Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Water Reservoir

সারেঙ্গায় ধূলিসাৎ জলের রিজ়ার্ভার

ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও তৈরির চার বছরের মধ্যে ট্যাঙ্কটি ভেঙে পড়ায় কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

বাঁকুড়ার সারেঙ্গার ফতেডাঙা গ্রামে বুধবার বিকেলে এ ভাবেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল প্রায় সাত লক্ষ লিটারের জলাধার।   নিজস্ব চিত্র

বাঁকুড়ার সারেঙ্গার ফতেডাঙা গ্রামে বুধবার বিকেলে এ ভাবেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল প্রায় সাত লক্ষ লিটারের জলাধার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
 সারেঙ্গা ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২০ ০২:০২
Share: Save:

মাঠের মধ্যে ওভারহেড জলের ট্যাঙ্কে (রিজ়ার্ভার) ফাটল দেখে চমকে উঠেছিলেন স্থানীয়েরা। কিছু পরেই ট্যাঙ্ক থেকে গুড়গুড় শব্দ শুনে আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল ট্যাঙ্ক। কংক্রিটের টুকরো থেকে ওড়া ধোঁয়া আর ট্যাঙ্কে মজুত থাকা জল ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ে আশপাশের জমিতে। বুধবার বিকেলে এমন ঘটনায় হতভম্ব বাঁকুড়ার সারেঙ্গার ফতেডাঙা গ্রামের বাসিন্দারা।

ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও তৈরির চার বছরের মধ্যে ট্যাঙ্কটি ভেঙে পড়ায় কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। বিরোধীরা এ জন্য শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে ফের ‘কাটমানি’র অভিযোগ তুলেছেন। যদিও অভিযোগ মানেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়ার পরে, আমি দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে তদন্ত কমিটি গড়তে বলেছি। তদন্ত রিপোর্টে যে দোষী প্রমাণিত হবে, তাকে শাস্তি পেতে হবে। ওই এলাকায় জল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়েছে।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, তিন সদস্যের ওই তদন্ত কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০১৬ সালে নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল প্রকল্পে ‘বিআরজিএফ’ তহবিল থেকে ওই ট্যাঙ্কটি তৈরি করা হয়। জলধারণ ক্ষমতা ছিল সাত লক্ষ লিটার। কংসাবতী নদী থেকে জল তুলে কয়েকটি গ্রামে সরবরাহ করা হত। যে ঠিকা সংস্থা ট্যাঙ্কটি তৈরি করেছে, তাদের হাতেই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রয়েছে।

২০১৭ সালের ১৫ মার্চ কুসুমটিকরি গ্রামের মাঠে সারেঙ্গা ও সিমলাপাল ব্লক এলাকায় পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন রাজ্যের তৎকালীন জনস্বাস্থ্য কারিগরি ও পঞ্চায়েত দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এলাকার বাসিন্দা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাবলু মুর্মু, সুভাষ হেমব্রম বলেন, ‘‘এ দিন পৌনে ৩টে নাগাদ ট্যাঙ্কের গায়ে ফাটল দেখা যায়। তার পরেই ট্যাঙ্ক থেকে গুড়গুড় শব্দ হচ্ছে শুনে সবাই দূরে সরে যাই। বিকেল ৩টে নাগাদ ট্যাঙ্কটা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল। চোখের সামনে এমন কাণ্ড ভাবা যায় না!’’

বিজেপির বাঁকুড়া কেন্দ্রের সাংসদ সুভাষ সরকারের অভিযোগ, ‘‘রাজ্যের শাসকদলের কাটমানি খাওয়া ও সিন্ডিকেট রাজের জন্যই এই হাল। সারেঙ্গার কাটমানির টাকা কোথায় গিয়েছে, তার যথাযথ তদন্ত হোক।’’

জেলার বাসিন্দা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা অমিয় পাত্রের অভিযোগ, ‘‘এ রাজ্যে উন্নয়ন ও অনুপ্রেরণার মতোই কাটমানির কথাও শাসক দলের নেতাদের মুখে শোনা যায়। নেতারা কাটমানি নিলে আর কেমন মানের কাজ হবে?’’

যদিও তৃণমূলের জেলা নেতা তথা জেলা পরিষদের মেন্টর অরূপ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘বামফ্রন্ট সরকার লোককে জলই দিতে পারেনি। বিরোধীরা সবেতেই কাটমানির ভূত দেখছেন।’’

জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বাঁকুড়ার সুপারিন্টেডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সুজয় বারুই বলেন, ‘‘কী ভাবে রিজারর্ভারটি ভেঙে পড়ল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। নির্মাণ কাজে কোনও ত্রুটি ধরা পড়লে, আমরা ঠিকা সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। ওদের রক্ষণাবেক্ষণের মেয়াদের মধ্যেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। ফলে, ওদেরই ফের রিজ়ার্ভারটি তৈরি করতে হবে।’’ চেষ্টা করেও এ দিন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

রিজ়ার্ভার ভেঙে পড়ার পরে জল সরবরাহ কী করে হবে, তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে গড়গড়িয়া ও বিক্রমপুর পঞ্চায়েতের ১৫-১৬ টি গ্রামে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সুমন প্রামাণিকের আশ্বাস, ‘‘জল সরবরাহ বন্ধ থাকছে না। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে গ্রামে-গ্রামে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Water Reservoir Sarenga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy