চেক বিলির সরকারি অনুষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানে জেলা সভাধিপতি উপস্থিত থাকলেও, অনুপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি-সহ তৃণমূলের অন্য সদস্যরা। রবিবার এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে।
কমিউনিটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যেখানে সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো নিজের হাতে আদিবাসী মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির হাতে চেক তুলে দিলেন, সেখানে তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৃষ্ণ মাহাতো-সহ বেশিরভাগ সদস্য অনুপস্থিত। কেন? এর জন্য অনেকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই দায়ী করেছেন। শাসকদলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে এড়িয়ে এই অনুষ্ঠান হওয়াতে ব্লকের দলের নেতাদের একাংশের চাপে সভাপতি-সহ বেশিরভাগ সদস্য অনুষ্ঠানে যাননি বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। তবে কৃষ্ণবাবুর দাবি, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি রবিবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি এবং বিষয়টি তিনি সৃষ্টিধরবাবুকে জানিয়েছিলেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের একটি প্রকল্পের আওতায় জেলার প্রায় ২৫০টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ছাগল প্রতিপালনের জন্য আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি গোষ্ঠী ১ লক্ষ টাকা অনুদান হিসেবে পাবে। রবিবার ওই প্রকল্পে সাহায্য পাওয়া ১৯টি গোষ্ঠীর সদস্যদের হাতে চেক তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠানটি ছিল রঘুনাথপুরে। প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রের খবর, দিন দশেক আগে ব্লক প্রশাসনের কাছে ওই চেকগুলি এসেছিল। প্রথমে গত ১৬ অক্টোবর চেকগুলি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ উঠছে, শাসকদলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতাদের চাপে চেক বিলির ওই অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়েছিল। পঞ্চায়েত সমিতির নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ কনিকা চক্রবর্তীর অভিযোগ, “এলাকার আদিবাসী মহিলাদের নিয়ে গঠিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ছাগল প্রতিপালন করার জন্য আর্থিক সাহায্য দেওয়ার চেক ব্লকে এসেছে। খবর পাওয়ার পরেই চেক বিলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দলেরই কিছু নেতার বাধাতে সেই কর্মসূচি স্থগিত কারতে বাধ্য হয়েছিলাম। কী পরিস্থিতিতে এবং কেন এই কর্মসূচি বাতিল করতে হয়েছিল সব বিষয় জানিয়েছিলাম জেলা সভাধিপতিকে।” ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “স্বনির্ভরগোষ্ঠীগুলিকে চেক দেওয়ার কর্মসূচি নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির অভ্যন্তরে জটিলতা তৈরি হওয়ায় চেকগুলি জেলায় পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকেই উপভোক্তাদের চেক দেওয়া হবে। কিন্তু সম্প্রতি সভাধিপতি জানিয়েছিলেন, তিনি পঞ্চায়েত সমিতিতে এসে ওই চেক বিলি করবেন। সেই মতো সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।”
তবে সরকারি অনুষ্ঠানেই শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের একাংশ গরহাজির থাকার বিষয়টিকে দৃষ্টিকটূ বলে মন্তব্য করছেন তৃণমূলেরই একাংশ। জেলা পরিষদের কিছু সদস্যের কথায়, “সভাধিপতি যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন, সেখানে আমাদের দলেরই পঞ্চায়েত সমিতির বেশিরভাগ সদস্য অনুপস্থিত। বিষয়টি যথেষ্ট দৃষ্টিকটূ। আসলে আমাদের দলের কিছু নেতা সরকারি অনুষ্ঠানকে দলের কর্মসূচি বলে মনে করছেন। তাই রবিবারের অনুষ্ঠানে তাঁর অনুগামীদের অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে রীতিমতো নির্দেশ জারি করা হয়েছিল।” তবে গরহাজির কিছু সদস্যর দাবি, যে ভাবে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের এড়িয়ে উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে অনেকেই মন থেকে সায় পায়নি। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা আদৌও বাঞ্ছনীয় নয় বলেই মনে করছেন সৃষ্টিধরবাবু। তিনি বলেন, “যাঁরা আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন তাঁরা ওই এলাকারই বাসিন্দা। কেউ অন্য রাজ্য বা জেলা থেকে আসেননি। আসলে সব দলেই কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ থাকে এবং যাঁরা উন্নয়নের অন্তরায়, তাঁরা আর যাই হোন তৃণমূলের শুভানুধ্যায়ী নন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy