়েছে, রবিবার তারা মন্দিরে বিয়ে করেছিল। এ দিন মেয়ের দেহের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে মিতার বাবা নিমাই দাস বলছিলেন, ‘‘পালালই যখন, তা হলে মেয়েটাকে মারল কেন! মেয়েকে দাহ করেই ওর নামে লিখিত অভিযোগ করব।’’

মিতার পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, পাশের গ্রামের যুবক মিলনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বেশ কিছুদিনের। মিতার বাবা দিনমজুর। মেয়ের সঙ্গে মিলনের সম্পর্ক মেনে নেয়নি পরিবার। তবু নবম শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই একবার পালিয়েছিল দু’জনে। সেবার পুলিশ নাবালিকা মিতাকে উদ্ধার করে বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিল। ধমক খেয়েছিল মিলন।
নিমাইবাবুর দাবি, ‘‘এর পরেও যে ওদের মধ্যে সম্পর্ক টিকে ছিল টের পাইনি।’’ তবে সম্পর্ক যে ছিল, তা মিলন-মিতার রবিবার ফের পালিয়ে যাওয়াতেই স্পষ্ট বলে তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হেতমপুর ডোমপাড়ার বাসিন্দা কার্তিক ডোমের দিদির ননদের ছেলে মিলন। কার্তিকদের পাকা বাড়ি নেই। তাঁর ছেলে শোভন, বৌমা ও বছর পাঁচেকের নাতি ঠাকুরপাড়ার ভবানী চট্টোপাধ্যায়ের খামার বাড়িতে থাকেন। মিতাকে সঙ্গে নিয়ে মিলন সেই খামার বাড়িতেই উঠেছিল। খড়ের ছাউনি মাটির বাড়ির কোঠায় ভাই ও ভাইয়ের ‘স্ত্রী’-কে রাতে থাকতে দিয়েছিলেন শোভন। সকালে উঠে দাদা শোভন দেখেন, যে স্কুটিতে করে দু’জনে এসেছিল, সেটা নেই। দরজা খোলা। কোঠার উপরে গিয়ে দেখেন মিতার নিথর দেহ মেঝেয় পড়ে। মিলন নেই। শোভনই পড়শি ও পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শোভন, তাঁর স্ত্রী ও বাবা কার্তিককে নিয়ে যায়। দুপুরের দিকে তরুণীর দেহের সুরতহাল করতে দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালে যান বিডিও (দুবরাজপুর) অনিরুদ্ধ রায়। দুঃসংবাদ পেয়ে দুবরাজপুরে ছুটে আসেন মিতার বাবা ও পড়শিরা। তাঁরা জানান, রবিবার ভোর থেকেই মিতা নিখোঁজ ছিলেন। অনেক খুঁজেও তাঁর সন্ধান মেলেনি। নিমাইবাবুর কথায়, ‘‘তখনই মনে হয়েছিল, মিলনের সঙ্গে পালিয়েছে। সকালে ফরিদপুর থানা থেকে খবর পাই, ও আমার মেয়েকে
মেরে দিয়েছে।’’

হেতমপুরে যে আত্মীয়ের বাড়িতে দু’জনে উঠেছিল, তাঁদের দাবি , মিতার হাতে শাঁখা পলা ও সিঁথিতে সিঁদুর ছিল। নিমাইবাবু যদিও বলছেন, ‘‘বাজে কথা। ওরা বিয়ে করেনি। মেয়ের মত নিয়েই অন্যত্র বিয়ে ঠিক করেছিলাম। আষাঢ়েই বিয়ে ছিল। তার আগেই সব শেষ!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Cases Murder Dubrajpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy