ধর্নায় বসে আদিবাসী পরিবারের সদস্যেরা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
ডাইন অপবাদে তারা প্রায় তিন বছর ধরে ঘরছাড়া এক আদিবাসী পরিবারের ১৪ জন সদস্য। কখনও তাঁদের কেটেছে খোলা আকাশের নীচে, তো কখনো কেটেছে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। প্রশাসনের তরফে বারবার তাঁদের ঘরে ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও সুরাহা না-হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বোলপুরে মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে ধর্না ও অবস্থানে বসলেন পরিবারটির ১৪ জন সদস্য।
গ্রামে ফেরানোর বন্দোবস্ত প্রশাসন না-করা পর্যন্ত এই অবস্থান চলবে বলে পরিবারটি জানিয়েছে। যদিও প্রশাসনের তরফে এবারও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “এটি তিন বছরের পুরনো সমস্যা। আমি সবে জেলায় এসেছি। বিষয়টি শোনার পরেই সব দিক থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে পরিবারটিকে যাতে দ্রুত গ্রামে ফেরানো যায়।” অন্য দিকে, মহকুমাশাসক অয়ন নাথ বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে ওই পরিবারকে সুরক্ষিত কোনও জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করা যায়।’’ কিন্তু, সে চেষ্টা কবে ফলপ্রসূ হবে, কবে ভিটে ফিরে পাবে নির্যাতিত পরিবারটি, তার সদুত্তর প্রশাসনের তরফে মেলেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে বোলপুর থানার সিয়ান মুলুক গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মণিকুণ্ডুডাঙা গ্রামে হঠাৎ করে বেশ কিছু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন ও গ্রামের মোড়লের দু’টি ছাগল ও এক প্রতিবেশী যুবকের চারটি হাঁস মারা যায়। অভিযোগ, গ্রামের মোড়ল সালিশি সভা বসিয়ে ওই আদিবাসী পরিবারের সদস্যদের গ্রামছাড়া করা নিদান দেন। এরপরই গ্রামবাসীদের একাংশ ওই পরিবারের উপর চড়াও হয়ে তাঁদের ডাইনি অপবাদ দিয়ে মারধর করে শিশু-সহ ১৪ সদস্যকে গ্রাম ছাড়া করে বলে অভিযোগ। গ্রামের মানুষের একাংশের কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের কারণে তাঁদের আজও গ্রামের ফেরানো যায়নি।
গত শুক্রবার ওই আদিবাসী পরিবারের সদস্য এবং তফসিলি জাতি, জনজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু যৌথ মঞ্চের সদস্যেরা এসডিপিও (বোলপুর) নিখিল আগরওয়ালের সঙ্গে দেখা করেন। পরিবারটির অভিযোগ, ফের তাঁদের বাড়ি ফেরানোর ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়। কিন্তু, লাভের লাভ কিছু হয়নি। তাই এ দিন মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে বাড়ি ফেরানোর দাবিতে ধর্নায় বসেছেন পরিবারটির সব সদস্য এবং তফসিলি জাতি, জনজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু যৌথ মঞ্চের সদস্যেরা। ওই পরিবারের এক পুরুষ সদস্য বলেন, “আমরা এতদিন ধরে ঘরছাড়া। তাই আমরা আর কোনও আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতি চাই না, ঘরে ফিরতে চাই। ঘরে না ফেরা পর্যন্ত আমাদের ধর্না-অবস্থান চলবে।” সংগঠনের সভাপতি বৈদ্যনাথ সাহা বলেন, “বহু জায়গায় আবেদন নিবেদন করেও কাজ না হওয়ায়, পরিবারটিকে গ্রামে ফেরাতে শেষ পর্যন্ত আমাদের ধর্নায় বসতে হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy