Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Potato Price high

আলুর জোগান বাড়াতে হিসাব কষছে প্রশাসন

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরে আনাজের মূল্যবৃদ্ধি রুখতে বাজার পরিদর্শনে জোর দিয়েছে প্রশাসন।

কোতুলপুর শহরের এক হিমঘরের শেডে আলু বাছাই এর কাজ চলছে।

কোতুলপুর শহরের এক হিমঘরের শেডে আলু বাছাই এর কাজ চলছে। ছবি শুভ্র মিত্র।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৪ ০৮:২১
Share: Save:

এ যেন মাদারির খেলা! বাঁশ হাতে ভারসাম্য রেখে দড়ির উপরে এক পা এক পা ফেলে এগিয়ে যাওয়া।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, মজুত রুখে বাজারে জোগান বাড়িয়ে আলুর দাম কমাতে হবে। আবার আলুর জোগান বাড়াতে গিয়ে হিমঘর দ্রুত খালি হয়ে গেলে বছর শেষে সঙ্কট দেখা দিতে পারে। তখন ফের আলুর দাম আকাশ ছোঁবে। আলুর মজুত ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে রীতিমতো হিসাব কষে পা ফেলতে হচ্ছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনকে।

বাঁকুড়ার জেলাশাসক সিয়াদ এন বলেন, “আলুর বাজার দর ধীরে ধীরে নিম্নমুখী হচ্ছে। হিমঘর থেকে আলু যাতে সঠিক হারে বের করা হয়, বাজারে ঘাটতি ঠেকাতে সে দিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। আবার সারা বছর যাতে বাজারে জোগান ঠিক থাকে, তার জন্যও পরিকল্পনা মাফিক বের করতে পরিকল্পনা চলছে।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরে আনাজের মূল্যবৃদ্ধি রুখতে বাজার পরিদর্শনে জোর দিয়েছে প্রশাসন। দৈনিক আনাজের দামের হিসেব নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, গত বছর জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ বাঁকুড়ার বাজারে আলুর দর ছিল কেজি প্রতি ১৮-২০ টাকা। গত সপ্তাহে আলুর দর কেজিতে ৩০ টাকা ছাপিয়ে গিয়েছিল। এখন সেটাই রয়েছে কেজিতে ২৮-৩০ টাকা। হাঁসফাঁস অবস্থা গৃহস্থের।

গত রবি মরসুমে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় জেলায় আলু চাষ মার খায় উৎপাদন ধাক্কা খেয়েছে, দাবি ব্যবসায়ী ও চাষিদের। বাঁকুড়া জেলা হিমঘর সমিতির সূত্রে খবর, জেলার ৪৩টি হিমঘরে প্রায় সাত লক্ষ ৮৩ হাজার টন আলু মজুতের ক্ষমতা রয়েছে। এ বার ফলন কম হওয়ায় প্রায় ২০ শতাংশ কম আলু মজুত করা হয়। জেলায় হিমঘর থেকে মাসিক গড়ে ১২-১৩ শতাংশ আলু বেরোয়। জুনের শেষ পর্যন্ত প্রায় ২৪ শতাংশ আলু হিমঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বাজারে জোগান স্বাভাবিক রাখতে ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আলু বের করার হার ঠিক রাখা জরুরি। তবে প্রশাসন আধিকারিকেরা হিমঘরগুলিতে গিয়ে কোথায়, কত আলু মজুত রয়েছে তার তথ্য পরিসংখ্যান সংগ্রহ শুরু করছেন।

বাঁকুড়া জেলা হিমঘর মালিক সমিতির সভাপতি দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে আলু বের করার গতি কিছুটা শ্লথ ছিল। তাই আলুর দর চড়েছে।’’ যদিও তা মানতে নারাজ ‘পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি’-র রাজ্য উপদেষ্টা বিভাস দে। তিনি বলেন, “সদ্য জেলা কৃষি বিপণন দফতরের সঙ্গে বৈঠকে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে জেলায় হিমঘর থেকে আলু বের করার গতি স্বাভাবিকের থেকে বেশি। আলু বাজারজাত করার পদ্ধতিতে ত্রুটি নেই।” তাঁর দাবি, তীব্র গরমে অন্য আনাজের দর অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় আলুর প্রতি মানুষ বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। ফলে চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায়। এ দিকে আলুর ফলন খারাপ, মজুত কম হওয়ায় স্বাভাবিক নিয়মেই দর বেড়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন, রাজ্যের চাহিদা না মিটিয়ে বাইরে আলু পাঠানো যাবে না। এ নিয়ে বিভাস বলেন, “আমরা রাজ্যকে জানিয়েছি, সুফল বাংলায় যেখানে যত আলু চাওয়া হবে আমরা নির্দিষ্ট দরে দিতে প্রস্তুত। কোতুলপুরে সংগঠনের তরফে বিশেষ স্টল করে সোমবার থেকে ন্যায্য মূল্যে আলু বিক্রি শুরু করা হয়েছে। তবে রাজ্যের সীমানায় যে ভাবে আলুগাড়ি অহেতুক আটকে রাখা হচ্ছে, তা সমর্থন করছি না। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”

দৈনিক বাজার পরিদর্শন করে হিমঘর থেকে আলু কত দরে বেরোচ্ছে ও বাজারে কত দরে বিক্রি করা হচ্ছে সেই তথ্য সংগ্রহ করছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। জেলাশাসক বলেন, “আলু যতটা সম্ভব বের করার চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা। বছরের শেষ পর্যন্ত যাতে আলুর জোগান বাজারে স্বাভাবিক থাকে সে দিকেও হিসেব রেখে চলা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত অস্বাভাবিক দরে বিক্রির অভিযোগ জেলার কোনও বাজারে ওঠেনি।”

অন্য বিষয়গুলি:

bankura Potato Price
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE