Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

হোম থেকে সংসারে

প্রশাসনের আধিকারিকেরা জানাচ্ছিলেন, বছর চারেক আগে বাঁকুড়া শহরের একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়ার পরে ছবি যখন আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছিলেন, তখন তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায় চাইল্ড লাইন।

শুভেচ্ছা: নবদম্পতির সঙ্গে বাঁকুড়ার জেলাশাসক। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

শুভেচ্ছা: নবদম্পতির সঙ্গে বাঁকুড়ার জেলাশাসক। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯ ০০:০২
Share: Save:

বদলে গেল ছেলেবেলায় বাবা-মাকে হারানো ছবির জীবন। হোমের গণ্ডি ছেড়ে বাঁকুড়া শহরের এক যুবকের হাত ধরে নতুন ঘর খুঁজে পেলেন তিনি। শুক্রবার ছবি ও দেবাশিস দাসের বিয়ের সাক্ষী থাকল বাঁকুড়ার এক্তেশ্বর মন্দির। জীবন শুরুর আগে ধান-দুব্বো দিয়ে নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করলেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। বৌমাকে বরণ করে নিয়ে দেবাশিসের মা অপর্ণাদেবী বলেন, ‘‘এমন মেয়েই আমার ছেলের জন্য চেয়েছিলাম। আশীর্বাদ করি ওদের জীবনে সুখ যেন অফুরান হয়।’’

প্রশাসনের আধিকারিকেরা জানাচ্ছিলেন, বছর চারেক আগে বাঁকুড়া শহরের একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়ার পরে ছবি যখন আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছিলেন, তখন তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায় চাইল্ড লাইন। বাঁ চোখে দৃষ্টিহীন ১৬ বছরের মেয়েটিকে উদ্ধারের জন্য স্থানীয় বাসিন্দারাই চাইল্ড লাইনের হেল্পলাইন নম্বর ১০৯৮-তে ফোন করে ঘটনাটি জানিয়েছিলেন। সেই থেকে তাঁর ঠিকানা হোম। প্রথমে ছিলেন বাঁকুড়া শহরের একটি হোমে। পরে পাঠানো হয় বিষ্ণুপুরের সেনহাটি কলোনির মেয়েদের হোমে। কিন্তু ছবির বয়স বাড়ায় নাবালিকাদের হোমে তাঁকে রাখতে সমস্যা হচ্ছিল।

সেই সময়েই প্রশাসনের কাছে বিয়ের উপযুক্ত অনাথ একটি মেয়ের খোঁজে আর্জি জানান বাঁকুড়া শহরের আশ্রমপাড়ার যুবক দেবাশিস দাস। তাঁর হাঁটাচলায় সমস্যা। তবে লটারির টিকিট বিক্রি করে দিনে কয়েকশো টাকা রোজগার করেন তিনি।

দেবাশিসের বাবা অজিত দাস নিজের গাড়ি চালিয়ে ভাড়া খাটান। দেবাশিস তাঁর বড় ছেলে। ছোট ছেলে শুভাশিস কারখানার শ্রমিক। অজিতবাবু বলেন, ‘‘পরিবারে খাওয়া-পরার অভাব নেই। তাই চেয়েছিলাম, দেবাশিসের সঙ্গে এমন মেয়ের বিয়ে হোক, যে ওকে প্রকৃত ভালবাসতে পারে। এলাকায় একটি হোম ছিল। তাই প্রথম থেকেই হোমের মেয়েদের প্রতি সহানুভূতি ছিল। সে জন্য কনের খোঁজে মার্চ মাসে প্রশাসনের দ্বারস্থ হই।’’

অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সীমা হালদার দাস পরিবারের ইচ্ছের কথা জেলা সমাজ কল্যাণ দফতরকে জানান। তারা খোঁজ করতে গিয়ে ছবিকেই দেবাশিসের জন্য উপযুক্ত মনে করেন। এরপর পাত্র ও তার বাড়ির অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেন সমাজ দফতরের কর্মী মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়, উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়েরা। প্রশাসন দেবাশিস ও তাঁর পরিবারের সব জেনে বিয়েতে মত দেয়। তারপরেই জুন মাসের শেষের দিকে দেবাশিস ও তাঁর পরিবারের লোকজন বিষ্ণুপুরের হোমে গিয়ে ছবিকে দেখেন। পাত্র-পাত্রীর সম্মতি মিলতেই শুরু হয়ে যায় বিয়ের তোড়জোড়।

বিয়ের পরে দেবাশিস বলেন, ‘‘আমাদের দু’জনের বোঝাপড়া খুব ভাল। একে অন্যের পরিপূরক হয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে চাই।” সেই সময় পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর কথায় মৃদু ঘাড় নাড়ছিলেন ছবি। কনের তরফে হাজির ছিলেন বিষ্ণুপুরের হোমের সুপার সুচিত্রা ঘোষ। তিনি বলেন, “গত ক’বছরে ছবির সঙ্গে আমাদের সবার গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আমাদের এই মেয়েকে নতুন সংসারের সবাই যেন আপন করে নেয়।’’

জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “হোমের আবাসিকদের জীবনে আনন্দের দিন এলে আমাদেরও খুব ভাল লাগে।’’ প্রশাসনের উদ্যোগে হোমের আবাসিকের বিয়ে এর আগেও জেলায় হয়েছে। সেই সূত্র ধরে ছবি বলেন, ‘‘ভাবতেই পারিনি জীবনে এত বড় খুশি কখনও আসবে। আমি চাই হোমের সব আবাসিকের জীবনেও সংসার করার সুযোগ আসুক।”

অন্য বিষয়গুলি:

Bankura Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy