ঘটনার পর চাঞ্চল্য বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী আবাসে। —নিজস্ব চিত্র।
নিরাপত্তারক্ষীর চোখ এড়িয়ে সটান মেয়েদের হস্টেলে ঢুকে পড়লেন এক যুবক! শুধু ঢুকে পড়াই নয়, হস্টেলের দোতলায় উঠে শৌচালয়ে লুকিয়ে রইলেন! ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। পরে এক আবাসিক শৌচালয়ে ওই যুবককে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেললে ছাত্রী-আবাসে আতঙ্ক ছড়ায়। আরজি কর-কাণ্ডের মাঝেই শুক্রবার রাতে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকা জুড়ে। রাতে অধ্যক্ষকে ঘিরে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন আবাসিকেরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর ছুটি থাকায় কলেজের মেয়েদের হস্টেলের অধিকাংশ আবাসিকই বাড়ি চলে গিয়েছেন। হাতেগোনা কিছু আবাসিক আপাতত হস্টেলে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় নিরাপত্তারক্ষীর চোখ এড়িয়ে আচমকাই এক যুবক হস্টেল চত্বরে ঢুকে পড়েন। চত্বর পেরিয়ে সটান উঠে যান ছাত্রী-আবাসের ওল্ড বিল্ডিং-এর দোতলায়। এর পর আবাসিকদের নজর এড়াতে দোতলার একটি শৌচালয়ে লুকিয়ে পড়েন তিনি। কিছু ক্ষণ পরে এক আবাসিক চিকিৎসক পড়ুয়া শৌচালয়ে গেলে ওই যুবককে শৌচালয়ের ভিতরে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান। আতঙ্কে চিৎকার করতে শুরু করে দেন ওই ছাত্রী। চিৎকার শুনে হস্টেলের অন্য আবাসিকেরা ঘটনাস্থলে ছুটে এলে যুবক ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে শৌচালয়ের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেন। পরে আবাসিকেরাই পুলিশে খবর দিলে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ এসে শৌচালয় থেকে ওই যুবককে আটক করেছে। ধৃত যুবকের পরিচয় জানার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। কেন ওই যুবক হস্টেলে ঢুকেছিলেন, তা জানারও চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
হস্টেলের আবাসিক চিকিৎসক পড়ুয়া কুনারী অপর্ণা বলেন, ‘‘শৌচালয়ের মধ্যে ওই যুবককে আপত্তিকর অবস্থায় লুকিয়ে থাকতে দেখে আমি আতঙ্কে চিৎকার করতে শুরু করি। আমাদের হস্টেলের মূল ফটকে নিরাপত্তারক্ষী থাকেন। তাঁর নজর এড়িয়ে কী ভাবে ওই যুবক হস্টেলে ঢুকে পড়ল, তা আমরা জানি না। তবে আমরা নিশ্চিত, কোনও কুমতলব নিয়েই হস্টেলে ঢুকেছিল ওই যুবক। এখানে আমাদের নিরাপত্তা নেই বললেই চলে।’’ হস্টেলের আর এক আবাসিক রুবিনা খাতুন বলেন, ‘‘মাস দুই আগে এক যুবক পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়েছিল। আজ এক যুবক মেন গেট দিয়ে হস্টেলের শৌচালয়ে ঢুকে পড়ল। এই পরিস্থিতিতে আর প্রশ্নটা শুধু হোস্টেলের নিরাপত্তায় সীমাবদ্ধ নেই। এর পরের পর্ব হচ্ছে, আমাদের ধর্ষণ ও খুন।’’ বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি বলেন, ‘‘খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছই। অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ওই যুবকের বাড়ি গঙ্গাজলঘাটি থানা এলাকায়। ওই যুবক মানসিক ভাবে সুস্থ কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হাসপাতালের সামনে পুলিশের টহল জারি রয়েছে। হস্টেলের উপর নজরদারিতে কোথাও খামতি রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে তা-ও।’’
শুক্রবার রাতের এই ঘটনায় ফের প্রশ্ন উঠেছে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে পড়ুয়া ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে। শুক্রবার রাতেও দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়ারা। খবর পেয়ে রাতেই ওই ছাত্রী-আবাসে পৌঁছন পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পৌঁছন কলেজের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুন্ডুও। এর পর মেয়েদের হস্টেলে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অধ্যক্ষকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন আবাসিকেরা। মেয়েদের হস্টেলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সুশান্তকুমার নন্দী বলেন, ‘‘হস্টেলের মেন গেটে আমি একাই ডিউটি করছিলাম। এই যুবক সন্ধ্যা থেকে নিজেকে জনৈক আবাসিকের অভিভাবক হিসাবে পরিচয় দিয়ে হস্টেলে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। আমি তাঁকে একাধিক বার ঢুকতে বাধা দিয়েছি। এক বার ওই যুবককে ধরে সিভিক কর্মীদের হাতেও তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু মাঝে আমার শৌচালয়ে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে ওই যুবক হস্টেলে ঢুকে পড়েন।’’ বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু বলছেন, ‘‘শুধু মেয়েদের হস্টেল নয়, কোনও হস্টেলেই নিরাপত্তারক্ষী বরাদ্দ নেই। হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে থেকেই এক জনকে হস্টেলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী না থাকার ফলেই বার বার এমন ঘটনা ঘটছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy