নিজের পদোন্নতির জন্য কলেজ পরিচালন সমিতির রেজুলেশন জাল করার অভিযোগ উঠল বলরামপুর কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তাঁকে সাসপেন্ড করে থানাতে অভিযোগ দায়ের করলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
বলরামপুর কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হলেন রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। কলেজের পরিচালন সমিতিতে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো। মন্ত্রী, সভাধিপতি-সহ কলেজের টিচার-ইনচার্জ ও কমিটির অন্য সদস্যদের সই জাল করে ওই শিক্ষক জাল রেজুলেশন তৈরি করেন বলে অভিযোগ। সোমবার পুলিশের কাছে এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করেছেন সৃষ্টিধরবাবু।
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শিক্ষক কলেজের বাণিজ্য বিভাগের ‘রিডার’ পদে রয়েছেন। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে সৃষ্টিধরবাবু জানিয়েছেন, গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর কলেজের পরিচালন সমিতির কোনও বৈঠক হয়নি। কিন্তু ওই শিক্ষক গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর কলেজ পরিচালন সমিতির বৈঠকের রেজুলেশন বলে উল্লেখ করে জাল নথি বিকাশ ভবনে ডিপিআই-এ (ডাইরেক্টরেট অব পাবলিক ইনষ্ট্রাকশন) পাঠান। ওই নথিতে তিনি নিজের ব্যক্তিগত সুবিধা তথা তাঁর পদোন্নতির ব্যাপারে কলেজ পরিচালন সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।
মঙ্গলবার সৃষ্টিধরবাবু দাবি করেন, ‘‘ওই শিক্ষকের ডিপিআই-তে পাঠানো চিঠির কথা জানার পরে দেখা যায় ওই তারিখে কলেজের পরিচালন সমিতির কোনও বৈঠকই হয়নি। তিনি রাজ্যের মন্ত্রী থেকে আমার এবং টিচার-ইনচার্জ সহ অনেকের সই জাল করেছেন।’’ অভিযোগে আরও জানানো হয়েছে, ওই শিক্ষক তাঁর পদোন্নতির জন্য ডিপিআইয়ের কাছে কলেজের টিচার-ইনচার্জের স্বাক্ষরিত যে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তাও কলেজের জাল। সৃষ্টিধরবাবুর অভিযোগ, ‘‘ওই চিঠিতে যে রেফারেন্স নম্বর ও তারিখ উল্লেখ করে টিচার-ইনচার্জের নামে চিঠি পাঠানো হয়েছে তা আদতে টিআইসির পাঠানো নয়। ওই শিক্ষক নিজের হাতে লিখে ওই চিঠি ডাক মারফৎ পাঠিয়েছিলেন।’’
বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই শিক্ষক ‘অধ্যক্ষ’ পদে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন কলেজ সার্ভিস কমিশনের কাছে। কিন্তু অধ্যক্ষ পদে আবেদনের জন্য কমিশনের নির্দিষ্ট কিছু শর্তাবলী রয়েছে। সৃষ্টিধরবাবু দাবি করেছেন, ওই শিক্ষক আসলে পরিচালন সমিতির সদস্যদের সই জাল করে ডিপিআইয়ের কাছে নিজের পদোন্নতির সুপারিশ করতে চেয়েছিলেন। সম্প্রতি ওই শিক্ষককে শো-কজও করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তিনি শো-কজের জবাব দিয়েছেন। সেই জবাব পাওয়ার পরে ২৪ মার্চ তাঁকে ‘সাসপেন্ড’ করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘ওই শিক্ষক আমাদের অনেকের সই জাল করেছেন। তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।’’ কলেজের টিচার-ইনচার্জ অনন্যা ঘোষ বলেন, ‘‘পুলিশের কাছে অভিযোগে সবই বলা রয়েছে। এ নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’’ যে শিক্ষককে নিয়ে এত অভিযোগ, সেই জয়দেব গায়েন অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আমি অধ্যক্ষ পদে যোগদানের জন্য কলেজ সার্ভিস কমিশনের কাছে আবেদন করেছিলাম ঠিকই। কিন্তু তার জন্য আমি কলেজের রেজুলেশন জাল করতে যাব কেন? কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। আমি যত দূর জানি, পরিচালন সমিতির ওই সিদ্ধান্তের সঙ্গে টিচার-ইনর্চাজ চিঠি পাঠিয়েছেন। শো-কজের জবাবও দিয়েছি। কিন্তু আমাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।’’ যদিও সৃষ্টিধরবাবু দাবি করেছেন, ওই শিক্ষক তাঁদের কাছে লিখিত ভাবে ওই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে অবশ্য শিক্ষকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযোগের তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। ১৫ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে রিপোর্ট চেয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্তও শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy