Advertisement
০৭ জানুয়ারি ২০২৫
Bolpur Crime

‘রং মিস্ত্রি’দের এমন ছক! জেনে অবাক তালতোড়

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ভাড়া দেওয়ার সময়ও চার জনের পরিচয়পত্র সে ভাবে দেখা হয়নি অথবা তাদের কাছ থেকে কোনও পরিচয়পত্র জমা নেওয়া হয়নি।

বোলপুর-প্রান্তিক রেললাইনের ধারে নির্জন এই বাড়িই ছিল আস্তনা। নিজস্ব চিত্র

বোলপুর-প্রান্তিক রেললাইনের ধারে নির্জন এই বাড়িই ছিল আস্তনা। নিজস্ব চিত্র

বাসুদেব ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:২৬
Share: Save:

ধবধবে সাদা রঙের একতলা বাড়িটার চারপাশ গাছগাছালিতে ভরা। বাড়ির চারধারে প্রায় এক মানুষ সমান উঁচু সীমানা পাঁচিল। সদরে লোহার গেট। ফলে, এক ঝলক দেখলে বাড়ির ভিতরে কী চলছে বোঝার উপায় নেই। বাড়ির পাশেই বোলপুর-প্রান্তিক রেললাইন।

শান্তিনিকেতন থানার রূপপুর পঞ্চায়েতের তালতোড় গ্রামের এই বাড়িই এখন তামাম বীরভূমের আলোচনার কেন্দ্রে। এই বাড়িতেই এক সপ্তাহ থাকছিল চার জন ভাড়াটে। এই ক’দিনে গ্রামবাসীরা কেউ তাদের সে ভাবে বাড়ির বাইরে বেরোতে দেখেননি। তাদের আচরণেও কিছু সন্দেহজনক মনে হয়নি বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। অথচ সেই গ্রামেরই শেষ প্রান্তে থাকা একটি বাগানবাড়িতে বসে চার জন জেলার এক দাপুটে তৃণমূল নেতাকে হত্যার ছক কষছিল জেনে যারপরনাই অবাক তালতোড়। অবাক ওই চার জনই বাংলাদেশির দাগি দুষ্কৃতী এবং তাদের কাছে পিস্তল, বিস্ফোরক রয়েছে জেনে আরও অবাক হয়েছেন স্থানীয় মানুষ।

ওই চার দুষ্কৃতীকে তালতোড়ে পরিচয় গোপন করে থাকতে সাহায্য করা এবং খুনের পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে শান্তিনিকেতন থানার খোস মহম্মদপুরের বাসিন্দা সৈয়দ আনোয়ার আলি এবং মুলুকের বাসিন্দা শেখ কাজলকেও গ্রেফতার করেছে জেলা পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত চার বাংলাদেশিকে জেলারই বাসিন্দা এবং রং মিস্ত্রি বলে পরিচয় দিয়ে দিলীপ ঘোষ নামে এক ব্যক্তির একতলা বাগানবাড়ি ভাড়া নিতে সাহায্য করেছিল আনোয়ার ও কাজল। এলাকায় জানিয়েছিল, ওই চার জনের রঙের কাজ এখানে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ভাড়া দেওয়ার সময়ও চার জনের পরিচয়পত্র সে ভাবে দেখা হয়নি অথবা তাদের কাছ থেকে কোনও পরিচয়পত্র জমা নেওয়া হয়নি। বাড়িটি নির্জন এলাকায় হওয়ায় স্থানীয়েরা তেমন ভাবে খোঁজ রাখেননি ভাড়াটেদের বিষয়ে। এমনকি ওই বাগানবাড়ির সামনে থাকা একটি রিসর্টের কর্মীরাও কিছু আঁচ করতে পারেননি।

ওই রিসর্টের ম্যানেজার সন্তোষ মণ্ডল বলেন, ‘‘এই ক’দিনে ওই বাড়িতে কাউকে আসতে যেতে দেখিনি, কোনও সন্দেহজনক কার্যকলাপও চোখে পড়েনি। আমরা ভাবতেই পারছি না যে, এখানে বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীরা পিস্তল, বারুদ নিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছিল!’’ গ্রামবাসী অসিত ঘোষ, তাপস ঘোষ, মিনতি দাসরা বলেন, ‘‘গ্রামের মধ্যে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা ঘাঁটি গেড়ে বসে এত বড় ছক কষছিল— আমরা ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি। পুলিশ ঠিক সময়ে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করেছে।’’ ওই বাগানবাড়ির মালিক থাকেন প্রান্তিক টাউনশিপে। এ দিন কোনও ভাবেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকার কারণে গ্রেফতার হওয়া শেখ কাজলের পরিবার দাবি করেছে, তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। কাজলের মা সালমা বিবি বলেন, ‘‘আমার ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। আমার ছেলে এই সব কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতেই পারে না। পুলিশ মিথ্যা মামলায় ওকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসেছে।’’

এর আগেও বীরভূমের একাধিক জায়গায় আত্মগোপন করে বাড়ি ভাড়া নিয়ে জঙ্গি কার্যকলাপের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এ ক্ষেত্রেও একই ছকে ওই বাড়িটিতে দুষ্কৃতী কার্যকলাপ চলত বলে পুলিশের দাবি। তালতোড়ের ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি-যোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে জেলা পুলিশ এবং স্পেশাল টাস্ক ফোর্স।

অন্য বিষয়গুলি:

Bolpur Birbhum Crime Painter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy