শুধু হাতি নয়, এ বার দোসর বাঘও। তাই জঙ্গলপথে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াই চ্যালেঞ্জ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের।
বাঁকুড়া উত্তর ও বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত বন বিভাগ এবং বাঘমুণ্ডি, কোটশিলা ও ঝালদা রেঞ্জে হাতিদের প্রায় সারা বছরই আনাগোনা রয়েছে। এর মধ্যে গত ডিসেম্বর থেকে রানিবাঁধ ও বান্দোয়ান রেঞ্জের জঙ্গলে মাঝে মধ্যেই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বিচরণ শুরু করেছে। সে কারণে এ বার বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছে দুই জেলার বন দফতর ও প্রশাসন।
কিছু দিন বিরতিতে সম্প্রতি ফের বান্দোয়ানের জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় বাঘের পায়ের ছাপ মিলেছে। এর আগে ঝাড়খণ্ড থেকে আসা ওই বাঘ বান্দোয়ান, ঝাড়গ্রাম ও রানিবাঁধের মধ্যেও ঘোরাঘুরি করেছে। শুক্রবার বান্দোয়ানের যমুনাগোড়া গ্রাম লাগোয়া মেঠো রাস্তায় ফের তাঁর পায়ের ছাপের দেখতে পাওয়া যাওয়ায় চিন্তা বেড়েছে।
তাই ওই সব এলাকার পরীক্ষার্থীদের দু’টি বাসে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, বান্দোয়ান ব্লক সদরের দু’টি হাই স্কুলে ও চিরুডি হাই স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রে রয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রাম পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌছাতে তিনটে রুটে বাস চালানো হবে। একটি বাস রসিকনগর হাই স্কুল থেকে ছেড়ে কাটাগোড়া, রাজাহুলি, কাদোয়া হয়ে চিরুডি হাই স্কুলে পৌঁছবে। তারপরে বান্দোয়ানে আসবে। অন্য দিকে, রাজগ্রাম হাই স্কুল থেকে পচাপানি, শালিডি কুচিয়া হয়ে বান্দোয়ান ব্লক সদরের একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছবে বাস। শিরকা হয়ে গঙ্গামান্না হয়ে ব্লক সদরের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছবে কয়েকটি ছোট গাড়ি। বাসগুলি সকাল ৮টা নাগাদ ছাড়বে।
বিডিও (বান্দোয়ান) রুদ্রাশিস বলেন, ‘‘হাতি উপদ্রুত এলাকা থেকে তিনটি পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছনোর জন্য তিনটি রুট ধরে এ বারে দু’টি বাস ও চারটে ছোট গাড়ি থাকছে। যেখানে বাস পৌঁছবে না, সেখানকার পরীক্ষার্থীদের ছোট গাড়িতে করে বাস রুটে নিয়ে আসা হবে। তাছাড়াও বন দফতরের ছোট গাড়ি থাকছে।’’
রানিবাঁধ ব্লকের বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষার্থীরা রানিবাঁধ হাই স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যায়। ওই ব্লকে দু’টি পৃথক রুটে কেবল পরীক্ষার্থীদের জন্য দু’টি বাসের ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রশাসন। পরীক্ষার দিনগুলিতে সকাল ৮:১৫ নাগাদ সারেংসকড়া থেকে একটি বাস ছেড়ে ঝিলিমিলি হয়ে রানিবাঁধ হাই স্কুলে যাবে। অন্য দিকে, সকাল ৮:১০ নাগাদ ছেন্দাপাথর থেকে আর একটি বাস ছেলে কদমাগড় হয়ে রানিবাঁধ হাই স্কুলে পৌঁছবে। পরীক্ষা শেষে বাসগুলি পরীক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনবে। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, “বাঘের আনাগোনার জন্যই রানিবাঁধে পরীক্ষার্থীদের জন্য দু’টি বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাঁকুড়ার উত্তর বনবিভাগে এ মুহূর্তে প্রচুর হাতি রয়েছে। হাতিগুলি প্রায়ই অবস্থান বদল করছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার দিনগুলিতে পরীক্ষা শুরুর আগে ও শেষের সময় হাতিগুলির অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য প্রশাসনকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বন দফতরকে। পাশাপাশি যেখানে হাতি রয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিওদের পর্যাপ্ত গাড়ির ব্যবস্থা করে রাখতে বলা হয়েছে।
কোথাও হাতির চলাফেরার জন্য পরিবহণে সমস্যা দেখা দিলে বন দফতর ব্লক অফিসের গাড়িগুলি নিয়ে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করবে। মাধ্যমিকের বাঁকুড়া জেলা আহ্বায়ক গৌতম দাস বলেন, “হাতি ও বাঘ কবলিত এলাকাগুলিতে পরীক্ষার্থীদের উপরে বিশেষ নজর থাকবে স্কুলশিক্ষা দফতরেরও।” বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, ‘‘হাতি কবলিত এলাকায় ব্লক দফতর গাড়ির ব্যবস্থা করবে। দরকারে বন দফতর ওই গাড়িগুলি নিয়ে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দেবে।”
হাতির বড় দল ঝালদার দিকে থাকায় কিছু পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে অস্থায়ী শিবিরে বনকর্মী ও র্যাপিড রেসপন্স টিমের সদস্যেরা থাকবেন। পরীক্ষার্থীদের রাস্তার আশপাশে হাতির দলের গতিবিধি নজরে এলেই ওই দল পদক্ষেপ করবে। পুরুলিয়া বন বিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, ‘‘হাতি উপদ্রুত এলাকা এবং বান্দোয়ানে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছনোর জন্য প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক করে গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৫ জন রেঞ্জ অফিসার, ৪০ জন বিট অফিসার এবং এডিএফ নজরদারিতে থাকবেন। নজর রাখবেন যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্যেরাও।’’
পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সুদীপ পাল জানান, জঙ্গল এলাকার পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে ঝালদা ১ ব্লকে তিনটি, বান্দোয়ানে দু’টি ও বাঘমুণ্ডিতে দু’টি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিডিওদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অন্যত্র প্রয়োজন পড়লে ছোট গাড়ি পাঠিয়ে পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতে সহায়তা করতে হবে।
তথ্য সহায়তা: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)