মুখোমুখি: বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির নেতারা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।
ঘণ্টা সাতেকের বাঁকুড়া সফরে বৃহস্পতিবার যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, জনতার কাছে পৌঁছতে চেষ্টা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। জনতাও পাল্টা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। খোদ শাহের দাবি, ‘‘যেখানেই যাচ্ছি, এমন উষ্ণ অভ্যর্থনা পাচ্ছি।’’ ঘটনায় উজ্জীবিত জেলা বিজেপি শিবির। যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে দেখার উৎসাহ মানেই তাঁর দলকে সমর্থন করা নয়।
সদ্য করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়া কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বৃহস্পতিবার সকালে বাঁকুড়ার পোয়াবাগানে বেশ কিছুক্ষণ মাস্কহীন অবস্থায় থেকে স্বাস্থ্য-বিধি ভেঙেছেন বলে অভিযোগও তুলেছে তৃণমূল। শাহকে ঘিরে যে ভিড় হয়েছিল, করোনা-আবহে তা অভিপ্রেত নয় বলেও দাবি তাদের। তৃণমূলের জেলা পরিষদের মেন্টর অরূপ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘মাস্কহীন অবস্থায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী লোকজনের কাছে গিয়ে স্বাস্থ্য-বিধি ভেঙেছেন। গোটা বিশ্বে যেখানে করোনা সংক্রমণের বাড়াবাড়ি চলছে, সেখানে এ দিন পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি না মেনে জমায়েত করাটাও বিচক্ষণতার পরিচয় নয়।’’ যদিও বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্রের দাবি, ‘‘অমিতজি সর্বক্ষণ জনতার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন।’’ পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি ভাঙার অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘অমিতজিকে দেখতে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এসেছেন।’’
এ দিন সকালে পোয়াবাগানে বীরসা মুন্ডার ছবিতে মাল্যদান করে কর্মসূচির সূচনা করেন শাহ। বাঁকুড়া জেলার কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রের জয়-পরাজয়ের অনেকখানি নির্ভর করে আদিবাসী ভোট। এ দিন পোয়াবাগানে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে শাহ অভিযোগ করেন, কেন্দ্রের প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার তা আটকে দিয়ে আদিবাসীদের বঞ্চনা করছে। অভিযোগ মানেননি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। জেলা তৃণমূলের নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরার কথায়, ‘‘উনি ভিত্তিহীন কথা বলছেন। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে টাকা না দিয়ে রাজ্যকে বঞ্চনা করে চলেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধ্যের অতীত করে আদিবাসী ভাইবোনেদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।’’
জেলা রাজনীতির নিয়মিত ওঠাপড়ার পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, গত লোকসভা ভোটে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম জেলার জঙ্গলমহলে ভাল ফল করেছে বিজেপি। জেলার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রেও লোকসভা ভোটের নিরিখে এগিয়ে ছিল শাহের দল। এ বার বিধানসভা নির্বাচনেও যে বিজেপি নেতৃত্ব এই এলাকায় আরও প্রবল ভাবে ঝাঁপাতে চাইছেন, এ দিন অমিত শাহের কর্মসূচির সূচনায় তা স্পষ্ট।
পোয়াবাগানের অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছেই শাহ ব্যারিকেড ধরে কিছুক্ষণ হেঁটে জনতাকে অভিবাদন জানাতে থাকেন। অনুষ্ঠানের পরেও বারবার হাত নাড়তে থাকেন। তা দেখে জনতার একটা বড় অংশ ব্যারিকেড টপকে তাঁর কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করে। সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা হয় পুলিশ ও শাহের নিরাপত্তায় থাকা এসপিজি রক্ষীদের। পথ আটকে যাওয়ায় পূর্ব ঘোষণা না থাকলেও মিনিটখানেক শাহ সেখানে সাংবাদিক বৈঠক করে, বিধানসভা ভোটে রাজ্য থেকে তৃণমূলকে উপড়ে ফেলার আবেদন জানান।
বাঁকুড়া শহরে শাহের কনভয় ঢুকতে, সেখানেও রাস্তার দু’পাশে ভিড় নজরে আসে। রবীন্দ্রভবনের বাইরেও ছিল বিজেপি কর্মী ও সাধারণ মানুষের থিকথিকে ভিড়। মধ্যাহ্নভোজে বাঁকুড়া ১ ব্লকের চতুর্ডিহি গ্রামে গিয়েও ভিড় দেখেছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
শাহের সফরকে ঘিরে বাঁকুড়া শহরের রাস্তাঘাটে বিজেপি কয়েকদিন ধরে বেশ কয়েকটি গেরুয়া গেট বসায়। শহরের আনাচে-কানাচে ছেয়ে গিয়েছিল বিজেপির দলীয় পতাকায়। এ দিন সকালে বাসিন্দারা দেখেন, শাহের ছবি দেওয়া ব্যানারের পাশে বহু জায়গায় তৃণমূল নেত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিও টাঙানো হয়েছে।
বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র বলেন, ‘‘অমিতজির এই কর্মসূচিতে বাঁকুড়াবাসীর উৎসাহ ছিল তুঙ্গে। সর্বত্রই মানুষ তাঁকে উষ্ণ অর্ভ্যর্থনা জানিয়েছেন। এতেই রাজ্যে বিধানসভার পরিবর্তনের আভাস তৃণমূল পেয়ে গিয়েছে।’’
যদিও বাঁকুড়া জেলা পরিষদের মেন্টর অরূপ চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, ‘‘লোকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা উন্নয়নের কাজ দেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূলকেই ভোটটা দেবেন। বিজেপির নেতারা ভোটের ফলাফলের পরেই তা বুঝতে পারবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy