Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

ইদগাহ, শিবমন্দিরে নামল মানুষের ঢল

দুই সম্প্রদায়ের মানুষের দু’টি ধর্মীয় উৎসব ঘিরে সোমবার খুশির পরিবেশ গোটা জেলায়।

অনাবিল: ইদের নমাজে দুই খুদে। সোমবার দুবরাজপুরে। নিজস্ব চিত্র

অনাবিল: ইদের নমাজে দুই খুদে। সোমবার দুবরাজপুরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ০১:১৩
Share: Save:

এক দিকে ইদ, অন্য দিকে শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার।

এক দিকে ফেজ টুপি, জায়নামাজ পাটি, নতুন পোশাকে ইদের নমাজ, কুরবানি। অন্য দিকে সাজানো বাঁক, ঘটি হাতে গেরুয়া পোশাক ও লালপাড় সাদা শাড়িতে শিবের মাথায় জল ঢালতে যাওয়ার ধূম।

দুই সম্প্রদায়ের মানুষের দু’টি ধর্মীয় উৎসব ঘিরে সোমবার খুশির পরিবেশ গোটা জেলায়।

‘বকরি ইদ’-এ সিউড়ি, দুবরাজপুরের মতো বিভিন্ন এলাকার ইদগাহে নমাজ পড়লেন হাজার হাজার মানুষ। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত খয়রাশোল, সিউড়ি, দুবরাজপুর, রাজনগর-সহ বিভিন্ন গ্রামে একই ছবি। নমাজ সেরে দেওয়া হল কুরবানি।

শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় জল ঢালতে যাওয়ার চল দীর্ঘ কালের। এ মাসের প্রতি সোমবার (বিশেষ করে শেষ সোমবার) তারকেশ্বর ও ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের পাশাপাশি বীরভূমের প্রাচীন শিবমন্দিরগুলিতেও ভক্তেরা ভিড় জমান। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ভিড় হয়েছিল বক্রেশ্বর ধামে। পূণ্যার্থীদের ভিড় ছিল দুবরাজপুরের পাহাড়েশ্বর এবং খগেশ্বর শিবমন্দির, খয়রাশোলের রাসা গ্রামের শিবমন্দির-সহ জেলার বিভিন্ন শিবমন্দিরে।

তবে এ দিন যে ছবি বেশি নজরে এল তা হল, দু’টি সম্প্রদায়ের মানুষ জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আঁচ ছিল সর্বত্র। সতর্ক ছিল পুলিশ। দুবরাজপুরে ইদগাহে নমাজ পড়তে যাওয়া এবং শিবের মাথায় জল ঢালতে যাওয়ার পথে দুই সম্প্রদায়ের মানুষের দেখা হয়, হয় কুশল বিনিময়। দুই সম্প্রদায়ের মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার দিয়েছিল পুলিশও।

হিন্দু শাস্ত্র মতে, শ্রাবণ মাস হল মহেশ্বর উপাসনার সেরা মাস। বছরভর মহাদেবের পুজো করলে যে পুণ্যার্জন হয়, এ মাসের চারটি সোমবার পুজো করলে একই পুণ্য মেলে। সেই বিশ্বাস থেকেই এ দিন জেলার বিভিন্ন শিবমন্দিরে জমে ভিড়।আলোর মালায় সাজানো হয়েছিল বক্রেশ্বর শিবমন্দির। রবিবার রাত থেকেই লাইন পড়ে। বক্রেশ্বর উন্নয়ন পর্যদ ও সেবায়ত সমিতির সহযোগিতা ছিলই, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখাতে হাজির ছিল প্রচুর পুলিশ। ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা দেখে খুশি পূণ্যার্থীরা। তবে পানীয় জলের সমস্যা ছিল। ভক্তদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে বিভিন্ন সংস্থা।

বছর তিনেক আগে শ’খানেক ফুট উচ্চতার নতুন শিবমন্দির তৈরি হওয়ার পর থেকে দুবরাজপুরে পাহাড়েশ্বর শিবমন্দিরে ভিড় আরও বেড়েছে। সোমবার সেখানে পুজো দিলেন বহু মানুষ। দুবরাজপুরের বালিজুড়ি যাওয়ার রাস্তায় মঙ্গলপুর পেরিয়ে শতাব্দীপ্রাচীন খগেশ্বর মন্দির ও খয়রাশোলের রসা গ্রামের শতাব্দীপ্রাচীন শিবমন্দিরেও লম্বা লাইন ছিল। শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার ভিড় জমল মহম্মদবাজারের সব শিবমন্দিরে। সবচেয়ে বেশি জনসমাগম হয় রায়পুর ও মোলপুর শিবমন্দিরে। বৈদ্যনাথপুর গ্রামে ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয় শিব পুজো। মালডিহা গ্রামে প্রাচীন শিবমন্দিরের সংস্কার করে ফের প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ দিন পুণ্যার্থীদের ঢল নামে ময়ূরেশ্বরের কলেশ্বর শিবমন্দির এবং নানুরের জুবুটিয়া জপেশ্বর মন্দিরেও।

ইদুজ্জোহা পালনের নেপথ্যেও রয়েছে ধর্মীয় ভাবাবেগ। মুসলিম সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, আল্লার নির্দেশেই তা পালিত হয়ে আসছে। প্রিয় শিষ্য ইব্রাহিমের কাছে তাঁর নির্দেশ ছিল, ইব্রাহিমকে তাঁর প্রিয় জিনিস কুরবানি দিতে হবে। সব চেয়ে প্রিয় নিজের ছেলে ইসমাইলকে ঈশ্বরের উদ্দেশে কুরবানি দিতে চান ইব্রাহিম। কিন্তু কী ভাবে নিজের চোখের সামনে প্রিয় সন্তানকে কুরবানি দেবেন? তাই চোখ বেঁধে তিনি সন্তানকে কুরবানি দিতে যান। পরে দেখেন, তাঁর প্রিয় পুত্র পাশেই রয়েছেন। কুরবানি হয়ে পড়ে রয়েছে দুম্বা। সেই থেকেই কুরবানি দেওয়ার রেওয়াজ চালু।

এ দিন দু’টি সম্প্রদায়ের মানুষই নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে উৎসব পালন করলেন। রবিবারের পরে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনেও ছুটি থাকায় আমেজ বাড়ল কয়েক গুণ।

অন্য বিষয়গুলি:

Dubrajpur Eid Shiva
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy