Advertisement
১১ অক্টোবর ২০২৪
Junior Doctor Aniket Mahato

সকালে উঠে বসেছেন অনিকেত, এখন কেমন আছেন? কী বলছেন চিকিৎসকেরা

অনিকেতের শরীরে জলশূন্যতা ছিল। তাঁর মূত্রে ‘কিটোন বডি’ও পাওয়া গিয়েছে। আগামী তিন-চার দিন চিকিৎসাধীনই থাকবেন অনিকেত। এর পর খানিক সুস্থ হয়ে উঠলেও পর্যবেক্ষণে রাখা হবে তাঁকে।

আরজি করে চিকিৎসাধীন অনিকেত।

আরজি করে চিকিৎসাধীন অনিকেত। ছবি: চিকিৎসক সন্দীপ সেন।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৪ ১০:১৯
Share: Save:

শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আরজি করের অনশনরত জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতোকে। গভীর রাতে ধর্মতলার অনশনস্থল থেকে তাঁকে আরজি করে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিসিইউতে ভর্তি করানো হয়েছে তাঁকে। এখনও সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অনিকেতের শারীরিক অবস্থা এখনও স্থিতিশীল নয়। তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন। অনিকেতের চিকিৎসার জন্য গড়া হয়েছে মেডিক্যাল বোর্ডও।

শুক্রবার সকালে অনিকেতের শারীরিক অবস্থা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে ‘জুনিয়র ডক্টর্‌‌স ফ্রন্ট’। অনিকেতের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। রাজ্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ করার অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি।

আরজি কর হাসপাতাল সূত্রে খবর, অনিকেতের শরীরে আইভি ফ্লুইড চালানো হয়েছে। রক্তের একাধিক পরীক্ষাও করা হয়েছে। আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার আশফাক উল্লাহ নায়ার বলেন, ‘‘সঠিক সময়ে নিয়ে আসার জন্য প্রাণঘাতী হয়নি। কিন্তু আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসা চলছে।’’ চিকিৎসকেরাই জানাচ্ছেন, অনিকেতের শরীরে জলশূন্যতা ছিল। তাঁর মূত্রে ‘কিটোন বডি’ও পাওয়া গিয়েছে। আগামী তিন-চার দিন চিকিৎসাধীনই থাকবেন অনিকেত। এর পর খানিক সুস্থ হয়ে উঠলেও পর্যবেক্ষণে রাখা হবে তাঁকে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আরজি করের সিসিইউয়ের ইনচার্জ চিকিৎসক সোমা মুখোপাধ্যায় জানান, ইতিমধ্যেই তাঁরা অনিকেতের চিকিৎসায় পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছেন। তাতে সোমা ছাড়াও রয়েছেন নেফ্রোলজি বিভাগের চিকিৎসক কানাইলাল কর্মকার, মেডিসিন বিভাগের সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, হৃদ্‌‌রোগ বিশেষজ্ঞ বিশ্বদীপ মজুমদার এবং চিকিৎসক সুজয়কুমার রায়।

শুক্রবার সকালে জানা গিয়েছে, অনিকেতের স্বাস্থ্য নিয়ে শুক্রবারই আলোচনায় বসবে মেডিক্যাল বোর্ড। নিয়মমাফিক রক্তপরীক্ষা ছাড়াও আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, ইকো কার্ডিয়োগ্রাফি, ইসিজি ইত্যাদি নানা পরীক্ষা করা হয়েছে। সে সবের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে অনিকেতের চিকিৎসা নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড। শুক্রবার সকালে সমাজমাধ্যমে বার্তা দিয়ে চিকিৎসক সন্দীপ সেন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতের চেয়ে শুক্রবার সকাল থেকে খানিক ভালো আছেন অনিকেত। অর্থাৎ চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে তাঁর শরীর। তবে এখনও খুবই দুর্বল তিনি। ভর্তি করানোর পর থেকে বেশির ভাগ সময়টাই ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন তিনি। তবে অনিকেতের সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে কত দিন লাগবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এক সপ্তাহও তাঁকে চিকিৎসাধীন থাকতে হতে পারে, এমনটাই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ধর্মতলার মঞ্চে গিয়ে অনিকেতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন আরজি করের চিকিৎসক সৈকত নিয়োগী। তিনি জানিয়ে দেন, অনিকেতের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করানো প্রয়োজন। আইসিইউ-তে পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি তাঁকে। এর পরে রাতে অনশনমঞ্চে যান রাজ্য সরকার গঠিত চার চিকিৎসকের একটি দল। অনশনকারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তাঁরা জানান, অনিকেতের পাশাপাশি অনশনকারী আর এক চিকিৎসক স্নিগ্ধা হাজরার শারীরিক অবস্থা তুলনামূলক ভাবে বেশি খারাপ। অনিকেত এবং স্নিগ্ধা দু’জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করানো দরকার। শেষমেশ অনিকেতের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে আরজি করে নিয়ে যান সতীর্থেরা। অনিকেতের শারীরিক অবস্থার অবনতি নিয়ে উদ্বিগ্ন জুনিয়র ডক্টর্‌‌স ফ্রন্টও। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তরফে বলা হয়, ‘‘আমরা জানি না আর কবে এই সরকারের টনক নড়বে। অনিকেতের শারীরিক অবস্থার অগ্রগতি সম্পর্কে আমরা আপনাদের জানাতে থাকব।’’

গত রবিবার রাত থেকে অনশন করছেন অনিকেত। তারও এক দিন আগে থেকে ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। প্রথমে ছ’জন অনশন শুরু করেন। পরের দিন যোগ দেন আরজি করের অনিকেতও। টানা অনশনে সকলেরই শরীর ভেঙে গিয়েছে। কারও কারও শারীরিক অবস্থা নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। তবু মনোবল কমেনি কারোরই। এখনও ধর্মতলায় অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তনয়া পাঁজা, স্নিগ্ধা হাজরা, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, অর্ণব মুখোপাধ্যায় এবং পুলস্ত্য আচার্য।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE