Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Crime against Women

দুই কিশোরীকে গণধর্ষণে ধৃত ছয় নাবালক

রামপুরহাট থানার নারায়ণপুর পঞ্চায়েতের অধীন আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে শনিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটলেও প্রথমে তা জানাজানি হয়নি।

—প্রতীকী ছবি

—প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:২৯
Share: Save:

গ্রামে বাঁদনা পরবের ধুম। সন্ধেবেলা গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নিজেদের বাড়িতে উৎসবে ব্যস্ত। সেই সময় গ্রামের দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুই কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল সাত জনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরাও সকলেই নাবালক।

রামপুরহাট থানার নারায়ণপুর পঞ্চায়েতের অধীন আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে শনিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটলেও প্রথমে তা জানাজানি হয়নি। পরের দিন, রবিবার ওই দুই কিশোরী শারীরিক অসুবিধের কথা নিজেদের পরিবারকে জানালে রাতে পুলিশে অভিযোগ হয়। পুলিশ রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া ওই গ্রামে তল্লাশি চালিয়ে ছয় কিশোরকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। বাইরে থেকে গ্রামে আসা এক অভিযুক্ত পলাতক। রাতে ধৃত ওই ছয় নাবালককে রামপুরহাটে চাইল্ড লাইনের হোমে রাখার ব্যবস্থা করে পুলিশ। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১ ধারা এবং ৩৭৬ডি (এ) ধারা-সহ পক্সো আইনের একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। সোমবার ধৃতদের সিউড়ি জুভেলাইন আদালতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে পুলিশ।

রবিবার বিকেলে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই দুই কিশোরীকে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ডাক্তারি পরীক্ষার পরে তারা সেখানেই চিকিৎসাধীন আছে। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এম এস ভি পি পলাশ দাস জানান, দুই কিশোরী আপাতত সুস্থ। আরও কিছু পরীক্ষা করা হবে।

আক্রান্ত এক কিশোরীর বাবা পেশায় পাথর ভাঙা কারখানার শ্রমিক। সোমবার সকালে তিনি জানান, তাঁর দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে মেয়েই বড়। বছর খানেক আগে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে ওই কিশোরী পড়া ছেড়ে দেয়। তিনি জানান, শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর মেয়ে পাড়ার একটি বাড়িতে ঝাড়খণ্ড থেকে আসা সমবয়সী আরেক কিশোরীকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের শেষপ্রান্তে একটি দোকানে গিয়েছিল। দোকান থেকে ফেরার পথে পাড়ারই ছ’জন নাবালক কিশোর ও বাঁদনা উপলক্ষে গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে ঝাড়খণ্ডের দুমকা থেকে আসা আরও এক নাবালক দুই কিশোরীকে মাঠের দিকে নিয়ে যায়। সেখানেই দুজনকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।

ওই কিশোরীর বাবা জানান, শনিবার সন্ধ্যায় তিনি ঘটনার কথা জানতে পারেননি। রবিবার দুপুরে অসুস্থ বোধ করায় ওই কিশোরী মাকে ঘটনার কথা জানায়। ওই কিশোরীরর বাবার কথায়, ‘‘রবিবার মেয়ের শরীর খারাপ দেখে আমরা গ্রামের মাঝি হারাম (গ্রামের মোড়ল) এর কাছে যাই। তিনি বাঁদনা পরব শেষ হওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে ফয়সালা করতে চেয়েছিলেন।’’ তবে দুই কিশোরীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় পরিজনেরা দু’জনকেই রামপুরহাট মেডিক্যালে নিয়ে যান। হাসপাতাল থেকে থানায় ঘটনার কথা জানানোর পরামর্শ দেওয়ার পরে দুই পরিবার রামপুরহাট থানায় ঘটনার কথা জানায়। পুলিশ দুই কিশোরীরই ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। রাতেই সাত জনের নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়। পুলিশ গভীর রাতে ৬ জন নাবালককে নিজেদের হেফাজতে নেয়। ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে আসা এক নাবালক পলাতক। তার খোঁজ করছে পুলিশ।

অভিযুক্তদের মধ্যে গ্রামের মাঝি হারামের এক ভাইপোও রয়েছে। মাঝি হারাম বলেন, ‘‘বাঁদনা চলছে তাই ফয়সালা করতে সময় নিয়েছিলাম। তবে পুলিশে যখন অভিযোগ হয়েছে যখন তখন আইনমাফিক যা হবার হবে।’’ ধৃতদের এ দিন বহরমপুরের একটি হোমে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আগামী ২৭ তারিখ তাদের ফের হাজির করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশ হেফাজতে নেওয়া ওই ছয় নাবালকদের বয়স ১১ থেকে ১৭ বছর। তাদের মধ্যে একজন ১১ বছরের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া এক কিশোর আছে। একজন স্থানীয় একটি হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আছে। একজন স্থানীয় একটি হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। বাকীদের একজন চতুর্থ শ্রেণির পরে আর পড়াশোনা করেনি। বাকিরা অষ্টম শ্রেণি পাশ। এই বয়সেই এমন অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার কথা জানাজানি হয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।

অল্পবয়সীদের মধ্যে মোবাইলের কুপ্রভাবের কথা এই প্রসঙ্গে মনে করাচ্ছেন কেউ কেউ। গ্রামের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুরেন্দ্র সোরেন বলেন, ‘‘অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের কাছে মোবাইল এখন সহজলভ্য বিষয়। বর্তমানে স্কুল বন্ধ থাকার জন্য মোবাইল নিয়ে বেশি সময় কাটাচ্ছে ছেলেমেয়েরা। এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crime against Women sexual assault gangrape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy