পুজোর ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন সৌভিক। শেষ বার পরিবারের সঙ্গে কথা হয় বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।
মাত্র ৫ মাস বয়সে মাকে হারিয়েছিলেন। মায়ের স্নেহ কাকে বলে বোঝেননি। সুযোগ পাননি বড় হয়ে মায়ের জন্য কিছু করার। তবে বড় হয়ে দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত হয়েছিলেন বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের খামারবেড়িয়া গ্রামের শৌভিক হাজরা। দেশসেবা করতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের। কাশ্মীরে ভয়ঙ্কর তুষারঝড়ের মুখোমুখি হয়ে মাত্র ২১ বছর বয়সি যুবকের মৃত্যুসংবাদে শোকস্তব্ধ খামারবেড়িয়া গ্রাম।
সূত্রের খবর, কাশ্মীরের মাচাল সেক্টরে টহল দেওয়ার সময় ভয়ঙ্কর তুষারঝড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন শৌভিক। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কুপওয়ারা মিলিটারি হাসপাতালে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই খবর আসে শৌভিকের পরিবারের কাছে। ওই খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়তেই সবাই তাঁর আরোগ্য কামনা করেছিলেন। কিন্তু শনিবার সকালেই শৌভিকের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর আসে গ্রামে। তার পর ২১ বছরের শৌভিকের জন্য কান্না আর মনখারাপে ভারী হয়েছে ওন্দার বাতাস। তবে এই মৃত্যুসংবাদ দেওয়া হয়নি শৌভিকের ৭৮ বছর বয়সি দিদিমা বাসন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অসুস্থ বৃদ্ধা অপেক্ষা করছেন ছুটিতে বাড়ি ফিরবেন নাতি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মা দিপালী হাজরার মৃত্যুর পর খামারবেড়িয়ায় মামার বাড়িতে মানুষ হন শৌভিক। দিদিমার কোলেপিঠেই তাঁর বেড়ে ওঠা। দিদিমাকেই মা বলে ডাকতেন। গ্রামের স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর পড়াশোনা করতেন ওন্দা থানা মহাবিদ্যালয়ে। ছোট থেকেই শৌভিকের ইচ্ছে ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার। তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি শরীরচর্চাও চালিয়ে যেতেন।
২০১৯ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সুযোগ পান শৌভিক। নাশিকে প্রশিক্ষণ শেষ করে প্রথমে রাজস্থান তার পর অসম এবং বর্তমানে কাশ্মীরে কর্মরত ছিলেন।
গত অক্টোবরে দুর্গাপুজোর সময় এক মাসের ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন শৌভিক। ভাইফোঁটার দিন তুতো দিদি ও বোনেদের কাছে ভাইফোঁটা নিয়ে সে দিনই কাশ্মীরের ট্রেন ধরেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেষ বার পরিবারের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা হয় তাঁর। আর শুক্রবার সন্ধ্যাতেই তাঁর দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার খবর আসে।
শৌভিকের মামা মনোতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দিদি মারা যাওয়ার পর থেকে শৌভিক আমাদের কাছেই বড় হয়েছে। ভীষণ চাপা স্বভাবের ছেলে ছিল ও। মাকে হারানোর কষ্টযন্ত্রণা আমরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছিলাম ভুলিয়ে রাখার। সেই ছেলেটাই আজ চলে গেল মায়ের কোলে।’’ টেলিফোনে এই কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় গলা বুজে আসে মামার। পরিবার সূত্রে খবর, শনিবার সন্ধ্যায় শৌভিকের কফিনবন্দি দেহ দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছেছে। সেখান থেকে গ্রামে যাবে শহিদের দেহ। তাঁকে শেষ বারের মতো দেখার জন্য চোখের জলে প্রহর গুনছে খামারবেড়িয়া গ্রাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy