ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষায় সফল দেবদূত সাহা। নিজস্ব চিত্র।
চাই একাগ্রতা, ইচ্ছেশক্তি এবং অধ্যবসায়। সেখানে মফস্সল, বাংলা মাধ্যম স্কুল, নিম্নবিত্ত পরিবার—কিছুই যে অন্তরায় নয়, ইউপিএসসি আয়োজিত ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিসে উত্তীর্ণ হয়ে তা প্রমাণ করলেন বীরভূমের দেবদূত সাহা। সর্বভারতীয় ওই মর্যাদাপূর্ণ পরীক্ষায় সফল হয়েছেন মাত্র ৩৩ জন। দেবদূতের নাম রয়েছে ৩০ নম্বরে।
পরীক্ষার ফল সামনে আসতেই খুশির হাওয়া মহম্মদবাজারের বিষ্ণুপুর কুলকুড়ি গ্রামে, দেবদূতের বাড়িতে। দেবদূত এই মুহূর্তে মহম্মদবাজারের সারেন্ডা শাখা ডাকঘরের পোস্টমাস্টার পদে কর্মরত। মাত্র ২৫ বছরে এমন সাফল্যের পরে দেবদূত বলছেন, ‘‘স্বপ্ন পূরণ হল।’’ তাঁর বাবা পিন্টু সাহা, মা ছায়া সাহার কথায়, ‘‘আমরা আপ্লুত। ছেলেকে এমন উচ্চতায় পৌঁছতে দেখলে বাবা-মায়ের কাছে এর থেকে বেশি খুশির খবর আর কী-ই হতে পারে!’’
দফতরের তরুণ এক কর্মীর এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত ডাক বিভাগের আধিকারিকেরা। বীরভূমের পোস্টাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট বিপ্লব ভট্টাচার্য এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট পোস্টাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট টি এন ভাদুড়ি দেবদূতকে সংর্বধনা জানানোর জানিয়েছেন। সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে ডাক বিভাগের কর্মী সংগঠনের পক্ষ থেকেও।
তবে, এগোনোর পথটা মসৃণ ছিল না ওই যুবকের। ২০১৪ সালে এলাকার বিষ্ণুপুর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক দেন দেবদূত। স্কুলের সেরা হন তিনি। এর পরে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন বীরভূম জেলা স্কুলে। অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবার। মহম্মদবাজারের গ্রাম থেকে প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াতেই অনেকটা সময় কেটে যেত। উচ্চ মাধ্যমিকেও খুব ভাল করেন দেবদূত। বরাবরই অঙ্কে ভাল দেবদূতের ইচ্ছে ছিল, রাশিবিজ্ঞান বা স্ট্যাটিসটিক্স নিয়ে পড়াশোনা করা। চেষ্টা করেছিলেন আইএসআই থেকে পড়াশোনা করতে। কিন্তু, প্রবেশিকায় সফল হতে পারেননি। ২০১৭ সালে স্ট্যাটিসটিক্সে অনার্স নিয়ে বিশ্বভারতীতে ভর্তি হন। স্নাতক হওয়ার পরে কানপুর আইআইটি থেকে স্নাতকোত্তর করার সুযোগ পান দেবদূত। একই সঙ্গে ডাক বিভাগের বিপিএম (ব্রাঞ্চ পোস্ট মাস্টার) চাকরিও পান। দেবদূত বলছেন, ‘‘বাবা বলার মতো কিছু করেন না। দুই দিদির বিয়ে হয়ে গেলেও বাড়িতে চার জন। মূলত ঠাকুমার পেনশনে পরিবার চলত। তাই আইআইটি যাওয়ার থেকে ডাক বিভাগের চাকরি নেওয়াই সঠিক মনে হয়েছিল।’’ কিন্তু, সর্বভারতীয় এই পরীক্ষায় সফল হওয়ার ইচ্ছেটা থেকে গিয়েছিল। দেবদূত জানান, চাকরির ফাঁকে ইউপিএসসি-র প্রস্তুতি শুরু করেন।
গুরুত্বপূর্ণ সিভিল সার্ভিসের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলি আয়োজন ইউপিএসসি। চারটি পেপার মিলিয়ে মোট ১০০০ নম্বরের পরীক্ষা। পরে দিতে হয় ২০০ নম্বরের ইন্টারভিউ। গত জুন মাসে পরীক্ষা হয়েছিল। মোট ৯০ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইন্টারভিউ হয় গত ডিসেম্বরে। ফল বেরোনোর পরে দেখা যায়, সফলদের তালিকায় নাম রয়েছে তরুণ পোস্ট মাস্টারের।
দেবদূতের কথায়, ‘‘আমি আগেরবারও লিখিত পরীক্ষায় পাশ করে ইন্টারভিউ পর্যন্ত গিয়েছিলাম। কিন্তু, সেখানেই আটকে যাই। আমাকে প্রস্তুতি নেওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করেছেন জেলা পরিসংখ্যান দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা হেমন্ত সরকার।’’ হেমন্ত সরকার বলেন, ‘‘অত্যন্ত শক্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন সর্বভারতীয় পরীক্ষায় সফল হয়েছেন দেবদূত। জেলার এক তরুণের এই সাফল্যে আমি খুব খুশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy