আতঙ্কে: নিভৃতবাস কেন্দ্র হওয়ার খবর শুনেই আটকানো হয়েছে রাস্তা। সিউড়ি শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে। শনিবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
কোথাও বিডিও অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ, কোথায় এলাকায় বাঁশ দিয়ে পথ অবরোধ। দাবি একটাই, আমাদের এলাকায় নয়, সরকারি নিভৃতবাস কেন্দ্র গড়তে হলে অন্য এলাকায় গড়ুন। জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরকারি নিভৃতবাস কেন্দ্র গড়াকে কেন্দ্র করে এলাকার বাসিন্দাদের এমন আপত্তিতেই বিরক্ত জেলা প্রশাসনের কর্তারা। এমন কাজকে কোনও ভাবেই সমর্থন করা হবে না বলে বার্তা দেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের তরফে। তারপরও প্রতিদিন আপত্তি উঠছে।
শনিবারও সিউড়ি ১ ব্লকের অজয় পুর স্কুলে বিক্ষোভ হয়। জেলা পরিষদের মেন্টর অভিজিৎ সিংহ বলছেন, ‘‘প্রতিদিন বাইরে থেকে জেলার মানুষরা ফিরছেন। সংক্রমণ রুখতেই তাঁদের নিভৃতবাস কেন্দ্রে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। এতদিন পর বহু কষ্ট সয়ে যাঁরা ফিরলেন, তাঁদেরকে যদি তাঁদের এলাকার মানুষ নিভৃতবাস কেন্দ্রে রাখতে না দেন তাহলে তাঁরা কোথায় থাকবেন? এমন অমানবিক আচরণের কোনও যুক্তি নেই।’’
প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, সঙ্কটের মুহূর্তে এলাকাবাসীর অমানবিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন অবুঝ আচরণ করোনা নিয়ন্ত্রণের কাজ আরও কঠিন করে তুলছে। এক কর্তার কথায়, ‘‘সংক্রমণ রুখতে হলে এবং আক্রান্তদের চিকিৎসার সুযোগ পাইয়ে দিতে হলে মানুষকে বুঝতে হবে প্রশাসন কারও খারাপ চায় না।’’ শুক্রবার সিউড়ি শহরে বেণীমাধব ইন্সটিটিউশনের আদিবাসী ছাত্রাবাসে নিভৃতবাস কেন্দ্র গড়া হবে শুনে পথ অবরোধ করেছিলেন এলাকাবাসী। সত্যমিথ্যা যাচাই নয়, সিউড়ির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা কলেজে নিভৃতবাস কেন্দ্র গড়া হবে শুনেই বাঁশ দিয়ে পথ আটকে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
একই ছবি মুরারই ২ ব্লকের পাইকরে। এলাকার দুটি স্কুলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়রান্টিন কেন্দ্র গড়া হচ্ছে খবর পেয়ে স্থানীয় শ’দুয়েক মহিলা বিডিওকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। একটি কেন্দ্র গড়া গিয়েছে। শুক্রবার বিক্ষোভ হয় দুবরাজপুরের মেটেলা গ্রামে। আপত্তি উঠেছে বোলপুর শ্যামবাটিতেও। লকডাউনের গোড়ার দিকেও জেলার একাধিক জায়গায় নিভৃতবাস কেন্দ্র না গড়ার দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছিল।
একের পর এক শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে বা অন্য কোনও ভাবে জেলামুখী পরিযায়ী শ্রমিকদের ঢল করোনা সংক্রমণ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে গত কয়েকদিনে। শনিবার পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২৫ ছাড়িয়েছে। যে সব রোগীর দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে তাঁদের প্রায় সকলেই পরিযায়ী শ্রমিক। আগামী কয়েক দিনে অন্তত দশ বারো হাজার শ্রমিক জেলা আসবেন ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। তারই অঙ্গ আরও নিভৃতবাস কেন্দ্র তৈরি করা। কিন্তু বাসিন্দাদের আপত্তি সেই কাজেই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
রাজ্যের নির্দেশে সংক্রমণের চূড়ান্ত অবস্থায় থাকা মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, দিল্লি এবং তামিলনাড়ু এই পাঁচটি রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের প্রাতিষ্ঠানিক নিভৃতবাসের ব্যবস্থা করতে হবে জেলা প্রশাসনকে। সেই জন্য আগে থেকে তৈরি হওয়া ৩৬টি সরকারি নিভৃতবাস ছাড়াও প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কমপক্ষে দুটি করে নিভৃতবাস কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা জেলা প্রশাসনের। বিডিওরা এলাকার সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছেন। যাতে বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের তাঁদের গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় রাখা যায়। তার দায়িত্ব নেবে ব্লক ও স্থানীয় পঞ্চায়েত। ওই শ্রমিকদের মন ভাল রাখতে প্রয়োজনে পরিবার থেকেও খাবার দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, বাসিন্দারা নিভৃতবাস কেন্দ্র গড়তে না দিলে যে সংক্রমণ আরও ছড়াবে তাই বুঝতে চাইছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy