প্রবাসী-র সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের জন্মভিটে ঘুরে দেখলেন রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের প্রতিনিধিরা।—নিজস্ব চিত্র।
রবীন্দ্রনাথে ঘনিষ্ঠ ও সাংবাদিকতার জগতের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের বসতবাটি ও জন্মভিটে পরিদর্শন করে গেলেন রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের প্রতিনিধিরা। সম্প্রতি বাঁকুড়া পুরসভার তরফে রামানন্দের স্মৃতি বিজড়িত স্কুলডাঙার বাড়ি ও পাঠকপাড়ার জন্মভিটেকে ‘হেরিটেজ’ তকমা দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয় কমিশনে। প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবার বাঁকুড়ায় আসেন রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপকুমার সিংহ ও অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি বাসুদেব মালিক।
বাঁকুড়া শহরের পাঠকপাড়ায় ১৮৬৫ সালে জন্মান রামানন্দ। ছাত্রজীবনেই সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হয় তাঁর। কলকাতায় এমএ পড়ার সময় ব্রাম্ভ্রসমাজের মুখপত্র ‘ইন্ডিয়ান ম্যাসেঞ্জার’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক ছিলেন তিনি। কলকাতার সিটি কলেজের ইংরেজি বিষয়ে তিনি অধ্যাপনা করতেন। পরবর্তীকালে এলাহাবাদ কায়স্থ কলেজের অধ্যক্ষও হন। সেখান থেকে তিনি একটি ইংরেজি (মর্ডান রিভিউ) ও বাংলা মাসিক পত্রিকা (প্রবাসী) সম্পাদনা করতে শুরু করেন। প্রবাসীর সূত্রে তাঁর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠতা। রামানন্দের ডাকে বাঁকুড়া শহরেও আসেন রবীন্দ্রনাথ। মহাত্মা গাঁধীর সঙ্গেও রামানন্দের ভালো সম্পর্ক ছিল। জীবনের শেষ দিকে তিনি বাঁকুড়ার স্কুলডাঙার বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। বাঁকুড়ায় থাকাকালীনও তিনি ‘প্রবাসী’র বেশ কিছু সংখ্যা সম্পাদনা করেছেন। অসুস্থতার জন্য চিকিত্সার করাতে ১৯৪৩ সালে তিনি কলকাতায় যান। সেখানেই মারা যান।
এ দিন রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের প্রতিনিধি দল প্রথমে শহরের স্কুলডাঙা এলাকায় রামানন্দের বসতবাড়িতে যান। যদিও সেখানে বসতবাড়ির চিহ্ন মাত্র নেই। বছর দশেক আগে রামানন্দের বসতবাড়ির উপরে চোখ পড়েছিল প্রমোটারদের। জায়গাটি কিনে সেখানে রামানন্দের বাড়ি ভেঙে পাঁচিল দিয়ে জায়গাটি ঘিরে ফেলে প্রমোটাররা। এই ঘটনার প্রতিবাদের সোচ্চার হন বাঁকুড়াবাসী। তাঁরা আইনি পদক্ষেপ করায় আপাতত সেখানে নতুন নির্মাণ কাজ স্থগিত রয়েছে। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের প্রতিনিধিরা জায়গাটি পরিদর্শন করেন। এরপর তাঁরা যান পাঠক পাড়ায় রামানন্দের জন্মভিটেতে। সেখানে এখনও রামানন্দের পরিবারের উত্তরসূরীরা বসবাস করছেন। শতাব্দী প্রাচীন এই বাড়িটি ঘুরে দেখে প্রতিনিধি দল। প্রদীপবাবু, বাসুদেববাবুরা বলেন, “রামানন্দের বসতবাড়িটির কোনও অস্তিত্বই আর নেই। কিন্তু জায়গাটিকেও ঘিরে দিয়ে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করার ব্যাপারে কমিশনে আমরা জানাব। এ ছাড়া তাঁর পরিবারের লোকজন আগ্রহী হলে জন্মভিটেটিও ঐতিহ্যবাহী ভবনের স্বীকৃতি পেতে পারে।”
রামানন্দের জন্মভিটেতে বসবাসকারী সম্পর্কে নাতি অমিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই বাড়িটি শরিকি সম্পত্তির। কাজেই সবাই হেরিটেজ ঘোষণার ব্যাপারে সহমত হলে আমরা সম্মতি জানাব।” বাঁকুড়ার পুরপ্রধান শম্পা দরিপা বলেন, “পুরসভার সার্ধ শতবর্ষ চলছে। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় আমাদের জেলার গর্ব। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত জায়গাগুলি হেরিটেজ ঘোষণার প্রস্তাব পাঠাই।”
বাঁকুড়ার সাংস্কৃতিক জগতের অন্যতম ব্যক্তিত্ব তথা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপা বলেন, “রামানন্দের বসতবাড়িটি অনেক আগেই হেরিটেজ কমিশনের নজরে আসা উচিত ছিল। কিন্তু না আসায় সেই বাড়ির অস্তিত্বই আজ নেই। তবে পরে হলেও রামানন্দের বসতবাড়ি ও জন্মভিটে ঐতিহ্যবাহী ভবনের স্বীকৃতি পেলে আপামর বাঁকুড়াবাসীর লাভ।” শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “শুধু ঐতিহ্যবাহী তকমা দিলেই কাজ শেষ নয়, আগামী প্রজন্মের কাছে রামানন্দকে তুলে ধরতে শহরে রামানন্দ চর্চা কেন্দ্র খোলা উচিত।” কমিশনের প্রতিনিধিরা পাঠকপাড়ায় দু’টি প্রাচীন মন্দির ও ইতিমধ্যেই ঐতিহ্যবাহী ভবন হিসেবে তকমা পাওয়া এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হলও পরিদর্শন করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy