নিজের বাড়ির সামনে সাগরিকাদেবী। নিজস্ব িচত্র
মাটির দেওয়াল। খড়ের চাল। ঘর দু’টি। বাড়ি বলতে এ টুকুই। সেই বাড়িতেই থাকে দু’টি পরিবার। একদিকে থাকেন অজিত ভল্লা। অন্য দিকে তাঁর ভাই রঞ্জিত।
ময়ূরেশ্বরের ঝলকা গ্রামের বাসিন্দা অজিতবাবুর স্ত্রী সাগরিকাদেবী ২০০৮-১৩ সাল পর্যন্ত ময়ূরেশ্বর ২ পঞ্চায়েত সমিতির নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। তখন তৃণমূল, বিজেপির সদস্যরা হাত মিলিয়ে পঞ্চায়েত পরিচালনা করেছিলেন। এখন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার প্রাপক তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও বাড়ি তৈরির অনুদান পাননি বলে অভিযোগ সাগরিকাদেবীর। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘আমরা বিজেপি করি বলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া সত্ত্বেও বাড়ি তৈরির অনুদান আটকে দেওয়া হয়েছে। বর্ষা তো বটেই, বছরের বেশির ভাগ সময় ঘরের মেঝে স্যাঁতস্যাতে হয়ে থাকে মেঝের উপরে চট পেতে বসলে পোশাক ভিজে যায়। সারা বছরই নানা অসুখ বিসুখে ভুগতে হয়।’’
একই অভিযোগ ওই গ্রামের হরি মণ্ডলেরও। বিজেপির ময়ূরেশ্বর (বি) মণ্ডল কমিটির সভাপতি হরি উলকুন্ডা পঞ্চায়েতে ১০ বছর বিজেপির নির্বাচিত সদস্য ছিলেন । তার মধ্যে ৫ বছর তৃণমূল-বিজেপি সদস্যদের একযোগে পরিচালিত পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন। ওই সময় পঞ্চায়েতের অন্যতম সদস্য ছিলেন বর্তমান পঞ্চায়েত প্রধান সামসুর আলম মল্লিক। হরিবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমরা মাটির বাড়িতে বাস করি। নিজেদের বাড়ি তৈরির ক্ষমতা নেই। পঞ্চায়েতে কাগজপত্র জমা দেওয়া সত্ত্বেও আমি অনুদান পাইনি। অথচ শাসকদল তালিকার পিছনে থাকা দলীয় কর্মী সমর্থকদের বেছে বেছে অনুদান পাইয়ে দিচ্ছে।’’
রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন একই গ্রামের ধীরেন ধীবর, সনৎ দাস, মানিক দাসরাও। তাঁরা বলেন, ‘‘আমরা প্রায় ভগ্নপ্রায় মাটির বাড়িতে বাস করি। পঞ্চায়েতে বাড়ির অনুদান পাওয়ার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছি। কোনও অনুদান পাইনি। অথচ বাড়ি আছে এমন লোকেদের অনুদান বরাদ্দ করা হয়েছে।’’ তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের কেন্দ্রীয় সরকারের পারিবারিক সমীক্ষার তালিকার ক্রম অনুযায়ী বাড়ি তৈরির অনুদান বাবদ তিন দফায় উপভোক্তাদের নগদ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা অনুদান ও ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে ৯০টি শ্রম দিবসের মজুরি পাওয়ার কথা। এ জন্য উপভোক্তাকে বাড়ি তৈরির জন্য নিজস্ব জায়গার কাগজ, পাসবই, জবকার্ড ও অন্য নথি-সহ আবেদন জমা করতে হয়। পঞ্চায়েত সেই আবেদন খতিয়ে দেখে ব্লক স্তরে পাঠায়। আবেদনকারীরা ইতিপূর্বে বাড়ি তৈরির অনুদান পেয়ে থাকলে, পাকা বাড়িতে বসবাসকারী অর্থাৎ আর্থিক সঙ্গতি সম্পন্ন হলে আবেদন বাতিল করতে পারে পঞ্চায়েত। ওই সব উপভোক্তাদের অভিযোগ, ‘‘ওই ক্ষমতা দিয়েই রাজনৈতিক আক্রোশে আমাদের আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।’’ বিজেপির ময়ূরেশ্বর (এ) মণ্ডল কমিটির সভাপতি সন্দীপ ঘোষের দাবি, ‘‘গোটা ব্লকেই বাড়ি তৈরির অনুদান নিয়ে দুর্নীতি করছে শাসক দল। আমরা বিডিওকে লিখিত ভাবে সব জানিয়েছি।’’
পঞ্চায়েত প্রধান সামসুল মল্লিক অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই উপভোক্তাদের অনেককেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা তা দেননি। আবার যাঁরা ইতিপূর্বে অনুদান পেয়েছেন বা পাকা বাড়িতে বাস করেন, তাঁদের আবেদনও বাতিল করা হয়েছে।’’ তৃণমূলের ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের সভাপতি নারায়ণপ্রসাদ চন্দ্রও বলেন, ‘‘অভিযোগ ভিত্তিহীন। বিজেপি সস্তার রাজনীতি করতে ওই অভিযোগ করছে।’’
বিডিও (ময়ুরেশ্বর ২) অর্ণবপ্রসাদ মান্না বলেন, ‘‘অভিযোগের তদন্ত করে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy