—নিজস্ব চিত্র
বাংলায় তুলনায় কম পূজিত হন দেবী দুর্গার পুত্র কার্তিক। তারই মধ্যে কোথাও কোথাও আবার এই কার্তিক পুজোকে ঘিরেই উন্মাদনতা তুঙ্গে ওঠে। এই জেলায় এমনই একটি গ্রাম লাভপুরের লায়েকপুর। দু’দিন ধরে কার্তিক পুজোই একজোট করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের এই গ্রামকে। কার্তিক পুজোকে ঘিরে লায়েকপুর এলাকায় যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রদায়ের ছবি তুলে ধরে, তার তাত্পর্য ভিন্ন।
লাভপুর-সাঁইথিয়া রাস্তার অমৃতবাঁধ মোড় থেকে ডান দিকের পিচ রাস্তা ধরে যাওয়ার পথে পড়বে বহু প্রাচীন গ্রাম লায়েকপুর। এই গ্রামেরই আচার্য পরিবারের কার্তিক পুজো এখন গোটা গ্রামের পুজোয় পরিণত হয়েছে। এই পুজোকে ঘিরেই গ্রাম ও আশপাশের এলাকার মানুষের আনন্দের সীমা নেই। কবে কার পুজো, কে-ই বা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তা-ও সঠিক ভাবে কেউ জানেন না। কিন্তু তাতে ক্ষতি কি! উত্সবে সামিল বাসিন্দারা তা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামাতে রাজি নন। আচার্য পরিবারের প্রবীণ সদস্য তথা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক ৯৫ বছরের কালীপদ আচার্য বলেন, “পুজোর সঠিক বয়স কত বা ক’শো বছরের প্রাচীন, তা সঠিক করে বলতে পারব না। কবেকার পুজো এ নিয়ে ছোটবেলা থেকে আমাদের কৌতূহলের শেষ ছিল না। আমরা বড়দের কাছে জানতে চাইতাম, এ নিয়ে। কিন্তু তাঁদের কাছেও উত্তর অজানা ছিল।” কালীপদবাবুর বাবা ছেলেকে বলচেন, “আমাদের বাপ-ঠাকুর্দারাও পুজোর ইতিহাস নিয়ে কিছু জানতেন না!” তবে, কালীপদবাবুর অনুমান, আনুমানিক ৪০০ বছর বা তার কিছু বেশি প্রাচীন এই পুজো। তাঁর বড় ছেলে অজয়বাবু বলেন, “পুজো যত দিনের হোক না কেন,পূর্ব পুরুষের প্রতিষ্ঠিত এই কার্তিক পুজো বর্তমানে গ্রাম্য দেবতার মর্যাদা পেয়েছে।”
নানা সম্প্রদায়ের বসবাস এই গ্রামে। সে দিক থেকে গ্রামের এই পুজোকে গ্রামের পূর্বপাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা জগন্নাথ পাল, নিতাই পাল, বাগদি পাড়ার মাধব বাগদি, কার্তিক বাগদিরা ‘সম্প্রীতির উত্সব’ বলেই মনে করেন। পাশের গ্রাম লাঘোষার শেখ খালেক আবার বলছেন, “আমরা সবাই কার্তিক পুজো দেখতে যাই। প্রসাদ নিই, পুজোর শেষে রাতে খিচুড়ির ভোগ খাই। সে এক অন্য রকমের আনন্দ!” এমনকী, গ্রামের এই পুজোর জন্যই দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়-স্বজনেরাও চলে আসেন। আচার্য পরিবারের সদস্য অশোকবাবু এবং অম্বিকাদেবীরা জানান, সারা রাত চার প্রহর ধরে পুজো ও হোম যজ্ঞ হয়। পুজো শেষে প্রসাদ ও পাত পেড়ে খিচুড়ির ভোগ খাওয়ানো হয়। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই ওই ভোগ খান।
জানা গিয়েছে, বহু আগে গাছের ডালপাতা দিয়ে ছাউনি ও এলাকা ঘিরে পুজো হতো। তার পরে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গাছের ডালপাতার বদলে প্যান্ডেল তৈরি করে পুজো শুরু হয়। কিন্তু এ বারই প্রথম স্থায়ী মন্দিরে ওই কার্তিক পুজো হবে। গ্রামের প্রবীণদের কথায়, “জীবদ্দশায় স্থায়ী মন্দিরে আমাদের এই কার্তিক পুজো দেখে যেতে পারছি, এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে!” আচার্য পরিবারের নতুন প্রজন্ম যুবক ইন্দ্রনীল, অনিন্দ্য, শুভনীল, অয়নরা বলেন, “এটা আমাদের পারিবারিক পুজো। কিন্তু গ্রামের সকলেই পুজোয় যোগ দেন। দেবত্বের সম্পত্তি বিক্রি করে ব্যাঙ্কে টাকা রাখা হয়েছে। ওই সুদ থেকেই পুজোর আয়োজন করা হয়ে থাকে। ঘাটতি হলে পরিবারের সকলে মিলে পূরণ করা হয়। এ বছর নতুন মন্দির তৈরি হয়েছে। তাতে গ্রামের অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।”
রবিবার নতুন মন্দিরের অভিষেক হয়েছে। আজ, সোমবার সেখানেই হবে কার্তিক পুজো। তার আগে তর সইছে না সৌম্যনীল, শাশ্বতী আর রাণুদের মতো কচিকাঁচাদের!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy