বাঁকুড়া পুলিশ সুপারের অফিসে উদয়ন দাস। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
উদয়ন দাসের বাবা-মায়ের পাসপোর্ট এবং মায়ের ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ খুঁজে পাওয়াটাই কাল হয়েছিল বাঁকুড়ার আকাঙ্ক্ষা শর্মার। নিজেদের হেফাজতে রাখার শেষ দিন, মঙ্গলবার উদয়নকে পাশে নিয়ে বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হিরা দাবি করলেন, ‘‘বাবা-মায়ের জোড়া খুন লুকোতে গিয়েই আকাঙ্ক্ষাকে খুন করে উদয়ন। খুনটা হয়েছিল গত ১৫ জুলাই।’’
উদয়নের দেওয়া নকল নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে বছর আঠাশের আকাঙ্ক্ষা ভেবেছিলেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ‘ইউনিসেফ’-এ চাকরিটা পেয়ে গিয়েছেন। সেই চাকরিতে যোগ দেওয়ার আশায় তিনি বাঁকুড়ার বাড়ি ছেড়েছিলেন গত ২৩ জুন। পুলিশ জেরায় জেনেছে, উদয়ন তাঁকে বুঝিয়েছিল, কাজে যোগ দেওয়ার আগে দু’দিন ভোপালে সাকেতনগরে উদয়নের বাড়িতে ছুটি কাটাতে। তার পর থেকে উদয়ন কবে তাঁকে আমেরিকায় নিয়ে যাবে সেই আশায় ছিলেন আকাঙ্ক্ষা।
পুলিশ সুপার জানান, সাকেতনগরে গিয়ে দু’দিন কাটার পরে উদয়নের মতিগতি দেখে সন্দেহ হয় আকাঙ্ক্ষার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে দু’জনের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। এরই মাঝে আলমারি ঘেঁটে আকাঙ্ক্ষা হাতে পান, উদয়নের বাবা বীরেন্দ্র দাস ও মা ইন্দ্রাণী দাসের পাসপোর্ট (জাল) এবং ইন্দ্রাণীদেবীর ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ (কারচুপি করে তৈরি করা)। যদিও উদয়ন আকাঙ্ক্ষাকে জানিয়েছিল, তার বাবা-মা দু’জনেই বিদেশে থাকেন। ওই নথি হাতে পেয়ে উদয়ন সম্পর্কে ভুল ধারণা ভাঙে আকাঙ্ক্ষার। তিনি কোনও ভাবে মোবাইল জোগাড় করে ১২ জুলাই ভোপাল থেকে হাওড়া হয়ে বাঁকুড়া ফেরার ট্রেনের টিকিট কাটেন। ট্রেন ছিল ২৩ জুলাইয়ের। কিন্তু তিনি নাগালের বাইরে চলে গেলে উদয়নের আসল রূপ প্রকাশ্যে আসার আশঙ্কা ছিল। তাই ১৫ জুলাই উদয়ন গলা টিপে আকাঙ্ক্ষাকে খুন করে।
আরও পড়ুন: অপহরণের নাটক ফেঁদে প্রেমিকের সঙ্গে দিঘায় বধূ
কিন্তু সব জানার পরেও কেন উদয়নের বাড়িতে রয়ে গিয়েছিলেন আকাঙ্ক্ষা? তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, উদয়ন আকাঙ্ক্ষাকে হাতে-পায়ে দড়ি বেঁধে বাড়িতে ফেলে রাখত। তাই তিনি বেরোতে পারেননি। সেই দড়িও পুলিশ পেয়েছে।
মোবাইল হাতে পেয়েও আকাঙ্ক্ষা বাবা-মা-কে ফোনে সব জানালেন না কেন? পুলিশের দাবি, জেরায় উদয়ন তাদের জানিয়েছে, তার স্বরূপ জেনে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন আকাঙ্ক্ষা। উদয়নকে তিনি বলেছিলেন, ‘আমেরিকায় চাকরির কথা বলে বাড়ি ছেড়েছি। এখন সেখানে যাওয়া হচ্ছে না, সে কথা বাড়িতে কোন মুখে বলব’? আকাঙ্ক্ষার বাবা শিবেন্দ্র শর্মার আক্ষেপ, ‘‘মেয়ে যদি এক বারও জানাত, ও সমস্যায় পড়েছে, তা হলে ভোপালে গিয়ে ওকে উদ্ধার করতাম। এ দিন দেখতে হতো না! এ ঘটনার জন্য যে দায়ী, তার ফাঁসি চাই।’’
নীল শার্ট-প্যান্ট, স্ট্রাইপড ব্লেজার পরা উদয়ন এ দিন সামান্য সময়ের জন্য পুলিশ সুপারের ডাকা সাংবাদিক বৈঠকে হাজির ছিল। মুখ-চোখ নির্বিকার। হাতে হাতকড়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy