পথে মধুসূদন মাহাতো। নিজস্ব চিত্র
ডিজে সাউন্ড বক্সের চড়া শব্দ কতটা ক্ষতি করে জানেন? মানুষের শ্রবণ ক্ষমতা চিরকালের জন্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে? ক্ষতি হতে পারে গর্ভস্থ শিশুর, বয়স্ক মানুষজনের। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ডিজে সাউন্ড বক্স বাজানোর বিরুদ্ধে এ ভাবেই সচেনতনতার প্রচার করে জনমত তৈরি করছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক মধুসূদন মাহাতো। পঞ্চায়েত কর্মী মধুসূদন সময় পেলেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন। ডিজে সাউন্ড বক্সের ক্ষতিকারক দিক নিয়ে লেখা ছোট ছোট বোর্ড ঝোলে তাঁর সাইকেলে। পুরুলিয়া ১ ব্লকের কাঁটাবেড়া গ্রামের বাসিন্দা মধুসূদন ইতিমধ্যে গাড়াফুসড়, রুদড়া, কাঁটাবেড়া, সিন্দরি, ডিমডিহা, চাষরোড-সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে ফেলেছেন।
ডিজে সাউন্ডবক্সের দাপাদাপি বন্ধ করতে গত মে মাসে মধুসূদন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেছিলেন। পুলিশ আসরে নেমে অনুমতি ছাড়া প্রকাশ্যে অত্যন্ত তীব্র শব্দে ডিজে সাউন্ডবক্স ব্যবহারের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযান শুরু করে। একাধিক থানা ডিজে সাউন্ডবক্স বাজেয়াপ্ত করে। রাতে চড়া শব্দে ডিজে সাউন্ডবক্স ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় ঝালদা থানার তুলিনে গুলিও চলে। পুরুলিয়া মফস্সল থানার রুদড়া গ্রামে চড়া শব্দে ডিজে সাউন্ডবক্স ব্যবহারে আপত্তি জানানোয় পুলিশকেও হেনস্থার শিকার হতে হয়। মধুসূদনকেও অনেকে হুমকি দেন বলে থানায় অভিযোগ হয়।
মধুসূদনের কথায়, ‘‘এত দিন ডিজে সাউন্ড বক্সের দৌরাত্ম্য বন্ধ ছিল। চড়ুইভাতি শুরু হওয়ায় আবার নানা জায়গা থেকে ডিজে সাউন্ড বক্স বাজানোর অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। সামনেই সরস্বতী পুজো। মণ্ডপে মণ্ডপে ফের ডিজে সাউন্ড বক্সের দাপাদাপিতে মানুষজনের জীবন অতিষ্ঠ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে নিয়ম মেনে সাউন্ড বক্সের ব্যবহার নিয়ে কারও কোনও আপত্তি থাকার কথা নয়। আমি গ্রামে গ্রামে ঘুরে তাই মানুষজনকে সচেতন করছি।’’
তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে পেশায় শিক্ষক আড়শার বামুনডিহা গ্রামের দেবীলাল মাহাতো, পুরুলিয়া ১ ব্লকের রানিবাঁধ গ্রামের শঙ্কর মাহাতো ও কাঁটাবেড়া গ্রামের গণেশচন্দ্র মাহাতো, নির্মল মাহাতোরা বলেন, ‘‘মধুসূদন ঠিক কথাই বলছেন। ক্ষণিকের আনন্দের জন্য আমরা প্রচণ্ড চড়া শব্দে সাউন্ড বক্স ব্যবহার করি বটে, ভাবি না তা অন্যের সমস্যার কারণ হতে পারে।’’
পুরুলিয়া জেলা সাউন্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্প্রতি বিধি মেনে সাউন্ডবক্স ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি সুব্রত মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা প্রশাসনের কাছে বিধি মেনে সাউন্ডবক্স ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছি। প্রশাসন আমাদের সাউন্ড ‘লিমিটার’ লাগানোর কথা বলেছে। এর ফলে বিধি মেনে সাউন্ড বক্সের ব্যবহার হচ্ছে কি না, তা বোঝা যাবে।’’
কলকাতা এসএসকেএম-এর নাক-কান-গলা বিভাগের চিকিৎসক অমিতবিক্রম মাইতি বলেন, ‘‘চড়া শব্দে কানের ভিতরের পর্দা ফেটে যেতে পারে। কানের ভিতরে কয়েকটি হাড়ের সন্ধি খুলে যেতে পারে, স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি চিরদিনের মতো শ্রবণ ক্ষমতা হারাতে পারে।’’ পুরুলিয়া মেডিক্যালের চিকিৎসক তথা পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ লড়াই মধুসূদনের একার নয়, আমরা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ তাঁর সঙ্গে রয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy