স্বমহিমায়। জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। —ফাইল চিত্র
দু’বছর কেটে গেলেও আদালতে অভিযুক্তের কণ্ঠস্বর পরীক্ষার রিপোর্টটিই জমা পড়েনি। এ বার পর পর দু’টি শুনানিতে সাক্ষ্য দিতে এজলাসেই পৌঁছল না পুলিশও।
যার নিট ফল— আরও এক বার পিছিয়ে গেল পাড়ুইয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের উস্কানি মামলার শুনানি। এমনকী, আদৌও ওই সাক্ষীদের কাছে কোনও সমন পাঠানো হয়েছিল কিনা, সংশয় তৈরি হল তা নিয়েই! আর তার পরেই শনিবার পরবর্তী শুনানিতে মামলার তদন্তকারী অফিসার-সহ পুলিশের ওই দুই সাক্ষীকে অবশ্যই হাজির হতে হবে বলে নির্দেশ জারি করলেন সিউড়ির সিজেএম ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়। মামলার এই ঘটনাক্রম দেখেই বিরোধীদের দাবি, শাসকদলের দাপুটে নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ বলে বীরভূম পুলিশের এই ঢিলেমি। আদালতের নির্দেশের পরেও ওই ঘটনায় জামিনযোগ্য লঘু ধারা প্রয়োগ করায় আগেই পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
ঘটনা হল, ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক মুখে পাড়ুইয়ের কসবায় প্রকাশ্য সভায় অনুব্রতকে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে পুলিশকে বোমা মারার ও বিরোধীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিতে শোনা গিয়েছিল। তার পরেই এলাকায় একাধিক নির্দল প্রার্থীর (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) বাড়িতে হামলা, বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। প্রশাসনকে অনুব্রতর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। পুলিশ যথারীতি তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে লঘু ধারায় মামলা রুজু করে। যদিও বীরভূমের তৎকালীন সিজেএম রাজেশ চক্রবর্তী ওই ঘটনায় পাড়ুই থানাকে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার পরেও পুলিশ মামলার চূড়ান্ত রিপোর্টে জামিন-অযোগ্য সেই সব ধারা আদৌ প্রয়োগ করেনি। গোটা তিনেক (১৮৯, ৫০৫/১খ ও ৫০৬) জামিনযোগ্য ধারা দিয়েছে মাত্র। বিরোধীদের অভিযোগ, শাসকদলকে সন্তুষ্ট করতেই পুলিশ অনুব্রতকে বাঁচাতে চাইছে। আর তাই লঘু ধারা প্রয়োগ করে অনুব্রতর বিরুদ্ধে বড় কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সব রাস্তাই বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। বিধানসভা ভোটের মুখে শাসকদলের সাংগঠনিক স্বার্থে এ বারে শুরু হয়েছে বিচার বিলম্ব করার প্রক্রিয়াও!
কেন উঠছে এই অভিযোগ?
এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত ৯ ডিসেম্বর। সে দিন এবং পরের দিন মিলিয়ে মোট চার জন পুলিশ কর্মীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য হয়েছিল। প্রথম দিন সাক্ষ্য দিতে আসেন দুই পুলিশ আধিকারিক, তৎকালীন পাড়ুই থানার ওসি সম্পদ মুখোপাধ্যায় এবং আইও ধ্রুবজ্যোতি দত্ত। কিন্তু, সিজার লিস্টে থাকা অনুব্রতর ওই বিতর্কিত বক্তৃতার সিডি ও কণ্ঠস্বর পরীক্ষার রিপোর্টই পুলিশ আদালতে জমা না করায়, তা নিয়ে আইনজীবী মহল বিস্ময় প্রকাশ করেছিল। ওই নথি জমা না পড়ায় অনুব্রতরই সুবিধা বলে তাঁদের মত। এ নিয়ে বিস্ময় কাটতে না কাটতেই পরের দিনের সাক্ষ্যদানে অনুপস্থিত থাকেন এসআই গোপালচন্দ্র চন্দ্র এবং এসআই শেখ ইসরাইল। তাতে বিরক্ত হন সিজেএম। সরকারি আইনজীবী অবশ্য দাবি করেন, ডিউটিতে থাকায় আসতে পারেননি ইসরাইল। আর অন্য জন আদালতের সমনই পাননি। এর পরেই বিচারক কোনও কারণ ছাড়াই ওই দুই পুলিশ কর্মী এবং মামলার আর এক আইও বোলপুরের সিআই চন্দ্রশেখর দাসকে পরবর্তী শুনানিতে আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ দিন যাঁদের কেউ-ই হাজির হননি সাক্ষ্য দিতে।
এ দিকে, সমন পৌঁছনো নিয়ে গণ্ডগোল দেখা দেওয়ায় গত শুনানিতেই বিচারকের কাছে এই মামলায় প্রচলিত পদ্ধতির (আদালতের সরাসরি পাঠানো চিঠি) পাশাপাশি পুলিশের রেকর্ড অফিসের (আরটিএম) মাধ্যমেও সমন পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন জেলার গভর্নমেন্ট পিপি রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই আবেদন মঞ্জুরও হয়েছিল। তার পরেও এ দিন হাজির হতে দেখা গেল না কোনও সাক্ষীকেই। সরকারি আইনজীবী কুন্তল চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘দু’ভাবেই তিন পুলিশকর্মীকে সমন পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু, কোনও কারণে সেটা ‘এন্টারটেন’ করা হয়নি।’’ এমনটা দাবি করলেও বিচারকের সামনে তার কোনও নথি অবশ্য তিনি দেখাতে পারেননি। একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি হতে দেখে দৃশ্যতই বিরক্ত হন বিচারক। নিজের আগের নির্দেশকেই বহাল রেখে আগামী ২২ জানুয়ারি ফের ওই তিন পুলিশকর্মীকে তিনি কোনও কারণ ছাড়াই আদালতে হাজির হতে বলেন।
সরকারি আইনজীবী সমন পাঠানোর দাবি করলেও উল্টো কথা বলছেন পুলিশকর্মীরাই। গোপালবাবুর সঙ্গে এ দিন চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, চন্দ্রশেখর এবং ইসরাইল, দু’জনেরই দাবি, তাঁরা আদালতের কোনও সমন পাননি। এ দিকে, ওই দুই পদ্ধতিতেই সমন পাঠানো হয়ে থাকলে, তা সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছবেই বলে দাবি আইনজীবী মহলের। তার পরেও এমন বিভ্রান্তি কী করে ঘটল, তার সদুত্তর এ দিন সরকারি আইনজীবী দিতে পারেননি। অন্য দিকে, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাব দেননি জেলার পুলিশ সুপার। পুলিশের উপরে শাসকদলের ‘প্রভাব’ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি অনুব্রতও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy