Advertisement
২৩ জানুয়ারি ২০২৫

বধূ খুনে ধৃত সতিন-সহ ৩

নিহত মামণি মণ্ডল (৩২) রাধাবাজারের বাসিন্দা। তাঁর স্বামী উত্তম মণ্ডল পেশায় ট্রাকচালক। ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে উত্তমের প্রথম পক্ষের স্ত্রী মিঠু মণ্ডল, বড় ছেলে অজয় মণ্ডল ও মিঠুর এক আত্মীয় গোবিন্দ মণ্ডলকে। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া আদালতে ধৃতদের চার দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়।

ঘটনাস্থল: এখানেই পড়ে ছিল মামণিদেবীর দেহ। ইনসেটে ধৃত উত্তম মণ্ডলের প্রথম পক্ষের স্ত্রী মিঠু মণ্ডল। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

ঘটনাস্থল: এখানেই পড়ে ছিল মামণিদেবীর দেহ। ইনসেটে ধৃত উত্তম মণ্ডলের প্রথম পক্ষের স্ত্রী মিঠু মণ্ডল। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৫৪
Share: Save:

ঘরে ঢুকে সতিনকে খুন করার অভিযোগ উঠল এক ট্রাক চালকের প্রথম পক্ষের স্ত্রী, ছেলে ও এক আত্মীয়ের বিরুদ্ধে। বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের রাধাবাজারে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত মামণি মণ্ডল (৩২) রাধাবাজারের বাসিন্দা। তাঁর স্বামী উত্তম মণ্ডল পেশায় ট্রাকচালক। ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে উত্তমের প্রথম পক্ষের স্ত্রী মিঠু মণ্ডল, বড় ছেলে অজয় মণ্ডল ও মিঠুর এক আত্মীয় গোবিন্দ মণ্ডলকে। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া আদালতে ধৃতদের চার দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর বেয়াল্লিশের উত্তম গঙ্গাজলঘাটির পাবড়াডিহির বাসিন্দা। সেখানেই তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রী মিঠুর বাড়ি। বছর একুশ আগে মিঠুর সঙ্গে উত্তমের বিয়ে হয়। তাঁদের দুই সন্তানও রয়েছে। পরে মিঠুর আত্মীয় মামণির সঙ্গে উত্তমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বছর সাতেক আগে মামনিকে নিয়ে চলে যান উত্তম। পরে তাঁরা বিয়ে করে, বেলিয়াতোড়ের রাধাবাজারের একটি ভাড়া ঘরে ওঠেন। সম্প্রতি উত্তমের প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে ফের যোগাযোগ গড়ে ওঠে। মাসখানেক আগেই উত্তম তাঁর বড় ছেলে কুড়ি বছরের যুবক অজয়কে বেলিয়াতোড়ে নিয়ে আসেন। তদন্তকারীদের দাবি, বড় ছেলেকে নিয়ে আসাই কাল হয়। পরিকল্পনামাফিকই মামণিকে খুন করা হয়েছে বলে ধৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশের দাবি।

কী ভাবে খুন হলেন মামণি? পুলিশ সূত্রে খবর, উত্তম পেশায় ট্রাকচালক হওয়ায় প্রায়ই তাকে বাইরে থাকতে হয়। ঘটনার দিনও তিনি জেলার বাইরে ছিলেন। অজয় সে কথা জানতে পেরেই মিঠুকে খবর দেন। মিঠু তাঁর আত্মীয় গোবিন্দকে নিয়ে বুধবার বিকেলে বেলিয়াতোড়ে এসে পৌঁছন। পড়শিদের একাংশের দাবি, ঘটনার দিন সন্ধ্যা থেকেই ওই বাড়ি থেকে ঝগড়াঝাটির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। এক সময়ে পরিস্থিতি চরমে ওঠে। এর পরেই পড়শিরা জড়ো হয়ে বাড়ির সদর দরজা খোলার চেষ্টা করেন। তখনই খবর আসে, বাড়ির পিছনের পাঁচিল টপকে গোবিন্দ চম্পট দেওয়ার চেষ্টা করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে ধরে ফেলেন। দরজা খুলে পড়শিরা ভিতরে ঢুকে দেখেন, বাড়ির পিছনের দিকে একটি কাগজি লেবুর গাছের তলায় পড়ে রয়েছেন মামনি। তাঁর গলায় কালশিটে রয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয়। উত্তেজিত জনতা মিঠু, গোবিন্দ ও অজয়ের উপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। রাতে স্থানীয় এক ব্যক্তির দায়ের করা খুনের অভিযোগের ভিত্তিতেই তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়।

উত্তম রাধাবাজারের যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সেই বাড়ির বৃদ্ধা মালকিন অণিমা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বছরখানেক আগে উত্তম মামনিকে নিয়ে তাঁর বাড়িতে ওঠেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তেমন কোনও ঝামেলা তাঁর নজরে পড়েনি। মাঝেমাঝেই ওই দম্পতির আত্মীয়েরা বাড়িতে আসতেন। অণিমাদেবী বলেন, “আমি সন্ধ্যায় বাড়ির ভিতরে টিভি দেখছিলাম। বাইরে এত কিছু কখন ঘটে গিয়েছে, কিছুই বুঝতে পারিনি। পরে পুলিশ এসে সব জানাল।” বৃহস্পতিবার উত্তমের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। আদালত চত্বরে মিঠু দাবি করে, “মামণি আমাকে ফোন করে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছিল। তাই সন্ধ্যায় ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম। বাড়িতে ঢুকতেই আমাদের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে। আমাদের মারধরও করছিল। এতেই মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল।’’

প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান গলায় কোনও কিছুর ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে মামণিকে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “খুনের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Crime murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy