কলাভবনের নন্দনে শিল্পীকেজি কে জি সুব্রমনিয়নের কাজ নিয়ে শুরু হল প্রদর্শনী। নিজস্ব চিত্র।
বাবা চেয়েছিলেন ছেলে গান শিখুক। যদিও পরাধীন ভারতে জন্ম নেওয়া সেই ছেলেকে টানত মন্দিরে মূর্তি, অলঙ্করণ থেকে শুরু করে আশপাশের নানা ভাস্কর্য ও ছবি। সেগুলিই মকশো করত সেই শিশু। শেষ পর্যন্ত এই আগ্রহই তাঁর জীবন হয়ে উঠবে। মৃত্যুর আট বছর পরে, জন্মশতবর্ষে, সেই শিশু, শিল্পী কেজি সুব্রমনিয়নের কয়েকটি ছবির মূল্য আন্তর্জাতিক শিল্প-বাজারে কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এ বার তাঁরই শেষ জীবনের কিছু কাজ দেখার সুযোগ করে দিল বিশ্বভারতী। এই কাজগুলি নিয়ে বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতনের কলাভবনের নন্দন আর্ট গ্যালারিতে শুরু হল প্রদর্শনী। চলবে ৩০ অগস্ট পর্যন্ত।
১৯২৪ সালে কেরলের তামিল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম নেওয়া শিল্পীর আগ্রহ ছিল রাজনীতিতেও। মহাত্মা গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভক্ত শিল্পী ছাত্র হিসেবে যোগ দিলেন ভারত ছাড় আন্দোলনে। গ্রেফতার হলেন। ছ’মাসের জেলও খাটলেন। প্রমাদ গুণলেন মেঙ্গালুরুবাসী পুলিশ চাকুরে দাদা। ভাইয়ের শিল্পকলার প্রতি আগ্রহ সম্বন্ধে তাঁর জানা ছিল। তিনিই সরাসরি চিঠি শিখলেন শান্তিনিকেতনে নন্দলাল বসুর কাছে। সাড়া মিলল। ১৯৪৪ সালে শান্তিনিকেতনে এসে কলাভবনে ভর্তি হলেন। নন্দলাল ছাড়াও তখন কলাভবন আলো করে আছেন বিনোদবিহারী, রামকিঙ্কর বেইজের মতো ব্যক্তিত্বরা। এঁদের সান্নিধ্যেই চলল তাঁর শিল্প-শিক্ষা। হয়ে উঠলেন সকলের প্রিয় ‘মানিদা’। এখানে পড়া শেষ করে পাড়ি দিয়েছিলেন লন্ডনে। ফিরেও এসেছিলেন শিক্ষক হিসেবে। এর পরে বাকিটা ইতিহাস। নিরলস শিল্পচর্চা চালিয়ে গিয়েছেন। তাঁর কাজ ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্ব জুড়ে। প্রায় এক মাস ধরে সেই ইতিহাসের একাংশের দেখা মিলবে নন্দনে।
বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, এ বছর তাঁর জন্মশতবর্ষ নানা ভাবে উদ্যাপন করেছে কলাভবন। সারা বছর ধরে নানা অয়োজন করা হবে। নন্দনে তাঁর জীবনের শেষের দিকের আঁকা ১০৪টি ছবি স্থান পেয়েছে। মূলত ড্রইং, জল রঙের কাজ রয়েছে। এ দিন গান ও প্রদীপ জ্বালানোর মধ্যে দিয়ে প্রদর্শনীর সূচনা হয়। ছিলেন অশোক দাস, ছিলেন কলাভবনের প্রাক্তন শিক্ষক আর শিবকুমার, অধ্যক্ষ সঞ্জয়কুমার মল্লিক-সহ শিক্ষিক, শিক্ষিকা ও পড়ুয়ারা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা এই প্রদর্শনী খোলা থাকবে।
কলাভবনের প্রাক্তন কিউরেটর সুশোভন অধিকারীর কথায়, “শিল্পী সুব্রমনিয়নের কাজ শিল্পের দিক থেকে নতুন পথের দিশা দেখাতে পারে। তাঁর জীবনের শেষ পর্বের কাজগুলি আমাদের শিল্পকলা জগতের নতুন দরজা খুলে দেয়।” কলাভবনের সেরামিক অ্যান্ড গ্লাস বিভাগের শিক্ষক শিশির সাহানা বলেন, “কলাভবনের এমন অনেক শিক্ষক, শিক্ষিকা আছেন, যাঁদের শিক্ষক ছিলেন মানিদা। তাই তাঁর অমূল্য কাজগুলিকে প্রদর্শনীতে দেখাতে পেরে ভাল লাগছে। তাঁর শিল্পকর্ম নতুন প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তুলে ধরাই একমাত্র উদ্দেশ্য।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy