জেলা অফিসে। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল বিজেপি। সোমবার পুরুলিয়া শহরে দলের জেলা অফিসে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান বিজেপির পুরুলিয়ার জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী। তাঁর অভিযোগ, মঙ্গলদা-মৌতোড় পঞ্চায়েতে তাঁদের নির্বাচিত সদস্যদের বোর্ড গঠনের সভায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে অলক্ষে তৃণমূলের বোর্ড গঠন করেছে।
এ দিন ওই পঞ্চায়েতের বিজেপির সাত জন নির্বাচিত সদস্যকে পাশে বসিয়ে বিদ্যাসাগরবাবু বলেন, ‘‘গত ১৩ ডিসেম্বর মঙ্গলদা-মৌতোড় পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের জন্য প্রশাসন চিঠি দিয়ে আমাদের সদস্যদের ডেকেছিল। তারপরে হঠাৎ জানানো হয়েছে, ওখানে আগেই বোর্ড গঠন হয়ে গিয়েছে। মানে, চুপিসাড়ে প্রশাসন ওই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করে ফেলেছে। এর বিরুদ্ধে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” বিদ্যাসাগরবাবুর অভিযোগ, রাজ্যের শাসকদলের নির্দেশেই এমনটা করেছে প্রশাসন। যদিও তৃণমূল বা প্রশাসন সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
ভোটে মঙ্গলদা-মৌতোড় পঞ্চায়েতে বিজেপি পেয়েছিল ন’টি আসন। দু’টিতে জিতেছিল তৃণমূল। একটি আসন পেয়েছিল সিপিএম। পরে বিজেপির দু’জন ও সিপিএমের এক সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। বিজেপির দাবি, তার পরেও পাল্লায় ভারী ছিল তারাই। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ওই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। বিজেপির অভিযোগ, ‘তৃণমূল আশ্রিত’ দুষ্কৃতীরা তাঁদের নির্বাচিত সদস্যদের পঞ্চায়েতে ঢুকতেই দেয়নি। পাঁচ সদস্যকে নিয়েই বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। প্রধান নির্বাচিত হয়েছিলেন তৃণমূলের সুরজিৎ চক্রবর্তী। উপপ্রধান হয়েছিলেন তৃণমূলের রীতা বাউড়ি। বিজেপির সদস্যদের বোর্ড গঠনের সভাতে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি এই খবর চাউর হতেই কিছু লোকজন পঞ্চায়েতে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। বোর্ড গঠনের সভার নথিপত্র ছিঁড়ে নষ্ট করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল সেই সময়ে।
বস্তুত, ওই পঞ্চায়েতে আদৌও বোর্ড গঠন হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশাসনেরই একাংশেই ধন্দ ছিল। জটিলতা আরও বাড়ে ডিসেম্বরের গোড়ায় প্রশাসনের দেওয়া নোটিসে। স্থগিত থাকা পঞ্চায়েতগুলিতে বোর্ড গঠনের ওই বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলদা-মৌতড় পঞ্চায়েতের নামও ছিল। প্রশাসন সূত্রের খবর, গত ১৩ ডিসেম্বর মঙ্গলদা-মৌতোড় পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের সভায় হাজির থাকার জন্য প্রশাসন চিঠি দিয়েছিল নির্বাচিত ১২ জন সদস্যকেই। পরে অবশ্য জেলাশাসক চিঠি দিয়ে বিডিওকে জানান, ওই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন বন্ধ করা হচ্ছে। জেলাশাসকের যুক্তি ছিল, সেপ্টেম্বরের সভাতেই সেখানে বোর্ড গঠন হয়ে গিয়েছেয় বিষয়টি কোনও ভাবে তাঁদের নজর এড়িয়ে গিয়েছিল। ভুলটা ধরা পড়ার পরেই বোর্ড গঠনের সভা বন্ধ করা হয়েছে।
সোমবার এই ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। প্রথম প্রশ্ন, কী ভাবে বিষয়টি প্রশাসনের সর্বস্তরের নজর এড়িয়ে গিয়েছিল? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সেপ্টেম্বরেই যদি বোর্ড হয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে কেন প্রধান বা উপপ্রধানকে পঞ্চায়েতের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি? কেন তিন মাস ধরে প্রশাসক নিয়োগ করে ওই পঞ্চায়েতে কাজ চালানো হয়েছে? মঙ্গলদা-মৌতোড় পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান সুরজিৎবাবুও জানান, তাঁকে ব্লক প্রশাসন এখনও পঞ্চায়েতের দায়িত্ব দেয়নি। তবে সেপ্টেম্বরের সভাতেই এই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি করেছেন তিনি।
নিজে কেন প্রশাসনের কাছে দায়িত্ব চেয়ে আবেদন করেননি? সুরজিৎবাবু বলেন, ‘‘ব্লকে আরও কয়েকটি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন স্থগিত ছিল। আমরা দলগত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সমস্ত পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরেই আবেদন জানাব।” আগামী ২০ ডিসেম্বর মৌতোড় গ্রামের ফুটবল মাঠে সভা করার কথা যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার পরেই তিনি পঞ্চায়েতের দায়িত্ব চেয়ে ব্লক প্রশাসনের কাছে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন সুরজিৎবাবু।
বিজেপির তোলা অভিযোগগুলির বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি বিডিও (রঘুনাথপুর ২) মৃন্ময় মণ্ডল। জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়ের দাবি, গত ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলদা-মৌতোড় পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের সভা শেষ হতেই কিছু বহিরাগত লোকজন পঞ্চায়েতের ভেতরে ঢুকে বোর্ড গঠন সংক্রান্ত কিছু নথি নষ্ট করে দিয়েছিল। সেই সময়ের বিডিও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। পুলিশ তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে। ফলে বিষয়টি এখন আদালতের বিচারধীন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘আদালতে ওই মামলাটি বিচারাধীন থাকায় আমরা নিয়ম অনুযায়ী ওই পঞ্চায়েতে প্রধানকে দায়িত্বভার দিতে পারি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy