Advertisement
E-Paper

সব পঞ্চায়েতে বাল্যবিবাহ বিরোধী প্রচার

প্রশাসন সূত্রে খবর, আগামী ছ’মাসের মধ্যে জেলার ২২৪৫টি সংসদে পৌঁছনোর পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন।

Sourced by the ABP

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫ ০৯:৪০
Share
Save

স্কুলের পর এ বার গ্রাম। বাল্যবিবাহ বিরোধী প্রচারকে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এ বার গ্রামে গ্রামে প্রচারের ঘোষণা করল বীরভূম জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সিউড়ির রবীন্দ্রসদনে বাল্যবিবাহ বিরোধী একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, ‘‘জেলার ১৬৭ পঞ্চায়েতের ২২৪৫টি সংসদেই বাল্যবিবাহ বিরোধী প্রচারে নামবে জেলা প্রশাসন। যেহেতু গ্রামীণ এলাকাতেই বাল্যবিবাহের সংখ্যা বেশি তাই জেলার কোনও গ্রামের কোনও অংশ যাতে এই প্রচার থেকে বাদ না যায়, তা নিশ্চিত করতে চাইছে জেলা প্রশাসন।’’

প্রশাসন সূত্রে খবর, আগামী ছ’মাসের মধ্যে জেলার ২২৪৫টি সংসদে পৌঁছনোর পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন। এই কাজে গ্রামীণ এলাকার জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং এলাকার বিশিষ্ট মানুষ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের যুক্ত করার পরিকল্পনাও নিয়েছে প্রশাসন। জেলাশাসকের কথায়, ‘‘কোনও অজুহাত দিয়ে নয়, বরং হাতে হাত মিলিয়ে আমরা জেলাকে বাল্যবিবাহের তালিকায় সবার নীচে নামিয়ে আনার চেষ্টা করব।”

ঘটনা হল, বীরভূম জেলা বাল্যবিবাহের নিরিখে শুধু রাজ্যে নয়, দেশের মধ্যেও প্রথম পাঁচের মধ্যে রয়েছে। তা ঠেকাতে উঠেপড়ে লেগেছে প্রশাসন। বীরভূম ও রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলায় বা তিনটি মহকুমায় গত এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত নাবালিকা বিয়ে আটকানো গিয়েছে মাত্র ২২৭টি। আটকানো যায়নি ১০, ৪৭৬টি বিয়ে। চরম উদ্বেগের সেখানে কিশোরী গর্ভাবস্থাও। এই সময়কালে নথিবদ্ধ হয়েছে তেমন ১০,৭০৩টি ঘটনা। সেই তালিকায় পনেরোর নীচে ৩০২ জন কিশোরী রয়েছে। তথ্য বলছে, ৯৭.৮৮ শতাংশ বিয়ের খবর পৌঁছচ্ছেই না প্রশাসনের কাছে। তা ঠেকাতেই নাগাড়ে প্রচার চালাচ্ছে প্রশাসন। বুধবার জেলার জুনিয়র হাইস্কুল, হাইস্কুল ও হাই মাদ্রাসা মিলিয়ে ৭২৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই সময়ে একযোগে বাল্যবিবাহ বিরোধী নাটক পরিবেশিত হয়। পাঠ করা হয় শপথ বাক্যও।

বৃহস্পতিবার এ বিষয়েই সিউড়ির রবীন্দ্রসদন মঞ্চে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে বিয়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যাঁরা জড়িত থাকেন তাঁদের সকলকেই ডাকা হয়েছিল। পুরোহিত, কাজী, পাদ্রি, ডেকোরেটর, কেটারার-সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বাল্যবিবাহ নিয়ে একাধিক বার্তা দেন জেলাশাসক। তিনি জানান, বাল্যবিবাহ রোধ করতে সরকারি যে আইন রয়েছে সেখানে নাবালক বা নাবালিকার অভিভাবকেরা যতটা দায়ী, ততটাই দায়ী বিয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য সকলে। এমনকি আমন্ত্রিত হিসেবে এমন বিয়েতে যাঁরা উপস্থিত থাকেন, তাঁদের উপরেও সমান দায় বর্তায় বলে তিনি স্পষ্ট করেন। এ দিন মঞ্চ থেকে বিয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমস্ত পেশার মানুষদের বাল্যবিবাহ বিরোধী শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়।

জেলাশাসক জানান, স্কুলগুলিতে যদি স্কুলছুটের সংখ্যার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক স্কুলছুট ছাত্র বা ছাত্রীর কারণ অনুসন্ধান করা হয় তাহলে বাল্যবিবাহ অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হবে। সিউড়ি ১ ব্লকের কড়িধ্যা গ্রামে যদুরায় স্কুলের উদ্যোগে এমন দু’টি বিয়ে আটকানো গেছে বলেও জানানো হয়। তবে শুধু স্কুল নয়, সমাজের সর্বস্তরে এই সচেতনতা গড়ে তোলার বার্তা দেন তিনি। সে প্রসঙ্গেই প্রতিটি পঞ্চায়েতে প্রচারের কথা বলেন জেলাশাসক। তাঁর কথায়, “শহরের তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় এই সমস্যা অনেক বেশি। তাই আমরা দ্রুত বাল্যবিবাহ বিরোধী প্রচারকে জেলার প্রত্যেকটি গ্রামে পৌঁছে দিতে চাই।’’

নাবালিকা বিয়ে বন্ধ

মাড়গ্রাম: নাবালিকার বিয়ে রোধ করল পুলিশ প্রশাসন। বুধবার রাতে মাড়গ্রাম থানা এলাকায় এক ১৪ বছরের নাবালিকার বিয়ের খবর পেয়ে পুলিশ-প্রশাসন এলাকায় পৌঁছে বিয়ে আটকায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই নাবালিকা দশ দিন আগে এলাকার এক নাবালকের সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। পরে বাড়ি ফিরলে পরিবারের লোকজন নাবালিকার বিয়ের আয়োজন করেন। পুলিশ খবর পেয়ে নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করে। তার পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে ১৮ বছর না হলে বিয়ে না দেওয়ার মুচলেকাও লেখানো হয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}