অপেক্ষা: বিষ্ণুপুরের বাসুদেবপুরে স্টেশনের সামনে মানিক দুলে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
কেউ ঠাট্টা করে বলেন, ‘‘মানিকদা, ট্রেন ঢুকছে। তাড়াতাড়ি কর।’’
কেউ আবার ‘মানসিক রোগী’ ভেবে পাশ কাটান।
তবে কে কী বলল, তাতে গুরুত্ব দেন না মানিক দুলে। জঙ্গল থেকে ভেঙে আনা পাতা শাল গাছের ডাল-পালা দিয়ে স্টেশনের এ মাথা থেকে ও মাথা ঝাঁট দেন তিনি। মাঝে মধ্যে নিজেকে বলেন, ‘‘কোনও না কোনওদিন তো স্টেশন চালু হবে।’’
স্টেশনের নাম ‘বিরসা মুন্ডা হল্ট’। দিনে একবার ট্রেন থামে। তবে কোনও যাত্রী ওঠেন না। নামেন-ও না। টিকিট বিক্রির বরাত পাওয়া ঠিকাদার স্টেশনে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। টিকিট বিক্রি হয় না। তাই যাত্রীও আসেন না স্টেশনে। রেলের খাতায় চালু এই স্টেশন কার্যত বন্ধ। ২০১০ সালে চালু হওয়ার সময় আলো দিয়ে মোড়া হয়েছিল স্টেশন। তৈরি হয়েছিল স্নানাগার, শৌচাগার। বসানো হয়েছিল পানীয় জলের লাইন। ঝাঁ চকচকে চেয়ার।
কালক্রমে সেগুলি চুরি হয়ে গিয়েছে। অন্ধকার নামলেই এখন শালের জঙ্গলে ঘেরা এই স্টেশনে ঘাঁটি গাড়ে অসামাজিক কার্যকলাপে যুক্ত লোকজন। ভোর হলেই দেখা যায় স্টেশনে ছড়িয়ে রয়েছে মদের বোতল, বিড়ি-সিগারেটের টুকরো, মাংসের হাড়। নিয়ম করে সেগুলি পরিষ্কার করেন মানিক।
প্রতিদিন সকালেই ছাগলের পাল নিয়ে জঙ্গলে আসেন মানিক। ছাগল চরানোর ফাঁকে শাল জঙ্গল থেকে ডালপালা ভেঙ্গে এক বার ঝাঁট দেন স্টেশন। বিকেলে বাড়ি ফেরার আগে আরেক বার। ট্রেন ঢুকলেই দৌড়ে আসেন স্টেশনে। অচেনা কাউকে দেখলেই জানতে চান, ‘‘কবে খুলবে কাউন্টার?’’
স্টেশন চালু হওয়ার পর থেকেই রোজ নিয়ম করে স্টেশনে ঝাঁট দেন মানিক। তাঁর কথায়, ‘‘এত সুন্দর একটা জায়গা, অপরিষ্কার থাকলে ভাল লাগে না। যাত্রী না-ই বা উঠলো ট্রেনে। কেউ তো দু’দণ্ড দাঁড়াতেও পারে। তাই ঝাঁট দিই।” তার পর নিজেই নিজেকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, “স্টেশন চালু হবেই।”
এখন প্রতিদিন সন্ধ্যায় এবং রাতে এই স্টেশনে থামে একটি ট্রেন। কিন্তু নামেন না কোনও যাত্রী। ট্রেনে ওঠেন না কেউ।
রেল সূত্রের খবর, চালু হওয়ার পরে দরপত্র ডেকে হল্ট স্টেশনে টিকিট বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এক ঠিকাদারকে। মাসে ৫০০ টাকা এবং টিকিট পিছু ২ টাকা করে পেতেন ঠিকাদার। রেলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সাত মাস টিকিট বিক্রি করার পর স্টেশনে আসা বন্ধ করে দেন ঠিকাদার। তাই টিকিট বিক্রি এখন হয় না।’’
রেল সূত্রের খবর, যাত্রীর সংখ্যা কম হওয়ায় টিকিট বিক্রি করে লাভ হতো না ঠিকাদারের। ফের কবে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে তা বলতে পারেননি রেলের ওই সূত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy