n ময়না মাঝি (ডানে)। পাশে, মাম্পু মাহাতো। নিজস্ব চিত্র
পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিক্ষিকার নজরে পড়েছিল, উত্তরপত্রে কিছু না লিখে সাদা খাতা নিয়ে বসে রয়েছে মেয়েটি। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন, ভাল করে দেখতে পায় না সে। অনেক চেষ্টায় আবছা কিছু দেখতে পেলেও যেটুকু নজরে আসে, তাতে লেখা যায় না। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে, দ্রুত পদক্ষেপ করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ-সহ স্কুল পরিদর্শক। এক রাতের মধ্যে শ্রুতিলেখকের ব্যবস্থা হওয়ার পরে, পরবর্তী পরীক্ষাগুলি দিতে পারছে বাঁকুড়ার রানিবাঁধ থানার চিলাগাড়া গ্রামের ওই ছাত্রী ময়না মাঝি।
রানিবাঁধ ব্লকের শুক্লাদেউলি হাইস্কুলের ছাত্রী ময়নার পরীক্ষাকেন্দ্র পড়েছিল রানিবাঁধ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। গত সোমবার, মাধ্যমিকের প্রথম দিনে পরীক্ষায় বসেছিল সে। কিন্তু ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তির কারণে কিছু লিখতে পারছিল না। রানিবাঁধ চক্রের স্কুল পরিদর্শক তথা ওই কেন্দ্রের অফিসার ইন-চার্জ সুমন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রানিবাঁধ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মঞ্জু মণ্ডল-সহ স্কুলের অন্যদের কাছে খবরটি পেয়ে দ্রুত ওই ছাত্রীর স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কথা বলা হয় মাধ্যমিক স্কুলশিক্ষা সংসদের মেদিনীপুর অফিসে।
তিনি আরও জানান, সেখান থেকে আশ্বাস মেলার পরে, শ্রুতিলেখক জোগাড় করে ময়নার স্কুলের টিচার ইন-চার্জ দুলাল মণ্ডল সোমবার রাতে যান মেদিনীপুরে। মঙ্গলবার ওই ছাত্রীর জন্য শ্রুতিলেখক দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমোদন করিয়ে ফেরেন তিনি।
শুক্রবার ছিল ইতিহাসের পরীক্ষা। পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার আগে, ময়না জানাচ্ছিল, ছোট থেকে সে দেখতে পায় না। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও বান্ধবীদের কাছ থেকে পড়া শুনে মনে রেখে পরীক্ষা দিয়েছে এত দিন। তাঁর কথায়, “মাধ্যমিকের ফর্ম পূরণ করলেও দেখতে পাই না বলে পরীক্ষা দেব না বলে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু অ্যাডমিট কার্ড বাড়িতে পৌঁছনোর পরে, ঠিক করি পরীক্ষায় বসব। কিন্তু প্রথম দিন পরীক্ষায় বসেও লিখতে পারিনি। তবে শ্রুতিলেখক পাওয়ায় এখন ভাল মতো পরীক্ষা দিতে পারছি। শ্রুতিলেখকের সাহায্য নিয়ে যে এ ভাবে পরীক্ষা দেওয়া যায়, আগে জানতাম না।”
শ্রুতিলেখকের দায়িত্ব সামলানো, ময়নার স্কুলেরই নবম শ্রেণির ছাত্রী মাম্পু মাহাতো বলে, “আলাদা একটি ঘরে পরীক্ষা হচ্ছে। প্রশ্ন পড়ে শোনানোর পরে, গড়গড় করে উত্তর বলে যাচ্ছে। তা শুনে উত্তরপত্রে লিখে দিচ্ছি।” এমন কাজ করতে পেরে আনন্দ হচ্ছে, জানায় মাম্পু।
ময়নার বাবা, প্রান্তিক চাষি মানিক মাঝির কথায়, “প্রথম দিনের পরীক্ষা শেষের পরেই স্কুল কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করে এক জন ছাত্রীর সন্ধান করতে বলেন। ওর স্কুলেরই নবম শ্রেণি ছাত্রী, স্থানীয় বিক্রমডিহি গ্রামের মাম্পুর সহযোগিতা নিয়ে মেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। খুব খুশি হয়েছি।" এ ভাবে পরীক্ষা দেওয়ার কথা জানতেন না, দাবি মানিকেরও।
স্কুলের টিচার ইন-চার্জ বলেন, “খুব অল্পই দেখতে পায় মেয়েটি। তাতে কষ্ট করে পঞ্চম শ্রেণি থেকে পরীক্ষা দিয়ে এসেছে। এর জন্য অবশ্য আলাদা করে সময় দেওয়া হত।” স্কুলের তরফে আগাম ব্যবস্থা না করা নিয়ে তিনি বলেন, “মেয়েটি পরীক্ষা দেবে না বলেই জানিয়েছিল। তাই কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি।” মেয়েটি পরীক্ষা দিতে পারছে জেনে ভাল লাগছে, জানিয়েছেন এসআই-ও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy