দলের বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ে সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাকে দেওয়া চিঠি নিয়ে নানা মত বিজেপি-র বাঁকুড়া জেলার বিধায়কদের।
দলের বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ে সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাকে দেওয়া চিঠি নিয়ে নানা মত বিজেপি-র বাঁকুড়া জেলার বিধায়কদের। একসঙ্গে ৯ বিধায়ক ক্ষোভের চিঠি দিল্লিতে পাঠিয়েছেন বলে বৃহস্পিতবার বিদ্রোহীরা দাবি করলেও শুক্রবার সকালে জানা গেল এই বক্তব্যের পক্ষে নেই অনেকেই। এমনকি, শুক্রবার সকাল থেকে ছড়িয়ে পড়া দুই বিধায়কের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ছাড়তে চেয়ে দিল্লিকে চিঠি দেওয়ার খবরের সত্যতা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। প্রথমে জানা যায়, ওন্দার বিধায়ক অমরনাথ শাখা এবং ইন্দাসের বিধায়ক নির্মল ধারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। তবে সেই চিঠিতে তাঁরা কোনও ক্ষোভের কারণ জানাননি। ব্যক্তিগত সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেই চিঠির কোনও প্রতিলিপি দেখতে পাওয়া যায়নি। উল্টে নির্মল ধারার বক্তব্য, তিনি এমন কোনও চিঠি পাঠাননি। সকালে সংবাদমাধ্যমের কাছে চিঠির কথা জানালেও বেলায় অমরনাথও চিঠি দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা তিনি ছাড়তে চান না বলে দাবি করলেও অমরনাথের বক্তব্য, তিনি কিছু সমস্যার কথা জানিয়ে নড্ডাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। অমরনাথ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “দলে কোনও সমস্যা হলে উচ্চতর নেতৃত্বকে চিঠি লিখে জানানোটা অন্যায় নয়। এটা আমাদের দলের ব্যবস্থার মধ্যেই রয়েছে।” অমরনাথের ওই চিঠিতে কারা সই করেছেন? বৃহস্পতিবার ৯ বিধায়ক সই করেছেন বলে দাবি করা হলেও শুক্রবার অমরনাথ নিশ্চিত করে কোনও সংখ্যা বলতে পারেননি। তিনি বলেন, “তিন চার জন বিধায়ক সই করেছেন।” সংখ্যাটা তিন না চার নির্দিষ্ট করে না জানালেও ইন্দাসের নির্মল ধারা এবং বাঁকুড়ার বিধায়ক নিলাদ্রীশেখর দানার নাম উল্লেখ করেন। এঁদের মধ্যে নির্মলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “দলের বিরুদ্ধে আমার কোনও ক্ষোভ নেই। আমার নাম কেন জড়াচ্ছে জানি না। আমি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করিনি। আর নড্ডা'জিকে লেখা কোনও চিঠিতে সই করিনি। নিজেও পাঠাইনি।” তবে নিলাদ্রীশেখরের বক্তব্যে কিছুটা হলেও ধোঁয়াশা রয়েছে। তিনি বলেন, “আমি নিরাপত্তা ছাড়তে চাই না। আর নড্ডা'জিকে কোনও চিঠি পাঠাইনি।” তবে কি অমরনাথের লেখা কোনও চিঠিতে সই করেছেন? নিলাদ্রীশেখর বলেন, “আমি করোনা আক্রান্ত। কিছু দিন তাই গৃহবন্দি রয়েছি। এই সময়ে দরকারি কাগজপত্রে সই করেছি। সবটা মনেও রাখতে পারছি না। তার ভিতরে নড্ডা'জিকে লেখা কোনও চিঠি ছিল কি না বলতে পারব না। আমার সব কিছু মনে থাকছে না।” আবার সোনামুখীর বিধায়ক চন্দনা বাউড়ির বক্তব্য, “আমি দলের সঙ্গেই রয়েছি। আমার নাম কেন জড়াচ্ছে আমি জানি না। নিজের কাজের বাইরে আমি কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখি না। নিজের বিধানসভা এলাকার মানুষ ছাড়া আমার কোনও গোষ্ঠী নেই।”
ডিসেম্বর মাসে বিজেপি-র নতুন রাজ্য কমিটি ঘোষণা এবং তার পরে জেলায় জেলায় সভাপতি বদলের পর থেকেই বিভিন্ন জায়গায় ক্ষোভ বিক্ষোভ শুরু হয়। অনেকেই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ ছেড়ে দিয়ে বিদ্রোহ দেখাতে শুরু করেন। কিন্তু রাজ্য বিজেপি সেই বিদ্রোহেক গুরুত্ব না দেওয়ায় এখন বিদ্রোহ অনেকটাই স্তিমিত। অন্য দিকে, বিজেপি সূত্রেই খবর, পশ্চিমবঙ্গে কোন কোন নেতা এবং বিধায়ক, সাংসদ বিদ্রোহ দেখাচ্ছেন বা ইন্ধন জোগাচ্ছেন তাঁদের উপরে ব্যক্তিগত ভাবে নজরদারি চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ওই নেতারাও ইতিমধ্যেই জেনে গিয়েছেন অমিত শাহর এই উদ্যোগ। আর তার পরেই অনেকে একটু একটু করে মত বদলাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, বিজেপি-র যে বিধায়করা দলের সাংগঠনিক হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ ছেড়েছিলেন তাঁরা সেই সময়ও সতর্ক ছিলেন। কেউই সংগঠনের মূল গ্রুপগুলি ছাড়েননি। বিভিন্ন সময়ে তৈরি হওয়া সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের গ্রুপ বা স্থানীয় সংবাধমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগের গ্রুপগুলি ছেড়েছিলেন। এখন তাঁরা এটাও বলতে শুরু করেছেন যে, কাজের গ্রুপ নয় বলেই সেগুলি থেকে তাঁরা বেরিয়ে যান। জেলা সভাপতিদের নাম ঘোষণার দিনেই সেই পদক্ষেপ কাকতালীয় বলেও অনেকের দাবি।
প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়ার ১২টি বিধানসভা আসনের মধ্যে আটটিতে জেতে বিজেপি। এর পর সব বিজেপি বিধায়ককে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হয়। বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ ইতিমধ্যেই যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। বাকি সাত বিজেপি বিধায়কের এখনও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা রয়েছে। প্রত্যেক বিধায়কের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন পাঁচ জন করে সিআইএসএফ। সেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহারের আবেদন প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি-র এক নেতা জানান, কেউ চাইলেই যেমন নিরাপত্তা পেতে পারেন না, তেমন ছাড়তেও পারেন না। ফলে এমন দাবিদাওয়ার কোনও গুরুত্ব নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যাদের নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন মনে করে তাদের দেয়। এতে পছন্দ, অপছন্দের কোনও বিষয় নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy