Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

লোকসান জেনেও তাঁত বোনেন প্রশান্তরা

বছর দশেক আগেও তাঁত যন্ত্রের মাখু টানার খট খট শব্দে সকাল থেকে সন্ধ্যা মুখরিত থাকত ময়ূরেশ্বরের তাঁতিপাড়া। কিন্তু সেই শব্দই এখন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে বসেছে। বাপ, ঠাকুরদা’র পেশা ছেড়ে অন্য জীবিকা খুঁজে নিতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁতিরা।

চলছে তাঁত বোনা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

চলছে তাঁত বোনা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৪৯
Share: Save:

বছর দশেক আগেও তাঁত যন্ত্রের মাখু টানার খট খট শব্দে সকাল থেকে সন্ধ্যা মুখরিত থাকত ময়ূরেশ্বরের তাঁতিপাড়া। কিন্তু সেই শব্দই এখন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে বসেছে। বাপ, ঠাকুরদা’র পেশা ছেড়ে অন্য জীবিকা খুঁজে নিতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁতিরা। সরকারি সহযোগিতার অভাবেই তাঁদের পুরুষানুক্রমিক পেশা থেকে ছিটকে যেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।

প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়ূরেশ্বরের তাঁতিপাড়ায় এক সময়ে ২৫-৩০টি তন্তুবায় পরিবারের বাস ছিল। তাঁতের শাড়ি গামছা তৈরি করেই তারা, নিজেদের জীবিকা অর্জনের পাশাপাশি কিছুটা হলেও, আর্থিক স্বাছল্যের মুখ দেখতে পেতেন। কিন্তু বর্তমানে মাত্র তিনটি পরিবার, ওই পেশায় টিকে থাকতে পেরেছেন। বাকিদের ঘরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে তাঁত যন্ত্র।

প্রায় তিনপুরুষ থেকে তাঁত বোনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তপন দাস, দিবাকর দাসরা। বর্তমান তপন দাস নিজের সামান্য জমিতে চাষের পাশাপাশি দিন মজুরও করেন। হাতুড়ে ডাক্তারিও করেন দিবাকরবাবু। তাঁরা বলেন, “একসময়ে তন্তুজ-তন্তুশ্রী প্রভৃতি সংস্থা আমাদের উত্‌পাদিত সামগ্রী নিত। সেখান থেকে সুতো এবং নগদ টাকাও মিলত। কিন্তু এখন সেই সুযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ। তাই মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে শাড়ি, গামছা তৈরি করতে হয়। তাতে লাভ হয় না। তাই আমরা ভিন্ন পেশা নিতে বাধ্য হয়েছি।”

ওই কাজের সঙ্গে এখন জড়িত রয়েছেন প্রশান্ত দাস। তিনি বলেন, “মহাজন শাড়ি বোনার জন্য ৭০০ গ্রাম তানা/ ভরনা (সুত) দেয়। ছেঁড়া, ফাটার জন্য ২৫ গ্রাম বাদ দিয়ে ফের সমপরিমাণ ওজনের শাড়ি বুঝে নেয়। তবেই, মজুরি বাবদ চারশো টাকা মেলে।” ঘটনা হল, একটি শাড়ি বুনতেই লেগে যায় দু’দিন। তবুও এই কাজ করেন প্রশান্তবাবু। কেন? সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “বাপ-ঠাকুর দা’র পেশা। ছাড়তেও পারি না। আবার পেটও ভরে না।”

প্রশান্তবাবুর অভিযোগ, ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ঋণ দানের নানা প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু তার নাগাল সকলে পায় না। সরকারি ঋণ পেলে এবং বিপণনের ব্যাবস্থা হলে বাকিরা তাঁদের নিজের পেশায় টিকে থাকতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট ময়ুরেশ্বরের প্রধান ফুলমনি মাড্ডি বলেন, “ওই তাঁতিদের বিষয়ে জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।” ময়ুরেশ্বর দু’নম্বর ব্লকের বিডিও সৈয়েদ মাসুদুর রহমান বলেন, “তাঁতিরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তাঁদের ভর্তুকি যুক্ত ঋণের ব্যবস্থার পাশাপাশি বিপণনের জন্য কি করা যায় দেখব।”

অন্য বিষয়গুলি:

mayureswar weavers loss
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE