শিশুর পরিজনদের বোঝাচ্ছেন এসডিও-সহ আধিকারিকেরা। নিজস্ব চিত্র।
চরম অপুষ্টিতে ভুগছে শিশু। ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটা কম, শরীরে হাড়-পাঁজর বেরিয়ে পড়েছে। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের পরামর্শ সত্ত্বেও পুষ্টি পুর্নবাসন কেন্দ্রে শিশুটিকে নিয়ে যাননি বাড়ির লোকজন। খবর পেয়ে মঙ্গলবার নিজে সাঁতুড়ির ঢেকশিলা গ্রামে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে শিশুটিকে পুষ্টি পুর্নবাসন কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক (এসডিও) প্রিয়দর্শিনী ভট্টাচার্য।
ঢেকশিলার মালপাড়ায় এ দিন অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে শিশুটির বাড়িতে যান মহকুমাশাসক। সঙ্গে ছিলেন সাঁতুড়ির ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) আশিস বিশ্বকর্মা। বাড়িতেই শিশুটির স্বাস্থ্যপরীক্ষা করেন বিএমওএইচ। তিনি বলেন, ‘‘দেখা গিয়েছে, চরম অপুষ্টি ছাড়াও মাস তিনেকের শিশুটি নিউমোনিয়া ও চর্মরোগে ভুগছে।’’ মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘প্রথমে শিশুটিকে পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে পাঠানো হবে পাড়া ব্লকের পুষ্টি পুর্নবাসন কেন্দ্রে।’’
প্রশাসনের হিসেবে, রঘুনাথপুর মহকুমায় ছ’শোর বেশি শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। তাদের পুষ্টি পুর্নবাসন কেন্দ্রে পাঠানোর পরামর্শ বারবার দিয়েছেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। কিন্তু হাতেগোনা কয়েক জন ছাড়া, শিশুদের নিয়ে সেখানে যেতে চাইছে না বেশির ভাগ পরিবারই। তা নজরে আসার পরেই, অপুষ্ট শিশুদের জন্য গ্রামীণ এলাকায় পুষ্টি পুর্নবাসন কেন্দ্রের পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকদের পাঠিয়ে শিবির করছে প্রশাসন। কিন্তু ঢেকশিলা গ্রামের মালপাড়ার বাসিন্দা অরূপ মাল ও টুম্পা মালের তিন মাসের শিশুটিকে পুষ্টি পুর্নবাসন কেন্দ্রে দ্রুত না পাঠালে তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে পারত বলে জানাচ্ছে প্রশাসন। সে খবর পেয়েই পদক্ষেপ করেন মহকুমাশাসক।
ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের মতে, শিশুটির মায়ের বয়স বছর কুড়ি। তাঁর শারীরিক গঠন অনুযায়ী, এই সময়ে মাতৃত্ব না হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। জন্মের পর থেকে মাতৃদুগ্ধ পায়নি শিশুটি। গরিব পরিবারটির পক্ষে বিকল্প পুষ্টিকর খাবার কিনে খাওয়ানো সম্ভব হয়নি। সুসংহত শিশু বিকাশ দফতর সূত্রের খবর, আগে অনেক বুঝিয়ে শিশুটি ও তার বাবা-মাকে পাড়ায় পুষ্টি পুর্নবাসন কেন্দ্রে পাঠান হয়েছিল। সিডিপিও সায়ন্তনী ঘোষ বলেন, ‘‘পাড়ায় চিকিৎসক শিশুটিকে পরীক্ষা করে কয়েক দিনের জন্য রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির কথা শুনেই বাড়িতে চলে আসেন ওঁরা।’’
গ্রামে গিয়ে এ দিন সকালে শিশুটির বাবা-মা ও ঠাকুমাকে বোঝান মহকুমাশাসক। পরে, তিনি বলেন, ‘‘চরম অপুষ্টি-সহ কিছু রোগে ভুগছে শিশুটি। চিকিৎসা ও পুষ্টি পুনরুদ্ধারের কাজ দ্রুত শুরু করা প্রয়োজন।’’ শিশুটির ঠাকুমা নেহেরি মাল জানান, তিনি পরিচারিকার কাজ করেন। ছেলে অরূপ গরু বাগালির কাজ করেন। দিনভর তাঁরা বাইরে থাকেন। তাঁর দাবি, ‘‘নাতিকে নিয়ে বৌমা বাইরে চলে গেলে সংসার কে দেখভাল করবে, তা ভেবেই পাঠানো হয়নি।’’
মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাড়ির লোকজনের নানা মানসিক বাধার সঙ্গেও লড়তে হচ্ছে আমাদের। শুধু শিশুর মাকে বোঝালে হবে না। পরিবারে সাধারণত সিদ্ধান্ত নেন পুরুষ তথা শিশুর বাবা। তাঁদেরও বোঝাতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy