Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Bangladesh Protest

ভেবেছিলাম বাঁচব না: জাবেদা

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত সপ্তাহে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে বাংলাদেশের পরিস্থিতি। এই আন্দোলনের মাঝেই আটকে পড়েছিলেন জাবেদার মতো অন্য দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা।

বাড়ি ফিরে জাবেদা।

বাড়ি ফিরে জাবেদা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মুরারই শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪ ০৮:০৭
Share: Save:

রাতভর গুলি, বোমা আর আর্তনাদের শব্দ। কলেজের সামনে পুলিশ চৌকি ভাঙচুর হয়ে গিয়েছে। ইন্টারনেট নেই। মোবাইলে পরিবারের সঙ্গে সবসময়ে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। সে থেকে ঘুম ছিল না পাইকর থানার এদরাকপুর গ্রামের বাসিন্দা বাংলাদেশের ঢাকার মগবাজারের সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী জাবেদা হকের। কার্যত চার দিন টানা যাত্রার পরে সোমবার রাতে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। এ ক’দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে এখনও আতঙ্কের ছাপ জাবেদার চোখে-মুখে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত সপ্তাহে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে বাংলাদেশের পরিস্থিতি। এই আন্দোলনের মাঝেই আটকে পড়েছিলেন জাবেদার মতো অন্য দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা।

জবেদা জানান, এ ক’বছর বাংলাদেশে পড়াশোনা করতে কোনও সমস্যা হয় নি। কিন্তু, সপ্তাহখানেক আগে থেকে পরিস্থিতি জটিল হতে শুরু করে। দ্রুত পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। গত বৃহস্পতিবার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়।

জাবেদা বলেন, ‘‘হোস্টেল থেকেই অনবরত গুলি ও বোমার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। সঙ্গে চিৎকার আর আর্তনাদ। রাতে চোখের পাতা এক করতে পারিনি। মোবাইলে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পারায় আতঙ্ক আরও বাড়ছিল। হোস্টেলের পাশে পুলিশে একটি ভবন ভাঙচুরের পরে ভেবেছিলাম আর বোধহয় বাঁচব না।’’

জাবেদা জানান, ভারতীয় পড়ুয়ারা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শনিবার কাছাকাছি সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকতে হবে। এ নিয়ে তাঁরা কলেজ কর্তৃপক্ষ ও ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য চারটি ছোট গাড়ির ব্যবস্থা করে দেন।

জাবেদা বলেন, ‘‘পড়ুয়া পিছু দু’হাজার টাকা করে দিতে হয়। জীবন হাতে নিয়ে শনিবার দুপুরে গ্রামের পথ ধরে আগরতলা সীমান্তের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলাম। শুনশান রাস্তা। বেশ কয়েকটি জায়গায় বাংলাদেশ পুলিশ গাড়ি থামলেও কলেজের কার্ড ও পাসপোর্ট দেখানোয় ছেড়ে দেয়।’’

শনিবার সন্ধ্যার সময়ে জাবেদারা আগরতলা পৌঁছে যান। জাবেদার কথায়, ‘‘আগরতলা পৌঁছে শান্তির নিশ্বাস নিয়েছিলাম সবাই।’’ আগরতলায় সরকারের পক্ষ থেকে জল ও শুকনো খাবার দেওয়া হয়। একটি হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থাও হয়েছিল। রাতে খাবারও দেওয়া হয়েছিল। বাইরে পুলিশ মোতায়েন ছিল।

তবে ট্রেনের টিকিট পেতে সমস্যা হয়েছে জাবেদার। তিনি বলেন, ‘‘টিকিটি না ৩২ ঘণ্টা ট্রেনের জেনারেল বগিতে এসেছি। চার দিন ঘুম নেই। বাড়ি ফিরে শান্তিতে ঘুমিয়েছি।’’ জবেদার মা জোবায়রা খাতুন বলেন, “মেয়ে ঘরে ফিরে আসায় নিশ্চিন্ত হলাম। যে দুশ্চিন্তায় ছিলাম তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। যে সময় কথা হচ্ছিল শুধু মেয়ে কাঁদছিল। তাতে আরও ভয় পেয়েছিলাম।” তবে জাবেদা বলেন, ‘‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার যাব কলেজে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh Protest Bangladesh Indian Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE