কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাচ্ছেন মহম্মদ হান্নান। (ডান দিকে) একই গন্তব্যে কামাল হাসান। রামপুরহাটে তোলা নিজস্ব চিত্র।
আগের দিনই দুই আসনের কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে মিছিলে হাঁটতে দেখা গিয়েছিল বাম নেতা-কর্মীদের একাংশকে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মনোনয়নপত্র জমা করলেন সেই রামপুরহাট ও হাঁসন কেন্দ্রের ঘোষিত বামফ্রন্টের দুই প্রার্থী। যদিও বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, দু’টি আসন নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনার পথ খোলা রয়েছে। শাসকদল তৃণমূলের সুবিধা হয়, এমন কোনও দিকে কোনও পক্ষই এগোবে না। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এই বার্তাই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে দু’পক্ষের নিচুতলায়।
ঘটনা হল, তৃণমূলকে হারানোর বৃহত্তর লক্ষ্যে জেলার প্রায় সব ক’টি আসনেই মসৃণ সমঝোতার দিকে এগিয়ে যেতে পেরেছে বাম ও কংগ্রেস। সম্প্রতি সাঁইথিয়া নিয়ে জটিলতা কেটে গিয়েছে। বাকি রয়েছে কেবল রামপুরহাট ও হাঁসন। যেখানে প্রথমে বামফ্রন্ট তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছিল। রামপুরহাটে ফরওয়ার্ড ব্লকের মহম্মদ হান্নান এবং হাঁসনে আরসিপিআই-এর কামাল হাসান। কিন্তু, ওই দুই আসন চেয়ে কংগ্রেসও তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। রামপুরহাটে টিকিট দেওয়া হয় জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি এবং হাঁসনে জেলা আইএনটিউসি সভাপতি মিলটন রশিদকে। বাম-কংগ্রেস কোনও একপক্ষ এখনও পর্যন্ত প্রার্থী প্রত্যাহার না করলেও শুক্রবারই ওই দুই কেন্দ্রে জোটের জোরাল ছবি দেখা গিয়েছিল রামপুরহাট ও মাড়গ্রামে। মিছিলে কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে পা মিলিয়েছিলেন বামেদের একঝাঁক স্থানীয় নেতা-কর্মী।
শনিবার সকালে অবশ্য বামফ্রন্টের সিদ্ধান্ত মোতাবেক মিছিল করে এসে রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসনিক ভবনে নিজেদের মনোনয়নপত্র জমা দেন হান্নান ও কামাল। সেখানে যাওয়ার আগে শ’খানেক কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সিপিএমের রামপুরহাট শহরের দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হন হান্নান। সিপিএমের দলীয় কার্যালয় থেকে ঘণ্টা দুয়েক পরে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মন এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার ভক্তিপদ ঘোষের সঙ্গে হান্নান প্রশাসনিক ভবনে মনোনয়ন জমা দিতে যান। তার আগে বাম ও কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা করেন নলহাটি কেন্দ্রের ফব প্রার্থী তথা দলের জেলা সম্পাদক দীপক চট্টোপাধ্যায়। দীপক এবং হান্নানের মনোনয়নপত্র জমা হওয়ার পরে প্রশাসনিক ভবনে মিছিল করে আসেন হাঁসনের আরসিপিআই প্রার্থী কামাল হাসান। সঙ্গে ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গোকুল ঘোষ, বুধিগ্রাম অঞ্চলের সিপিএম নেতা বানু শেখ, সিপিএম নেতা মসিউর রহমান ববি, ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা কদম রসুল।
শুক্রবারের মিছিল নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি বামেদের ওই নেতারা। সঞ্জীববাবু এ দিন বলেন, ‘‘মহম্মদ হান্নান বামফ্রন্টের প্রার্থী। আমি রামপুরহাট বিধানসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত বামফ্রন্ট কর্মী। ওঁর মনোনয়নপত্র জমার দায়িত্ব আমার উপর আছে। তাই এসেছি।’’ হান্নান এবং কামাল দু’জনেই এক সুরে এ দিন জানান, নেতৃত্বের নির্দেশেই তাঁরা এ দিন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও নেতৃত্ব যা নির্দেশ দেবে, তা-ই তাঁরা করবেন। সে ক্ষেত্রে শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ পেলে নিজেদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না, বাম-কংগ্রেস দু’পক্ষই। কারণটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এ দিন উপস্থিত ভক্তিপদবাবুই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দু’পক্ষই অনড় থাকলে তৃণমূলেরই সুবিধা হবে।’’ এই পরিস্থিতিতে দু’পক্ষের নিচুতলার একাংশে ক্ষোভ থাকলেও বৃহত্তর স্বার্থে আত্মত্যাগই শ্রেষ্ঠধর্ম বলে মনে করছেন দু’দলের নেতারা। সে ক্ষেত্রে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ে না যেতে পারলে যে আখেরে দু’পক্ষেরই ক্ষতি, তা-ও বুঝতে পারছেন তাঁরা। তাই বাম-কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এ বিষয়ে দ্রুত বিভ্রান্তি দূর করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপাতে চাইছে দুই দলই।
এক পক্ষ মনোনয়নপত্র জমা দিলেও সেই সুরই শোনা গিয়েছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম, জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদার মুখেও। তাঁরা বলছেন, ‘‘রাজ্য নেতৃত্ব আলোচনা করছে। এখনও চড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় রয়েছে। একের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ে যাওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। তার জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালাব।’’ ওই দুই আসনে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ এড়াতে তাঁরাও সব রকমের চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন জিম্মিও। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘তৃণমূলকে হারাতেই হবে। এটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy