সরব: জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সামনে দলের এক কর্মী। শনিবার মল্লারপুরে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে হইচই বাধল কর্মিসভায়। চিৎকার চেঁচামেচি থামাতে আসরে নামতে হল বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। মাইক হাতে নিয়ে বলতে হল, ‘‘হাতজোড় করে বলছি, আপনারা ঝগড়া করবেন না!’’
শনিবার বিকেলে এমনই ঘটল মল্লারপুরে, তৃণমূলের ময়ূরেশ্বর বিধানসভা এলাকার বুথ ভিত্তিক কর্মী সম্মেলনে। শেষ কবে অনুব্রত মণ্ডলের সামনে দলের কোন্দল এমন কাছাখোলা হয়েছে এবং তা থামাতে মঞ্চ থেকে আবেদন রাখতে হয়েছে, তা মনে করতে পারছেন না দলের নেতা-কর্মীরা। বিরোধীদের কটাক্ষ, শাসকদলের দ্বন্দ্ব এতটাই প্রকট যে, জেলা সভাপতিকে হাতজোড় করে আবেদন করতে হচ্ছে।
লোকসভা নির্বাচনে বোলপুর আসনে তৃণমূল জয়ী হলেও ময়ূরেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের থেকে বিজেপি বেশি ভোট পায়। লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে ময়ূরেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ময়ূরেশ্বর ১ ও ২ ব্লকের ১৬টি পঞ্চায়েতের মধ্যে অধিকাংশতেই বিজেপি তৃণমূলের থেকে বেশি ভোট পেয়েছিল। ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির ১৪৫টি বুথের মধ্যে তৃণমূল ৮৬টি বুথে বিজেপি-র কাছে হেরেছে। ময়ূরেশ্বর ২ পঞ্চায়েত সমিতির ১১৭টি বুথের মধ্যে বিজেপি এগিয়ে ছিল ৭৬টিতে। শুধু তাই নয়, গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের মল্লারপুর ১ পঞ্চায়েতে বিজেপি জেতে।
এ দিনের কর্মী সম্মেলনে মূলত লোকসভা নির্বাচনের ফল নিয়ে পর্যালোচনা হয়। মঞ্চে অনুব্রত ছাড়াও ছিলেন দলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ, বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, ময়ূরেশ্বরের বিধায়ক অভিজিৎ রায়, মল্লারপুরের বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের মেন্টর ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অনেকে। আর ছিলেন ১৬টি অঞ্চলের দলীয় সভাপতি। তবে ময়ূরেশ্বর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জটিল মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন না।
সম্মেলনের শুরুতেই লোকসভা ভোটে মল্লারপুর ১ পঞ্চায়েতের একটিও বুথে দল কেন জিততে পারেনি, তা জানতে চান অনুব্রত। বলেন, ‘‘সিপিএমের দীর্ঘ শাসনেও মল্লারপুরে এত খারাপ ফল হয়নি, যা এ বার লোকসভায় হয়েছে। কেন?’’ জবাবে সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় নামে এক বুথ সভাপতি বলেন, ‘‘নেতা-কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের জন্যই হার হয়েছে। দল যে নতুন অঞ্চল সভাপতি নিয়োগ করেছে, তা অধিকাংশ কর্মীই জানেন না।’’ এর পরেই মল্লারপুর ১ অঞ্চলের সংগঠন দেখার জন্য ৫ জনের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন অনুব্রত।
মল্লারপুর ১ ছাড়াও ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের ডাবুক, বড়তুড়িগ্রাম, কানাচি, বাজিতপুর, ঝিকড্ডা— এই সমস্ত পঞ্চায়েত এলাকায় ফলের পর্যালোচনার সময় বারবার কর্মীদের কাছ থেকে ক্ষোভের কথা শুনতে হয় অনুব্রতকে। সেই ক্ষোভ কখনও ব্লক সভাপতি তথা বিধায়ক অভিজিৎ রায়ের বিরুদ্ধে, কখনও অঞ্চল সভাপতিদের বিরুদ্ধে। পরে ময়ূরেশ্বর অঞ্চলের সভাপতি লালু শেখ দাঁড়িয়ে অভিযোগ করেন, ‘‘দলের ফল খারাপ হওয়ার জন্য ব্লকের নেতারা দায়ী। জটিল মণ্ডলের জন্যই দল ভাঙছে!’’ এটা শুনে ষাটপলসা অঞ্চলের বুথ সভাপতি সুকুমার মণ্ডল দাবি করেন, ‘‘দলের খারাপ ফলের দায় অহেতুক জটিল মণ্ডলের নামে দেওয়া হচ্ছে।’’
শুরু হয়ে যায় বিবাদ। কর্মীদের বড় অংশ সুকুমারের কথা শুনে উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে থাকেন। তুমুল হট্টগোলে বিব্রত বোধ করেন অনুব্রত-সহ জেলা নেতারা। চন্দ্রনাথ সিংহ মাইক হাতে কর্মীদের চুপ করতে বলেন। তাতে কাজ হয়নি। ময়ূরেশ্বর পঞ্চায়েতের সদস্যেরা অঞ্চল সভাপতি লালু শেখের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে থাকেন। তখন মাইক হাতে অনুব্রত কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনাদের ঝগড়া শোনার জন্য আমরা আসিনি। এখানে অনেক সাংবাদিক আছেন। তাঁদের ক্যামেরা তাক হয়ে আছে আপনাদের দিকে। কাল, বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ে আপনাদের আলোচনা করার জন্য ডাকা হয়েছে। যা বলার সেখানে বলবেন।’’
জেলা সভাপতির আবেদনে কাজ হয়। কর্মীরা শান্ত হন। এর পরেই কর্মী সম্মেলন শেষ করে দেওয়া হয়। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জটিল মণ্ডল নিয়ে কর্মীদের ক্ষোভ সম্বন্ধে অনুব্রত বলেন, ‘‘এটা দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। সাংবাদিকদের কিছু বলব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy