গ্রামবাসীদের সরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। — নিজস্ব চিত্র।
ষাটপলসার পর এবার একশো দিন কাজের প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ল বোলপুরের বাহিরী-পাঁচশোয়া পঞ্চায়েতেও।
গত কয়েকদিন ধরেই মজুরদের জব কার্ড এবং পাস বই আটকে রেখে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সরগরম হয়ে ওঠে তৃণমূল পরিচালিত ময়ূরেশ্বরের ষাটপলসা পঞ্চায়েতের প্রায় প্রতিটি গ্রাম। অভিযোগ, জেলা পরিষদের কর্মাধক্ষ জটিল মণ্ডলের ডান হাত হিসেবে পরিচিত সুরথ মণ্ডল ওরফে বাপ্পা মজুরদের বরাদ্দ কাজ যন্ত্র দিয়ে করিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। ওই সব কাজে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জটিলবাবুর ট্রাক্টর এবং ড্রোজার দিয়ে করানোয় এতদিন ওই বিষয়টি নিয়ে কোন উচ্চ বাচ্য হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই, ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় প্রতিটি গ্রামে।
সুপারভাইজার, প্রধান এবং পঞ্চায়েত সদস্যদের ঘেরাও করে নিগ্রহ করেন জব কার্ড ধারীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে, এলাকায় যেতে হয় খোদ তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকেও। সব মহল থেকেই তদন্তের দাবি ওঠে। চাপে পরে শেষ পর্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করে, তদন্ত শুরু করে প্রশাসন। কিন্তু সেই তদন্ত স্বয়ংপূর্ণ হওয়ার আগেই, ফের এই অভিযোগে তেতে উঠল তৃণমূল পরিচালিত বোলপুরের বাহিরী-পাঁচশোয়া পঞ্চায়েতও।
প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক্ষেত্রেও জব কার্ড এবং মজুরদের পাশবই দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় তৃণমূলের নেতা জহর হাজরার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, এলাকার মজুররা কাজ করেও টাকা পাননি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের আশ্বাস দিয়ে ঘোরানো হয় বলে অভিযোগ। এ দিন তাই বাহিরী, পাঁচশোয়া এবং যজ্ঞনগর প্রভৃতি এলাকার পায় দুশোর কিছু বেশি মজুর প্রথমে বাহিরী গ্রামে জড় হন। বাহিরী তৃণমূলের আঞ্চলিক কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখান সকালে সাড়ে ন’টা নাগাদ। তার পরেই তাঁরা স্থানীয় পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। প্রধান ও উপপ্রধানকে না পেয়ে এক পঞ্চায়েত কর্মীকে টানা হ্যাঁচড়া শুরু করেন।
জেলার রাজনৈতিক মহল অবশ্য এর পিছনে গদাধর হাজরার বিরোধী গোষ্ঠীর হাত দেখছেন।
দলের অন্দরের খবর, নানুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূলের যুব সভাপতি গদাধর হাজরার সদ্য দখলে এসেছে ওই পঞ্চায়েতগুলি। ফলে ওই পঞ্চায়েতে সরকারি প্রকল্পে টাকা পাওয়াকে কেন্দ্র করে বাসিন্দাদের মধ্যে বিরোধ বাধাতে পারলে অশান্তি বাড়ালে তাতে নেতৃত্বের উপরে চাপ বাড়বে। সেটা বুঝেই এলাকার মানুষকে তাতিয়ে তুলেছিল বিরোধী কাজল শেখের গোষ্ঠী। জেলার রাজনীতিতে গদাধর বনাম কাজল শেখের বিরোধ নতুন নয়। এ দিন অবশ্য গদাধর বলেন, ‘‘ওই এলাকার মানুষকে সিপিএম তাতিয়ে তুলেছে। পুলিশ খতিয়ে দেখছে বিষয়টি। আগে কে কি করেছে জানি না।’’
প্রসঙ্গত দীর্ঘ দিন এই পঞ্চায়েতে দখলে ছিল কাজল গোষ্ঠীর। কাজল শেখ ফোন ধরেননি। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বলেন, ‘‘দাদা দীর্ঘ দিন গ্রাম ছাড়া। তাঁকে ঘিরে যে অভিযোগ, তা মিথ্যে।’’
পঞ্চায়েত অফিসে বিক্ষোভের খবর পেয়ে, ঘটনা স্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী যায়। প্রথমে তাঁরা বিক্ষোভকারীদের সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু মজুররা তাঁদের অবস্থানে অনড় থাকায়, শেষ পর্যন্ত তাড়া করে পুলিশ। ছত্রভঙ্গ হয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
পুলিশের ভয়ে ইতস্তত ছরিয়ে ছিটিয়ে থাকা বাহিরী গ্রামের শেফালি দাস, সাধনা দাস, মেনেকা দাস, পাঁচশোয়ার রেনুকা বিশ্বাস, আমিন শেখরা জানান, ‘‘আমাদের জব কার্ড এবং পাস বই এলাকার উত্তম দাস এবং জহর হাজরা দীর্ঘ দিন ধরে আটকে রেখেছে। অথচ আমরা কেউ ২১ দিন কেউ ২৫ কেউ ৪২ দিন কাজ করেছি। কিন্তু টাকা পায়নি। জব কার্ড এবং পাশবই চাইতে গেলে ওরা হয়রান করছে। খবর নিয়ে জানতে পেরেছি আমাদের পাস বই থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ওই টাকা নেওয়ার জন্য আমরা পার্টি অফিস এবং পঞ্চায়েতে এসেছিলাম।’’
এ দিন বাহিরী-পাঁচশোয়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান শ্যামলী দাস বলেন, “অভিযোগ পেলে বিডিওকে জানিয়ে নিয়ম মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ওই পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান হাসমত মোল্লা বলেন, “মাস দেড়েকের কিছু বেশি সময় ধরে পঞ্চায়েত অফিসে যেতে পারছি না। জানিনা কি হয়েছে।”
পুলিশ ওই বিক্ষোভের জায়গা থেকে এ দিন দু’জনকে আটক করেছে। বোলপুরের বিডিও শমিক পাণিগ্রাহী বলেন, “শ্রমিকদের পাসবই বা জবকার্ড নিজেদের কাছে থাকার নিয়ম। এক্ষেত্রে কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখছি। লিখিত অভিযোগ পেলে, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy